কাগজ রিপোর্ট | শনিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট | 362 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
নিউইয়র্কে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা জামাইকা ড্রাগ ব্যবসায়ীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আর এর ছোবলে আটকা পড়ছে বাংলাদেশি কমিউনিটির উঠতি যুবক যুবতীরা। কয়েক মাস পরপরই কমিউনিটির ২০-২৮ বয়সী ছেলেমেয়েদের প্রাণ ঝরে পড়ছে। বাসা বা এপার্টমেন্টে মারা গেলে কমিউনিটির নজরে আসে। হাসপাতাল বা রিহাব সেন্টারেও মারা যাচ্ছেন। অধিকাংশ মৃত্যুকে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে হার্ট এটাকের কারন হিসেবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভয়াবহ। মাদকচক্র ঘিরে ফেলছে বাংলাদেশি উঠতি বয়সীদের । বিকেলে পার্কে হাঁটলে অনেক বাংলাদেশি তরুণীকেও গাঁজা টানতে দেখা যায়। কিংবা পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে গন্ধকে এড়ানো যায় না। ভয়ানক ড্রাগ মেক্সিকোর সীমান্ত থেকে সরাসরি আসছে জামাইকায়। এতে জড়িয়ে পড়ছেন বাংলাদেশি ছেলেমেয়েরাও। কেউ সেবন করছেন। কেউবা আছেন জড়িত ড্রাগ ডিলার হিসেবে। এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে পারিবারিক বন্ধনের অভাব, ধর্মীয় অনুশাসন থেকে সরে যাওয়া ও বাবা মা’র পরকিয়ায় সন্তানদের ওপর নেতিবাচক প্রভাবকে। কমিউনিটি রির্সাচে বেরিয়ে এসেছে শতকরা ১০ ভাগ বাংলাদেশি ছেলেমেয়েরা ঝুঁকছে সুইসাইডাল টেন্ডিসিতে। কমিউনিটি একটিভিস্ট ও জামাইকা ফ্রেন্ডস সোসাইটির সাবেক সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আল আমীন রাসেল আজকালকে বলেন, জামাইকার পরিস্থিতি একবারেই নাজুক। এখনই আমাদের করণীয় ঠিক করতে হবে। দুঃখজনক হচ্ছে, এখনও কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে আসছে না। যুব সমাজকে রক্ষা করতে সকল সামাজিক সংগঠনগুলোকে মাদক বিরোধী গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
গত ২ বছরে জামাইকাতে ২০-২৮ বছরের প্রায় ২০ জন বাংলাদেশি হার্ট এটাকে মারা গেছেন বলে খবর এসেছে। এতও অল্প বয়সে এ সব তরুনের অকাল মৃত্যুর বার্তা কাম্য নয়। ভাববার বিষয়। তাদের মধ্যে মিঠু,শাহরিয়ার, জাফর ও ইকবাল অন্যতম। এরমধ্যেই গত ১৮ নভেম্বর শুক্রবার প্রবাসের বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী, পরিচিত মুখ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দোহার উপজেলা সমিতি ইউএসএ ইনক’র প্রধান উপদেষ্টা হাফিজুর রহমান গিনি’ র পুত্র পুলকের মরদেহ পাওয়া গেছে নিজ এপার্টমেন্টে। সিটির জ্যামাইকাস্থ ভাড়া এপার্টমেন্ট থেকে মৃত অবস্থায় পুলকের মরদেহ পুলিশ উদ্ধার করে। ধারণা করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার রাতে সে মারা গেছে। পুলিশ এপার্টমেন্ট থেকে ২০ বছর বয়সী জামাইকান বংশোদভূত এক যুবতীকেও অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় ৷ তাকে এনওয়াইপিডি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ৷ বর্তমানে জামিনে রয়েছে। পুলকের বয়স হয়েছিলো আনুমানিক ২১। পুলকের ছোট আরো দুই ভাই রয়েছে। পুলকের আকস্মিক মৃত্যুতে কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সঙ্গীত শিল্পী হাফিজুর রহমান গিনি এক সময় স্বপরিবারে নিউইয়র্কে বসবাস করলেও কয়েক বছর ধরে বাফেলোতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তার পুত্র পুলক একাকী নিউইয়র্কের বাসায় বাস করতেন। ধারনা করা হচ্ছে, ১দিন আগেই পুলক বাসায় হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তবে স্থানীয় পুলিশ বলছেন অন্য কারন। তার ড্রাগের বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। জামাইকান মেয়েটি পুলকের বান্ধবী কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পুলিশ সন্দেহ করছেন, মেয়েটি ড্রাগ ব্যবসার সাথে জড়িতও থাকতে পারে। পুলকের মৃত্যুর সাথে তৃতীয় কেউ জড়িত কিনা তাও উড়য়ে দিচ্ছেন না অনেকেই। তবে হাসপাতাল মর্গ এলাকায় উঠতি কিছু তরুণের আনাগোনা ছিল সন্দেহজনক।
বাফেলোতে বসবাসরত পুলকের মা বৃহস্পতিবার থেকে পুলকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা কওে ব্যর্থ হন। শুক্রবার তিনি নিউইয়র্কে পুলকের বন্ধুকে ফোন করে তার খবর জানার চেষ্টা করে। বন্ধুটি শুক্রবার পুলকের বাসায় গিয়ে তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায় ও পুলিশকে খবর দেয়। এদিকে সন্তানের মৃত্যুরর খবর শুনে হাফিজুর রহমান বাফেলো সিটি থেকে নিউইয়র্ক সিটিতে ছুটে আসেন। গত রোববার জামাইকা মসজিদে ও সোমবার বাফেলোতে পুলকের জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সোসাইটির শোক
বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দোহার উপজেলা সমিতি ইউএসএ ইনক’র প্রধান উপদেষ্টা হাফিজুর রহমান গিনি’র পুত্র পুলকের অকাল মৃত্যুতে বাংলাদেশ সোসাইটি এক বিৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। এক বিৃতিতে সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়াান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম চৌধুরী এবং ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ মরহুমের রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন।
Posted ১২:৪৮ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২২
nykagoj.com | Monwarul Islam