শনিবার ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাসিনার ফোনালাপ ফাঁস

চট করে দেশে ঢুকতে চান শেখ হাসিনা

ডেস্ক রিপোর্ট   |   শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   47 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

চট করে দেশে ঢুকতে চান শেখ হাসিনা

নিউইয়র্কে বসবাসরত এক আওয়ামী কর্মির সাথে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফোনালাপ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। শেখ হাসিনা তাকে বলেছেন,বাংলাদেশে কাছাকাছিই আছেই। চট করে দেশে ঢুকে পড়তে পারি। ছাত্র—জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতে বসে তিনি দেশ—বিদেশে নেতা—কর্মিদের সাখে কথা বলেন বলে জানা গেছে। একমাস আগে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির টেলিফোনে কথা বলার সময় হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপা আপনে ঘাবরাইয়েন না। আপনি ঘাবরাইলে আমরা দূর্বল অইয়া পড়ি।’ এবার নিউইয়র্ক প্রবাসী মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতার ফোনালাপ ভাইরাল হয়েছে। ওই নেতার নাম তানভীর। তানভীর আলোচনার পুরোটাই রেকর্ড করে অনলাইনে ছেড়ে দেন। তার সাথে যে শেখ হাসিনার যোগাযোগ আছে সেটা প্রমাণ করাই ছিলো বড় উদ্দেশ্য। তবে রেকর্ড ফাঁস করে তিনি এখন দলের ভেতরে চাপে পড়েছেন। তার নিজের ফেসবুক একাউন্ট ডিএ্যাক্টিভেট করে দিয়েছেন তিনি। আলাপের এক পর্যায়ে হাসিনা বলেন, ‘গ্রামীন ব্যাংকের এমডি থাকাকালে ইউনূস ২৬ হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিং করে বিদেশে পাচার করেছেন।’ তানভীর বলেন, ‘ আপা আপনি আমার ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখলে বুকে জড়ায়া ধরবেন।’ তাদের এই ফেনালাপ এখন টক অব দ্যা কান্ট্রি।
তানভীর শেখ হাসিনার সাথে সাড়ে আট মিনিটের আলাপে দুই শতাধিকবার আপ আপা বলেন। তিনি নিজেই যে শেখ হাসিনাকে ফোন করেছিলেন সেটা ফোনালাপ শুনলেই বুঝা যায়। আলাপের শুরুতেই তিনি তার নিজের এলাকা কেরাণীগঞ্জ ও কামরাঙ্গির চর এলাকার অবস্থা তুলে ধরেন। আলাপের এক পর্যায়ে ভাইরাল হওয়া ফোনালাপে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, তিনি দেশের কাছেই আছেন, যাতে চট করে ঢুকে পড়তে পারেন।
তানভীর নামের ওই নেতাকে বলতে শোনা যায়, আমরা যারা নিউইয়র্ক মহানগরে আছি তারা এমদাদ ভাইয়ের নেতৃত্বে মিছিল—মিটিং করতেছি। কিন্তু এলাকার অবস্থা খুবই খারাপ। কামরাঙ্গীরচর বা কেরানীগঞ্জের সব নেতাকর্মী এলাকার বাইরে। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবার বিরুদ্ধে মার্ডার কেস।’

অনুমতি পেলে তানভীর দেশে গিয়ে নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তুমি যেখানে আছো, সেখানে বসেই সহায়তা করো।’ তানভীর আইনজীবীদের বিষয়ে পরামর্শ চাইলে শেখ হাসিনা সব আইনজীবীকে অর্গানাইজ হয়ে আদালতে যাতায়াতের কথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় নেতাদের সহযোগিতার পাশাপাশি দেশের বিষয়ে জানিয়ে রাখার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। তানবীর তখন শেখ হাসিনাকে বলেন, এবার মনে হয়, রিপাবলিকানরা ক্ষমতায় যাবে। আপনিতো জানেন, এখানে নারী নেতৃর্ত্ব পছন্দ করে না। তানভীর হাসিনাকে বুঝাতে চেষ্টা করে কমলা হ্যারিস জিততে পারবে না। রিপাবলিকানরা ক্ষমতায় আসলে আমাদের জন্য খুবই ভালো হবে আপা। জবাবে হাসিনা বলেন, ‘ আচ্ছা। ওখানে যারা জিতবে তাদেরকে যোগাযোগ রাখলে ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। আমি সবাইকে বলে দিয়েছি ভোট দিতে। ওরা ( আমেরিকানরা ) ভোটারদের গুরুত্ব দেয়তো। আমাদের বাঙ্গালীরাতো ভোট দিতে যায় । বিদেতশীরাতো কম যায়।
একপর্যায়ে তানভীর জানতে চেয়ে প্রশ্ন করেন, কিছু মনে করবেন না আপা। মাঝখানে শুনছিলাম আপনাকে গাজিয়াবাদ থেকে দিল্লীতে ট্রান্সফার করছে হেলিকপ্টার দিয়া। এ রকম একটা নিউজ আসছে। নিজের দিকে খেয়াল করবেন আপা। পরে শেখ হাসিনা তার প্রশ্ন আবারও শুনতে চান। হাসিনা পাল্টা প্রশ্ন করেন, হেলিকপ্টার দিয়ে ? কোন দেশের হেলিকপ্টার ? আপা এটা যায়যায়দিরে একটি ভিজ্যুয়াল দিচ্ছে। আপনি চাইলে আমি ভিডিওটা পাঠাতে পারি। তখন হাসিনা বলে, পাঠিওতো। কি আজগুবী কথঅ বলে ওরা।

এ সময় হাসিনা কিছু বলতে চাইলে তার কথার উপরেই তানভীর বলতে থাকে আপা আপা আপা খুব কষ্ট লাগে আপা। কান্না জড়িত কন্ঠে তানভীর বলেন, ‘কেউ কাজ করে না আপা। যে মিডিয়াগুলা আপনি দিয়া আসছেন এগুলা কাজ করে না আপা। কেউ সত্য বলে না আপা। কই যামু আপা। আল্লাহ আপনারে বাচায়ে রাখুক। আপনি আসেন। আমরা আছি আপা। আমরা আছি আপনার জন্য আপা। জবাবে হাসিনা এবার খুব স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমি কিন্তু আমাদের দেশের খুব কাছাকাছি আছি। ’ শুনে শান্তি লাগলেঅ আপা, বলেন তানভীর। আবারও হাসিনা বলেন, ‘অতো দূরে নাই আমি খুব কাছাকাছি আছি। যাতে আমি চট করে ঢুকে পড়তে পারি।’
তানভীর দলীয় নেতৃত্ব গোছানোর বিষয়ে অনুমতি চাইলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, ‘এখন দেশে গেলে দেবেনে একখানা মামলা। পরে কিছুই করতে পারবা না। আমার নামে ১১৩টা মামলা। আমার পরিবারের কেউ বাকি নেই। এ বিষয়ে জাতিসংঘসহ সবার কাছে বলা দরকার যে এটা কোন ধরনের কথা। যারা হিউম্যান রাইটস’র কথঅ বলতো, অপজিশনকে স্পেস দেয়ার কথা বলতো তারা কই ? এগুলা স্থানীয় লোকদের বলতে হবে। আমরা ছিলাম——— কিন্তু এখন যে অবস্থা খারাপ । আবার সেই দারিদ্র সীমার নিচে চলে যাচ্ছে। মানুষের খাবার নাই। আর সব টাকা লুটে খাচ্ছে। ব্যাংকের টাকা সব লুটে খাচ্ছে। ’
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দে্রর দুর্নীতি নিয়ে শেখ হাসিনাকে জড়ানোর বিষয়ে জানালে তিনি বলেন, ‘তাতে কিছু যায় আসে না। মানুষ যদি গাধা হয় আমার কিছু বলার নাই।’ ১৩ বিলিয়ন ডলার থেকে আমি যদি ৫ বিলিয়ন নেই। ’ হাসিনার অন্য কথাগুলো তানভীরে কথার তোড়ে চাপা পড়ে যায়। হাসিনার কথার উপরেই তানভীর কথা বলে যেতেই থাকে আর বলতে থাকে ‘মিডিয়া আমাদের অন্ধকারে রেখেছে। এটা হাস্যকর আপা।’ এবার হাসিনা বলেন, এত বোকা হলেতো কিছু বলার নাই। আর টিউলিপকে দেয়া হইছে। ও একটা বাচ্চা মেয়ে। ও তখন এমপিও না কিছুই না। আমাদের দাওয়াত দিছে গেছি। ও ( টিউলিপ ) এত শক্তিশালী যে ১৭ বছরের একটা মেয়ে পুতিনের সাথে আমারে নেগোসিয়েশন করায়ে দিছে ? এবার তানভীর বলে‘ আবার বলে টাকাটা মালয়েশিযার ব্যাংকে রাখছে। তাইলে কোন একাউন্টে রাকছে বল।’ হাসিনা তখন বলেন, টাকাটা তাহলে উঠাক। মালয়েশিয়ায় খেঁাজ করলেতো কোকো আর তারেকের টাকা পাওয়া যাবে। এটা নিয়ে তোমাদের লেখা উচিত, বলা উচিত। ’ এবার তানভীর বলে হঁ্যা আপা সিঙ্গাপুর থেকে । আপা আপনিতো ফেসবুক চালান না আপা। হ্যা আমি ফেসবুক চালাই না বলেন হাসিনা। এবারো তানভীর হাসিনার কথা বলার সময়ে নিজে কথা বলেই চলেন। এ সময় তানভীর বলেন, আমি জানি আপা। ইন্ডিভিজ্যুয়ালি আমি যেভাবে আমি ফেসবুলে লেখঅলেখি করতাছি আল্লাহতাআলা কোনোদিন যদি আপনার কাছে নিয়ে যায় আপনাকে যদি দেখাইতে পারি আপা আপনি আমারে বুকে জড়াইয়া ধরবেন। এইটুক বলতে পারি আপা। ’
বিব্রত হাসিনা এবার প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলেন, ‘আরেকটা কথা তোমারে জানায়া রাখি এরা খুব লাফাচ্ছে যে মানি লন্ডারিং করছে—‘গ্রামীন ব্যাংকের যত টাকা এতদিনে টাকা। ইউনুস কিন্তু গ্রামীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেনি। গ্রামীন ব্যাংক করেছে এরশাদ। ইউনুসরে চাকরী দিছিলো এ

মডি’র পদে। এমডি’র পদে থেকে ২৬ হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিং করে বিদেশে নিয়ে গেছে। হাসিনা আবারও বলেন, ‘২৬ হাজার কোটি টাকা। যা দিয়ে বিদেশে এই সোস্যাল বিজনেস। সব। এত টাকা পায় কোত্থেকে ?
আপা এইটাতো দেশের মানুষ বুঝতাছে আপা। দেশের মানুষ হাঁড়ে হাঁড়ে বুঝতাছে। হাসিনা এবার বলেন, না না এটা মানুষকে বুঝায়া দিতে হবে। এই যে অলিম্পিকের মশাল ধরতে কত টাকা ডোনেশন দিছে? ওদের ডোনেশন লিস্ট খুঁজলে পাওয়া যাবে। ক্লিন্টন ফাউন্ডেশনে যে ডোনেশন দিছে নোবেলের আগে সেটা কত টাকা ওখানে পাওয়া যাবে ? মহাচোর বইসা এখন আমাদেরকে সব ত্বত্ত্বকথা শুনাচ্ছে। গরীবের রক্তচোষা টাকা নিয়া বড়লোক হইছে সুদখোর একটা। এবার তানভীর অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়েন। তানভীরের হাসিতে হাসিনার অনেক কথাই আর শোনা যাচ্ছিলো না। এবার তানভীর বলেন, ‘বিশ্বাস করেন আপা বাংলাদেশের মানুষ এখন ধীরে ধীরে বুঝতাছে। ওই সময় আবেগে গেছে আন্দোলনে। ওরা ( আন্দোলনকারীরা ) আসলে কি সরাসরি বলতে পারতেছে না ওরা কষ্ট পাচ্ছে। কারণ আমরাতো চাপ দিয়ে ধরবো তাইলে কেনো গেছিলি ? স্বীকার করতে পারতেছে না। তবে মানুষ আপা খুব কষ্টে আছে। মানুষ আস্তে আস্তে ভুল বুঝতাছে। আপনি ছাড়া কোনো বিকল্প নাই আপা। বাংলাদেশকে আপনি যেই জায়গায় নিয়া গেছেন আপা, আপা আপা আপা, আপা। আপনেরে নিয়া স্বপ্ন দেখি আপা আপনেরে নিয়া লড়াই করুম আপা। ’ এ সময় তানভীর ফোৎ ফোৎ করে কান্না করছিলেন মনে হয়। আবারও তানভীর বলতে থাকে আপপপপপপা। এবার হাসিনা তাকে শান্তনা না দিয়ে বলেন, ‘ যথেষ্ট করছি দেশের জন্য। রাত নাই দিন নাই। কোথায় উঠাইছলাম বাংলাদেশরে। সব ধুলায় মিশায়া দিলো।’ এ সময় তানভীর আপা আপা বলতেই ছিলেন। আপার কথা তখন বারবার চাপা পড়ে যাচ্ছিলো।

এবার তানভীর আবার বলেন, ‘আপা কষ্ট লাগে যারা মনে করেন অতি উৎসাহী যারা ওরা বুঝে নাই ওরা জামা—শিবির বঙ্গবন্ধুর স্ট্যাচু নিয়া অপমান করছে। কিন্তু আর্মি আপা আপনার পালিত আপা ওরা এই কাজটা করলো এর চেয়ে কষ্ট কোথায় আছে আপা। এই কষ্ট কেমনে বুঝাবো আপা। এখন আপা তাইলে যে মামলাগুলো আছে এখানে যে সিনেটররা আছে ওগুলা ট্রান্সলেট করে ওগো কাছে পাঠানো শুরু করি আপা। এবার হাসিনা বলেন, ‘কাজ করতে থাকো।’ আর সিদ্দিক ( সভাপতি, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ) ভাইরে বইলা দিয়েন আপা। উনারতো বয়স হইছে মুভ করতে

পারে না। তবে উনি যথেষ্ট এ্যাকটিভ আছে আপা। সিদ্দিক ভাই আর আমাদের এমদাদ ভাই আপা এই দুই জনই প্রচন্ড পরিশ্রম করতাছে আপা। তার এই অনুরোধে অবশ্য শেখ হাসিনা চুপ করে থাকেন কোনো উত্তর না দিয়ে।
এবার তানভীর আবারও বলেন, আপা আপনি যখন নির্দেশ দিবেন তখনী এলাকায় যাইয়া কাজ করতে শুরু করবো। নিজের দিকে খেয়াল রাখবেন আপা।’
ফোন কলের বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ শেখ হাসিনার অপর প্রান্তের ব্যক্তিটির নাম তানভীর। তিনি যুক্তরাষ্ট্র মহা নগর আওয়ামী লীগ নেতা। (তথ্য-সাপ্তাহিক খবর)।

Facebook Comments Box

Posted ৪:০২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com