৩০ জানুয়ারি, জহির রায়হানের ‘অন্তর্ধান’ দিবস। তিনি অন্তর্ধানই রয়ে গেলেন। তার কোন মৃত্যু দিবস নেই।আমাদের উপমহাদেশে আর একটি বিখ্যাত অন্তর্ধানের ঘটনা রয়েছে। নেতাজী সুভাষ বোসের অন্তর্ধান। ইতিহাসে তিনি অন্তর্ধানই রয়ে গেছেন।
‘৭২ সালের এই দিনে পুলিশ মিরপুরে অভিযান চালিয়েছিল বিহারীদের বিরুদ্ধে, যাদের হাতে অস্ত্র ছিল এবং মিরপুরকে যারা অশান্ত করে রেখেছিল। জহির রায়হান তাদের সাথে গিয়েছিলেন তার অগ্রজ শহীদুল্লা কায়সারের সন্ধানে। তার কাছে গোপন খবর ছিল শহীদুল্লা কায়সার মিরপুরে আটক আছেন। এই গোপন খবরটি তাকে দিয়েছিলেন তার আত্মীয় সম্পর্কীয় (বোধহয় ভাগ্নে) একজন, যিনি পরবর্তীতে ঘাদানিক আন্দোলন করে বিখ্যাত হয়েছেন। এ তথ্যটি আমি পেয়েছিলাম জহির রায়হানের অন্তর্ধানের প্রায় পরই তৎকালীন সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত একটি লেখায়। সেই পত্রিকাটি আমার সংগ্রহে নেই, তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ থেকে বিরত রইলাম।
মিরপুরে সেই পুলিশ অভিযানে আরো নিখোঁজ হয়েছিল একজন পুলিশ সার্জেন্ট, যার বাড়ি ছিল আমার ঝিনাইদহে। আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন আদর্শবাদী ছেলেটার ডাক নাম ছিল বলটু, পুরো নাম এনায়েত করিম।
জহির রায়হানের অন্তর্ধান নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘জহির রায়হান গুম হয়নি, বাড়ি থেকে পালিয়েছে’।
কেমন ছিল বঙ্গবন্ধু বা আওয়ামী লীগের সাথে জহির রায়হানের সম্পর্ক? বঙ্গবন্ধুর সাথে বা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে তার কোন যোগাযোগ কিংবা সাক্ষাৎকারের তথ্য কি পাওয়া যায়? জহির রায়হান মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন, তখনও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সাথে তার সম্পর্ক কেমন ছিল? আমার জানা নেই। তাই বিষয়টি প্রশ্ন আকারেই রাখলাম।
জহির রায়হানের ’জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটা সম্পর্কে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগ মহলের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? তখনকার একজন ছাত্রলীগ নেতা, এখন তিনি মৃত তাই নাম উল্লেখ করছি না, একটু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, সবার মুখে মুখে এখন জয় বাংলা শ্লোগান। ছবিতে এতও শ্লোগান আছে কিন্তু জয় বাংলা নেই। পরে চলচ্চিত্রকার ফখরুল আলম ‘জয় বাংলা’ নামে একটি নতুন চলচ্চিত্রই তৈরি করেছিলেন।
জহির রায়হানকে নিয়ে আজ ফেসবুকে অনেক কথা হচ্ছে। তাতে অংশ নিয়ে এই কথাগুলি এতদিন পরে তুলে ধরলাম। জানি না এর প্রতিক্রিয়া কি হবে! (লেখাটি মনজুর আহমদের অনুমতি সাপেক্ষে তার ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেয়া)