বুধবার ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাদর, তালা ও চুরির গল্প

ডেস্ক রিপোর্ট   |   মঙ্গলবার, ০৮ নভেম্বর ২০২২   |   প্রিন্ট   |   322 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

চাদর, তালা ও চুরির গল্প

দু’জন মানুষ একটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে চাদরের দুই প্রান্ত ধরে ঝুলিয়ে রেখেছে। এর আড়ালে বসে একজন হাইড্রোলিক কাটার দিয়ে কাটছে সাটার ও কলাপসিবল গেটের তালা। মুহূর্তেই কাজ সেরে বন্ধ দোকানটির ভেতরে ঢোকে একজন। দ্রুত ভেতর থেকে টাকা-স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে আসে। তখন দোকানে নতুন তালা লাগিয়ে কাটা তালার টুকরো ব্যাগে ভরে সবাই ফিরে যায়। ফলে হঠাৎ করে দেখে কারও সন্দেহই হবে না যে দোকানে চুরি হয়েছে।

এমন চমকপ্রদ কৌশলে চুরি করে আসছিল বাবুর দল। তার দলে অন্তত ১১ সদস্য রয়েছে, যাদের বেশিরভাগই ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে চুরিতে জড়িত। চুরি তাদের মূল পেশা হলেও নিজেদের সন্দেহের বাইরে রাখতে তারা কেউ রিকশা চালায়, কেউ পুরনো কাপড় ফেরি করে, কেউ আবার দোকানে কাজ করে। তাদের মধ্যে ইসহাক ওরফে সাগর নামে একজন নতুন সদস্য ইজিবাইক চালানোর পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করে। সম্প্রতি ইসহাক ও দলনেতাসহ এ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, চক্রের সদস্যরা দুই মাস আগে ঢাকার মাতুয়াইল ও ডেমরার কোনাপাড়া এলাকায় দু’টি বাসা ভাড়া নেয়। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তারকৃত বাবু, আলমগীর হোসেন মালু ও রুবেলসহ তিনজন মাতুয়াইল এবং ইসহাকসহ অপর ছয়জন কোনাপাড়ার বাসায় ওঠে। চুরিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি থাকত কোনাপাড়ার বাসায়। বাবু চুরির ‘অপারেশনের প্ল্যান’ করে সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। গ্রুপের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করত ‘ইমো’ অ্যাপ। তারা এ পর্যন্ত ৪০-৫০টি চুরি করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।

ডিবির এ কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্য অনুযায়ী, তাদের মতো আরও পাঁচ-ছয়টি চোর চক্র সক্রিয় রয়েছে। তারা জুয়েলার্স, কাপড়ের দোকান, বিকাশ এজেন্টের অফিস, ফল বা হার্ডওয়্যারের দোকানে চুরি করে। চুরির পরপরই নগদ টাকা বা মালপত্রের ২০ ভাগ সরিয়ে ফেলে। দলনেতা ও যারা দোকানের ভেতর প্রবেশ করে তারা এই ২০ ভাগ পায়। বাকি ৮০ ভাগ অর্থ বা মালপত্র সবার মধ্যে সমানভাবে ভাগ করা হয়।

তদন্ত সূত্র জানায়, চক্রটি গত ১৭ অক্টোবর বংশালের মাদ্রাসা মার্কেটের তালা কেটে দোকানের ক্যাশ বাক্সে রাখা নগদ টাকা লুট করে। চুরির এক সপ্তাহ আগে দলনেতাসহ দুই জন দোকানটি রেকি করে। চুরির তিন দিন আগে গ্রুপের আরেক সদস্য আবারও দোকানটি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর ঘটনার দিন ৭-৮ জন সরাসরি চুরিতে অংশ নেয়। দু’জনের দায়িত্ব থাকে দূর থেকে পথচারী সেজে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনে কথা বলে লোকজনকে ব্যস্ত রাখা। দোকানের সামনেও দু’জন একইভাবে পথচারীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে। আর দু’জন দোকানের সামনে চাদর বা ছাতা ধরে রাখে, যাতে তালা কাটার দৃশ্য কেউ দেখতে না পারে।

ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, চক্রের বেশিরভাগ সদস্য দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের ফিশারীঘাট এলাকায় মাছ চুরি করে আসছিল। তারা চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে চুরি করেছে বলেও জানা গেছে। চক্রটি মাঝেমধ্যে নতুন সদস্য সংগ্রহ করে। সর্বশেষ ইসহাক ছয় মাস আগে তার আপন ভাই ও চক্রের সদস্য আকাশের মাধ্যমে এই দলে যোগ দেয়। রোববার ঢাকার মাতুয়াইল, ডেমরা, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এই চোর চক্রের দলনেতাসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ১৫টি মোবাইল ফোন, দুটি কাটার, চারটি তালা, ১০টি চাবি, নাট-বোল্ট, দুটি সেলাইরেঞ্জ, পাঁচটি স্ক্রু ড্রাইভার, একটি রেদ, সরঞ্জাম বহনে ব্যবহৃত দুটি ব্যাগ, নগদ ৭৮ হাজার টাকা, দুটি ছাতা, একটি চাদর, একটি ক্যাপ (চোরদের একজন পরে ছিল), দুটি হাতুড়ি, একটি বড় কাঁচি ও দুটি প্লায়ার্স উদ্ধার করা হয়েছে।

Facebook Comments Box

Posted ২:২৬ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৮ নভেম্বর ২০২২

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com