
মনোয়ারুল ইসলাম | শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫ | প্রিন্ট | 876 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
জাগো বাহে! কোনঠে সবায়। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সরকারের চৈতন্য ফিরে এসেছে। আর তা ফিরেছে ভয়ের আতংকে। ঘুম হারাম হয়েছে এই সরকারকে ঘিরে বেনিফেসিয়ারি গোষ্ঠীর। যাদের স্বপ্ন ও ধ্যান একটাই কিভাবে ক্ষমতাকে দির্ঘায়িত করা যায়। সেটা ১ থেকে ৫ বছর হলে খুবই ভালো। রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে এই কতৃর্ত্ব হাতছাড়া হয়ে যাবে। অনেককে তো খুঁজেও পাওয়া যাবে না। পরিণতির কথা বাদই দিলাম। তাই যেনতেনভাবে ইউনূস সরকারকে দির্ঘায়িত করতে হবে। সেটা সংস্কারের নামে হতে পারে। অজুহাত সস্পূর্ন সংস্কার করেই নির্বাচন। এতে নির্বাচন ১ থেকে ২ বছর পিছিয়ে যাবে । প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি যতদ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। ইউনূসের সরকারের বিএনপিপন্থী হিসেবে একটি অংশ রয়েছে। কিন্তু রুটিরুজিতে তারা আর বিএনপির সেন্টিমেন্টের সাথে একমত পোষণ করছে না। তারা সংস্কারের পর নির্বাচনের পক্ষে। বরং তাদের সুর এখন জামায়াত ও সমন্বয়কদের লাইনে।ইউনূস— ওয়াকারের বৈঠক। রাজনৈতিক চাহিদা ও আন্তর্জাতিক মহলের চাপে ডিসেম্বরেই নির্বাচনের পুর্নবার ঘোষণা , হাসনাতের হিরো বনে যাওয়া ও সেনাপ্রধানকে ভিলেন বানানোর প্রচেষ্টা সবই একসূত্রে গাঁথা। ডিসেম্বরেই নির্বাচনের ঘোষণার পরই পাল্টে গেল প্রেক্ষাপট। সমন্বয়ক এক নেতা আর্মিকে মুখোমুখি পুরো জাতির সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেন। সেনা প্রধানকে বানালেন জাতির ভিলেন। হিরোর মহিমায় উদ্ভাাসিত হলেন হাসনাত। এমতাবস্থায় সেনা প্রধানের উচিত পুরো বিষয়টি জাতির সামনে পরিষ্কার করা। নতুবা নৈতিকতার কারনে তার পদত্যাগই একমাত্র পথ। নাকি কচুখেত ও সাভারে নাটকীয় উত্তেজনা। হাসনাত আব্দুল্লাহ’র বক্তব্যের পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিল বের হলো। যদিও এই মিছিলগুলোতো সাধারন ছাত্রছাত্রীদের কোন উপস্থিতিি ছিল না। ১০০ থেকে ১৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে তারা মিছিল করলেন। আতংক ছড়িয়ে পড়লো সারা দেশে। একটি বিশৃংখলা তৈরির ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের একটি খুঁটি পদত্যাগ করলেই কেল্লাফতে। দেশব্যাপি বিশৃংখলা তৈরি করে বিপ্লবী সরকার তৈরি করে ক্ষমতাকে দীর্ঘমেয়াদী করতে হাসনাতদের খোয়াব সামনে। এই ভয়ংকর খেলার পরিণতি কি হতে পারে তাদের জানা নেই। তাদের মাথায় নেই মাঠের চিত্র। ৫ আগষ্টের আগে সাধারন মানুষের সর্মথনের ২ ভাগও তাদের ওপর নেই। বরং গত ৭ মাসে তাদের কার্যকলাপ , ক্ষমতালিপ্সা ও মবজাস্টিস এনার্কির প্রতিমূর্তি হিসেবে দেখছে সাধারন মানুষ।
পদচ্যুত আওয়ামী লীগ সম্পূর্ন প্রস্তুত। একটি প্রতিবিপ্লব ঘটানোর সুযোগ ও নির্দেশনার অপেক্ষায় তারা। জাতীয় নাগরিক পার্টির সাবেক সমন্বয়করা কথিত বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠায় পা বাড়ালেই আওয়ামী লীগ ভয়ংকর মূর্তিতে বিশাল পৃষ্ঠপোষকতায় মাঠে নামবে। ক্যান্টনমেন্টের অস্থিরতা কোন পথে যাবে তা বলা মুশকিল। এতে বিপ্লবীরা পালাবার পথটিও পাবে না। ক্যান্টনমেন্ট বন্ধ। বর্ডারতো তাদের জন্য সীল করা। কি ভয়ংকর হবে সে দৃশ্য। একটি পাণ্টা অভ্যুত্থানের পথে এগুচ্ছে বাংলাদেশ? রাজনীতির বড় শক্তি বিএনপি ধীরস্থিরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তাদের প্রস্তুতিও ভিন্ন ধরনের। এক ঢিলে ২ পাখি মারতে চায়। হাসনাতদের মুখোশ উন্মোচন করে জাতির সামনে তুলে ধরা। দ্বিতীয়তো হাসিনার আওয়ামীলীগকে রুখে দেয়া। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির কৌশল কি তা এখনও পরিষ্কার নয়। সেনা প্রধান ওয়াকারুজ্জামান এখন কোথায়? জাতি তার মুখ থেকেই কিছু শোনার অপেক্ষায় রয়েছে। হাসনাত তাকে জাতির সামনে আসামী/ভিলেন হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। এই ধূম্রজাল তিনিই পরিষ্কার করতে পারেন। আর ড. ইউনূস একটি অদৃশ্য জালে আটকা পড়েছেন। নিশ্বাস নিচ্ছেন। কাজ করছেন নির্দিষ্ট ছকে। নিজের মতো কিছু বলতে পারছেন বলে মনে হয় না। সময়ের স্রোতে সর্বনাস তো বলে কয়ে আসে না। জাতি কি আরেকটি সংকটে মুখোমুখি হচ্ছে?
এমনি একটি বার্তায় দিয়েছেন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম । তার বার্তায় সরকারের ভেতরের অস্থিরতা ও একটি অশনি সংকেতের আভাস স্পষ্ট। বিভাজনের পথ বেয়েই আওয়ামী লীগ আসবে মন্তব্য করে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, একমাত্র ছাত্র—জনতার জুলাই ঐক্যই পারবে আওয়ামী লীগের ফিরে আসাকে ঠেকিয়ে দিতে। তাই অভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যকার বিরোধ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হোন।
শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি বলেন, এস্টাবলিশমেন্ট মাস্টারমাইন্ড বানালো। আবার নিজেরাই মাস্টারমাইন্ডের বিরুদ্ধে নেপথ্য শক্তি’র অন্ধভক্তদের লেলিয়ে দিল। ছাত্রদের মধ্যকার ক্রেডিটবাজির লড়াই কারা শুরু করিয়ে দিল? নেপথ্য শক্তির ন্যারেটিভের পেছনে ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট কি করছিল? বামপন্থিদের একাংশকে কারা প্রথমেই অভ্যুত্থানের শক্তি থেকে আলাদা করে ফেলল? বামপন্থিদের মুজিববাদী অংশ কিভাবে পরিপুষ্ট হলো?
তিনি লিখেছেন, প্রথম বিতর্ক হলো— সোনার বাংলা নিয়ে। সেখান থেকে কালচারাল ওয়ার শুরু। কখন, কাকে দিয়ে সে খেলা শুরু হলো? হিযবুত গালিটা দেওয়া হলো ছাত্রদের। অথচ ছাত্রদের হিযবুত বলে ন্যারেটিভ বানিয়ে আসল হিযবুতদের পতাকাবাজি করতে হেল্প করেছিল কারা?
তিনি লিখেছেন, এস্টাবলিশমেন্টের হাতে এক দশকে গজানো ‘তৌহিদী জনতা’ নামধারীদের প্রথম মিটিং হলো এসকেএস টাওয়ারে। পরে সারা বাংলাদেশে, জেলায় জেলায়। কারা ইন্ধন জোগাল তাদের। আর কার/কাদের বিরোধিতা করল, এখনো করে যাচ্ছে? ঢাকা শহরের স্কুল কলেজে র্যাডিকালাইজেশনের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হলো কাদের আয়োজনে? নেপথ্য শক্তির প্রোপাগান্ডা (স) এবং মিম পেজগুলো একের পর এক আক্রমণ করল অভুত্থানের নেতাদের। অভুত্থানের যে নেতারা শাপলা—শাহবাগের বাইনারি ভাঙতে চাইল, নতুন বন্দোবস্ত গড়তে চাইল— তাদের বিরুদ্ধে নেপথ্য শক্তি, ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট, নেপথ্য শক্তির প্রোপাগান্ডা (স), তৌহিদী জনতা নামধারীদের একসঙ্গে লেলিয়ে দিল কারা? এর বিপরীতে ছাত্রদের প্রতিক্রিয়া কিভাবে ছাত্রদের নিজেদের মধ্যে বিভাজন শতগুণ বাড়িয়ে দিল?
তথ্য উপদেষ্টা আরও লিখেছেন, বামপন্থি—ডানপন্থি বিভাজনের জন্য বিভিন্ন মঞ্চ ও আন্দোলনের পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ল কারা? সেসব মঞ্চের পেছনে নেপথ্য শক্তি কি করছিল? অর্থ ও জনবলের উৎস কারা ছিল? বামপন্থিদের একাংশ হরেদরে কেন এ সরকারের বিরোধী হয়ে উঠল এবং মুজিববাদীদের ক্রীড়ানকে পরিণত হলো? রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে ছাত্রদের নিয়ে টেনশন তৈরি করল কারা? কেন এক্স (সাবেক) কমিশনের এক সদস্য নেপথ্য শক্তির ইন্ধনে সমঝোতা করল? নেপথ্য শক্তিকে কিভাবে সাপোর্ট দেয়া হলো এডমিনে এবং ব্যবসায়ে, প্রকারান্তরে যা ‘দেশপ্রেমিক’ নেপথ্য শক্তি আর জাতীয়’ শক্তির মধ্যে বিভাজন, সন্দেহ ও দূরত্ব তৈরি করল।
তিনি আরও লিখেছেন, জাতীয় শক্তিই বা কেন বারবার এলাইন করতে থাকল এস্টাবলিশমেন্টের সঙ্গে? কেন তারা ছাত্র—জনতার আবেগের বিরুদ্ধে যেতে চাইল? আর এ আলাইনমেন্টের সূত্রে জাতীয় শক্তি কেন ছাত্রদের ওপর আক্রমণ বহুগুণ বাড়িয়ে দিল, ডিসেম্বর অনওয়ার্ড? অলিগার্কদের টাকা কিভাবে ভাগ করা হলো, এস্টাবলিশমেন্ট, ‘বড়’ নেপথ্যশক্তি আর জাতীয়’ শক্তির মধ্যে? কিভাবে টিকিয়ে রাখা হলো সামিটসহ অন্যান্য গ্রুপের বিজনেস ইন্টারেস্ট। কিভাবে ছাত্রদের একাংশকে টেনে নেয়া হলো সেসব আর্থিক লেনদেনে। যাতে পরবর্তীতে তাদের ব্লেকমেইল করা যায়? (ছাত্ররা এবং অন্যান্য দলের কর্মীরা বিভিন্ন অপরাধ করছে না, তা কিন্তু নয়!)
মাহফুজ আলম আরও লিখেছেন, লাকি কেন হঠাৎ সামনে আসল? শাহবাগ—শাপলার দ্বন্দ্ব কেন প্রকট হলো? সব বাহিনীর মোরাল কেন এখনো ভঙ্গুর? মিডিয়াগুলোর ন্যারেটিভ কেন এত এত সাজানো ও সময়োপযোগী হয়? মুজিববাদীরা কিভাবে রিওর্গানাইজড হলো মিডিয়া আর কালচারপাড়ায়?
তদুপরি, কোন কোন এডভাইজারের পক্ষ—বিপক্ষ কখন তৈরি করা হলো? কার কার পদত্যাগ চাওয়া হলো আর কাকে কাকে ইসলামবিদ্বেষী, নাস্তিক বানানো হলো? কেনই বা বানানো হলো? উত্তর হিসাবে বিশেষ কারও নাম গুরুত্বপূর্ণ না। আর, সবই অন্যরা করল, আমাদের কোনো দোষ নেই, তাও নয়। কিন্তু ষড়যন্ত্র হয়েছিল এবং এখনো চলমান! তবু, চলুন বিচার ও সংস্কারের পক্ষে কাজ করি। চলুন, শহিদ আহতদের স্পৃহা ও চৈতন্যের বাংলাদেশ তৈরি করতে আগুয়ান হই। এখনো সময় শেষ হয়নি! সবার জন্য শুধরাবার মতন সময় এখনো আছে! জুলাইয়ের মতো করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও সুযোগ রয়েছে! চলুন, ছাত্ররা এক হোন/হই আবার। আমাদের বিরুদ্ধে, এ প্রজন্মের বিরুদ্ধে, ‘বাচ্চাকাচ্চা’দের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। এটাই সত্য! আপনারা রুখে দাঁড়ান এবং জবাবদিহি ও সুবিচারের রাষ্ট্র গঠনে আবার ঐক্যবদ্ধ হোন। একমাত্র ছাত্র—জনতার জুলাই ঐক্যই পারবে আওয়ামী লীগের ফিরে আসাকে ঠেকিয়ে দিতে।
তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পুরাতন বন্দোবস্তের সব কলকব্জা বিকল করেই এগোতে হবে। নাহলে কিছুই দীর্ঘমেয়াদে টিকবে না। জুলাই প্রজন্মের একাংশ এস্টাবলিশমেন্টের ফাঁদে পড়েছে, বিভিন্ন সেগমেন্টের ন্যায্য ক্ষোভকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়েছে যাতে এস্টাবলিশমেন্ট অক্ষত থাকে। আর সেটা আছেও বটে! তাই, আমাদের প্রজন্মের সব আবেগকেই আওয়ামী লীগ প্রশ্নে, বিচারের প্রশ্নে, সংস্কারের প্রশ্নে নিবদ্ধ করা এবং এস্টাবলিশমেন্টের পালটা সেটেলমেন্ট গড়ার কাজে লাগানো উচিত। জুলাই প্রজন্ম জিন্দাবাদ! ছাত্র—জনতার জুলাই ঐক্য জিন্দাবাদ।
পরিশেষে মাহফুজ সাাহেবকে বলতে চাই, জুলাই প্রজন্মের ১ ভাগও আপনাদের সাথে আছে? ছাত্র—জনতার জুলাই ঐক্যতো ২১ ভাগে বিভক্ত। প্লিজ! দেয়ালে কান রাখুন। শুনতে পারবেন।
Posted ৩:৩৩ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
nykagoj.com | Monwarul Islam