নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট | 177 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
নিউইয়র্কে হোম কেয়ার ব্যবসা নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। শুরু হয়েছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। পানের দোকানদার, ডেলিভারিম্যান, ট্যাক্সি ড্রাইভার ও হোমলেসরাও এই ব্যবসায় নেমে পড়েছেন। একটি জনপ্রিয় পত্রিকার সম্পাদক গেল বছর প্রতিবেদকের সাথে দুঃখ করে বলছিলেন, কেন যে হোম কেয়ার খুলে বসলাম না। পত্রিকা চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। সাংবাদিকের সংকট। বিজ্ঞাপনদাতাদের তোষামোদ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। এখনতো অনেক দেরি হয়ে গেছে। নইলে হোম কেয়ার চালু করে ফেলতাম।
হোম কেয়ার ব্যবসা শুরুতে কোন অভিজ্ঞতার দরকার নেই। স্বাস্থ্য সেবার ওপর প্রশিক্ষন নেই। লাইসেন্স দরকার নেই। যাদের লাইসেন্স আছে তাদের সাথে কাজ করলেই চলবে। রোগী দিলেই সব। যাকে বলে ব্রোকার। ভাইবোন, আত্মীয়, বন্ধুবান্ধবদের বাবা মা কিংবা শ্বশুড়শ্বাশুড়ি দিয়েই যাত্রা শুরু করা যায়। লাইসেন্সবিহীন একজন হোমকেয়ার ব্যবসায়ী প্রতিবেদককে বলেন, কোন না কোনভাবে ১০টা রোগী জোগাড় করতে পারলেই আর কিছু করতে হবে না। প্রতিটি রোগীর বিপরীতে প্রতি সপ্তাহে যা কমিশন পাওয়া যায় তা অন্য কোন জব বা ব্যবসায় আয় করা যায় না। এতে কোন অফিস দরকার নেই। কোন হেডেক নেই। সব কাজ করেন লাইসেন্সধারী হোম কেয়ার ব্যবসায়ীরা। আমরা বিনা পূঁজিতে আয় করছি। এতে অবশ্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়। একজন মেডিকেইড রোগী যোগাড় করতে মাসের পর মাস তার পেছনে লেগে থাকতে হয়। তাকে কনভিন্স করতে হয়। ‘আমাদের হোম কেয়ারে’ আসলে বেশি সুবিধা পাবার নিশ্চয়তা দিতে হয়। আশ্বাস দিতে হয়, বাড়ি বা এপার্টমেন্টের ব্যবস্থা করে দেব। তবে এটা অনস্বীকার্য, কমিউনিটির সিনিয়র সিটিজেনদের সেবা প্রদান করে আমরা অর্থ উর্পাজন করছি। কাউকে প্রতারিত করছি না। সার্বক্ষনিকভাবে রোগীদের খোঁজখবর নিচ্ছি। ডাক্তারদের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। ভালো সেবা না পেলেতো তারা অন্যজনের সাথে চলে যাবে। তবে দুঃখ লাগে, এই রোগী নিয়ে আমাদের অনেকে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদাগার ও মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে রোগী ভাগানোর লড়াই শুরু হয়েছে। কমিউনিটির রোগীর সংখ্যা সীমিত। কিন্তু মোড়ে মোড়ে পানের দোকানদারদের মতো হোম কেয়ার ব্রোকার গজিয়ে উঠেছে। এতে মহান পেশা ও ব্যবসাটির ইমেজ নষ্ট হচ্ছে। অন্য একজন হোম কেয়ার ব্রোকার বলেন, টেলিফোন ও ট্রাভেল ব্যবসায় একসময় বাংলাদেশিরা ভালো করছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে দেখা গেল সবাই এ ব্যবসায় নেমে পড়েছে। পানের দোকানদারও ট্রাভেল টিকেট ও সেলফোন ব্যবসা শুরু করেছেন ।
হোম কেয়ার ব্যবসার সাথে জড়িত অনেকই এ নিয়ে বিব্রত। তারা স্বাস্থ্য সেবার মান ও কমিটমেন্ট রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছেন। স্টাফ ,অফিস খরচ ও স্টেটের বিধিনিষেধ মেনে প্রতিষ্ঠান চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। অসুস্থ প্রতিযোগিতাও এর জন্য দায়ি।
কমিউনিটিতে সবচেয়ে নেতিবাচক একটি ট্রেন্ড চালু হয়েছে সম্প্রতি। হোম কেয়ার ব্যবসায় উঠতি কতিপয় ব্যক্তির হাতে কাঁচা পয়সা এসে পড়ায় তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। আইডেন্টটি ক্রাইসিস থেকে শো আপ নৃত্যে নেমে পড়েছেন। ৪ বা ৫ শত ডলার দিয়ে স্থানীয় টেলিভিশনগুলোর কথিত ‘টক শো’তে অংশ নিচ্ছেন। কমিউনিটি ও জাতিকে পরামর্শ দিচ্ছেন। অথচ নিজের হীন কর্মকান্ডের খতিয়ানের পাতাগুলো উল্টিয়ে দেখছেন না। ডলারের জোরে নিজের অপকর্মগুলো ঢাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ‘সাজার চেষ্টা করছেন বড় মুরগীর’। কমিউনিটির একজন প্রবীন সাংবাদিক খেদ নিয়ে বলছিলেন, গত ২০ বছরে কত মুরগী এলো আর গেলো। আর কত দেখবো। দিল দরিয়া থেকে পাগলাগাড়দের বাসিন্দাদের মতো আচরন করছেন অনেকে। কয়েকদিন আগে কমিউনিটিতে একটি গুঞ্জন ছিল। জামাইকা বেজড একটি হোম কেয়ারের লাইসেন্স স্থগিত হয়েছে। আর কি অস্থিরতা! চোঙ্গা হাতে নেমে পড়লেন রাস্তায়। হৈহৈ রৈরৈ ব্যাপার। আমার জন্মদিন। আমি মুরগী হয়ে আসছি। আসুন সবাই দলে দলে। জামাইকা টু জ্যাকসন হাইটস তিনি টিনের ঠোঙ্গা হাতে চিৎকার শুরু করলেন। অবশ্য লাইসেন্স স্থগিতের সত্যতা এখনও মেলেনি। । নিউইয়র্কের এক তরুন সাংবাদিকের ভাষায় বলতেই হয়, ‘হোম কেয়ার ব্যবসার কিছু মালিকের রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে।’
Posted ৩:১১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
nykagoj.com | Monwarul Islam