বুধবার ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হোম কেয়ার  সেবায় বাবা মাকে নিয়ে চলছে টানাটানি

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ১২ মার্চ ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   356 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

হোম কেয়ার  সেবায় বাবা মাকে নিয়ে চলছে টানাটানি

 

বয়স্কদের জন্য হোম কেয়ার সেবা আর্শীবাদ হয়ে আর্বিভূত হয়েছে। বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ আমেরিকায় বসবাসকারি বয়স্করা এ বিনিফিট পেয়ে থাকেন। জুইস কমিউনিটির ব্যবসায়ীরা এক সময় এ সেক্টরে একচেটিয়া ব্যবসা করতো। বাংলাদেশিরা ধীরে ধীরে পা বাড়াতে শুরু করে। বাংলাদেশি কমিউনিটিতে হোম কেয়ার সার্ভিস ও ব্যবসার পাওনিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ। সময়ের ব্যবধানে তা বিকশিত হতে থাকে। এখন নিউইয়র্কেই বাংলাদেশি কমিউনিটির ব্যবসায়ীদের নেতৃত্বাধীন প্রায় ২৫টি হোম কেয়ার সার্ভিস পরিচালিত হচ্ছে। তাদের মধ্যে বাংলা হোম কেয়ার, আলেগ্রা হোম কেয়ার,এলডার হোম কেয়ার, গোল্ডেন এজ হোম কেয়ার, বারী হোম কেয়ার, আশা এডাল্ট সার্ভিস ও হোম কেয়ার, মার্কস হোম কেয়ার, দাদা হোম কেয়ার, রিলায়েবল হোম কেয়ার ও গুড শেফার্ড সুনামের সাথে কমিউনিটির বয়স্কদের সেবা প্রদান করে আসছে। এখন আর বাংলাদেশি সিনিয়রদের অন্য জাতিগোষ্ঠী ও ভাষাভাসি লোকদের কাছে যেতে হয় না। বাংলা ভাষার সেবক সেবিকাদের পরিচর্যা গ্রহন করতে পারে।

আমেরিকান সিনিয়র সিটিজেনদের বড় একটি অংশ শেষ বয়সে সিনিয়র সিটিজেন শেল্টার বা সেন্টারে উঠেপড়ে। তাদের পারিবারিক বন্ধনটি মাইনোরিটি সম্প্রদায়ের মতো শক্তিশালী নয়। বাংলাদেশিরা পারিবারিকভাবে শক্তিশালী বন্ধনে আবদ্ধ। মৃত্যুর আগদিন পর্যন্ত তারা স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, নাতিনাতনী ও আত্মীয়স্বজনসহ একসাথে বাস করে। একসাথে বাস করতে অভ্যস্ত। দেশে যুগযুগ ধরে এ ভাবেই বাংলাদেশিরা জীবন অতিবাহিত করে এক সময় পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছেন। আমেরিকায় বাংলাদেশিদের বড় ধরনের গোড়াপত্তন শুরু আশির দশক থেকে। বিশেষ করে ওপি/ডিভি লটারী শুরু হবার পর থেকে হাজার হাজার বাংলাদেশি প্রতিবছর ইমিগ্র্যান্ট হয়ে আমেরিকায় আসতে শুরু করে। ইমিগ্র্যান্টরা তাদের বাবা মাকে স্পন্সর করে ৩ বছরের মধ্যে এ দেশে নিয়ে আসতে পারেন। আবার বয়স্ক বাবা মাকে দেখাশোনার জন্য সরকারি খরচে নার্স বা সেবিকা রাখার বিধানও রয়েছে। পাঠাতে পারেন সরকারি খরচে এডাল্ট ডে কেয়ার সেন্টারে। দিনের বেলায় বয়স্ক বাবা মাকে দেখা শোনার জন্য রয়েছে এডাল্ট ডে কেয়ার সেন্টার। কাজে থাকাবস্থায় বাবা মাকে নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। এর বাইরেও আমেরিকান সরকার বাবা মাকে দেখাশোনা করে আর্থিকভাবে লাভবান হবার সুযোগও করে দিয়েছে। সেক্ষত্রে তাদেরকে আর সিনিয়র সিটিজেন সেন্টার বা ডে কেয়ার সেন্টারে পাঠানোর দরকার পড়ে না। ছেলে বা মেয়ে বাবা মা’র কেয়ার গিভার হিসেবে বাসাতেই কাজ করতে পারেন। ঘন্টায় পাওয়া যায় ২১ বা ২২ ডলার। যা নিউইয়র্ক স্টেটের নূন্যতম বেতনের চেয়েও বেশি। একটি গ্রোসারী দোকান, ডানকিন ডোনাটস বা ম্যাক ডোনাল্ডসে কাজ করলে পাওয়া যায় ঘন্টায় ১৫ ডলার। বাসায় বসে নিজের আপনজনকে সেবা করে ফুলটাইম চাকুরীর মতো বেতন। এ যেন সোনায় সোহাগা! ইমিগ্র্যান্ট বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেক গৃহিনীই কাজ করেন না।সংসারের কাজ ও ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করেন। এমতাস্থায় বাসায় বাবা বা মাকে দেখাশোনা করে ফুলটাইম জব এর মতো বেতন পাওয়া যায়। স্বামীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে আর থাকতে হয় না। স্বামীর একক উর্পাজনের ওপর আর চাপ পড়ছে না। স্ত্রীও তাকে সহায়তার হাত বাড়তে পারছেন। বহু বাংলাদেশি এ বিষয়টিকে মাথায় রেখে বাংলাদেশ থেকে বাবা মা কিংবা শ্বশুড়-শ্বাশুড়িদের স্পন্সর করে এদেশে নিয়ে আসছেন। ভাগ্যের চাকা খুলে যাচ্ছে অনেক পরিবারের। বাবা মা কিংবা শ্বশুর শ্বাশড়ির সেবা দিয়ে মাসে ৬ থেকে ৭ হাজার ডলারের অতিরিক্ত আয়ের নিশ্চয়তা। সংসারে ফিরে আসে আর্থিক স্বচ্ছলতা। অনেক গৃহবধূই বাবা মা কিংবা শ্বশুর শ্বাশুড়িকে সেবা দিয়ে হাজার হাজার ডলার সেভ করেছেন। কয়েক বছরের মধ্যে বাড়িও কিনেছেন। আর এমন উর্পাজন সম্ভব ফেডারেল সরকার ও নিউইয়র্ক স্টেটের নিয়মনীতির ভেতর থেকেই। এ প্রক্রিয়াটি জটিল হলেও বাংলাদেশি মালিকানাধীন হোম কেয়ার প্রতিষ্ঠানটিগুলো পরিবারগুলোর সাথে সেতুবন্ধনের কাজ করে। একজন বাবা কিংবা মায়ের সেবা প্রদানে সন্তান বা পুত্রবধুদের সেবক বা সেবিকা দেখিয়ে নিয়োগ প্রদান করে। সহজীকরন প্রক্রিয়ায় তারা কমিউনিটির সাধারন জনগনকে সহায়তা দিয়ে আসছে। কিন্তু পরিবারগুলোর কিছু জটিলতা এসে পড়ে হোম কেয়ার ব্যবসায়ীদের ওপর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন হোম কেয়ার ব্যবসায়ী নিউইয়র্ক কাগজকে বলেন, অনেক কিছু আমরা ওভারলুক করি। চাই না একটি পরিবার সরকারের দেয়া সুবিধা থেকে বঞ্চিত হোক। পারিবারিকভাবে সমস্যার তৈরি হলে মেনটরিং করা হয়। পরামর্শ দেয়া হয়। মাঝেমধ্যে শালিশী ভূমিকায় নামতে হয় হোম কেয়ার ব্যবসার লোকজনদের।

সরকারের দেয়া এ সুবিধার ব্যবহার করা নিয়ে নেতিবাচক কিছু ঘটনাও ঘটছে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া, ভাই বোনের দ্বন্দ্ব ও স্বামী স্ত্রীর অশান্তির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সরকারি সুবিধা। আর্থিক বেনিফিটের প্রত্যাশায় ভাইয়ে ভাইয়ে কিংবা বোনে ভাইয়ে বাবা মাকে নিজেদের কাছে রাখার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন। টানাটানি শুরু করেন বাবা মাকে নিয়ে। শ্বাশুড়িকে রাখা নিয়ে সম্প্রতি দুই ভায়রার পরিবারে বাকযুদ্ধ এমনকি থানা পুলিশ পর্যন্ত বিষয়টি গড়িয়েছে কুইন্সের ওজনপার্ক এলাকায়। দুই ভায়রা ভাইই শ্বাশুড়িকে নিজেদের কাছে রাখতে চান। তার সেবা করে আর্থিক লাভবান হওয়াই তাদের লক্ষ্য।
ব্রংকসের পার্কচেষ্টার এলাকায় এক ডাক্তার অফিসের সামনেতো লংকাকান্ড ঘটেছে কয়েক মাস আগে। বৃদ্ধা মা থাকতেন মেয়ের সাথে। হোম কেয়ার বেনিফিট পেতে হলে ডাক্তারের ক্লিয়ারেন্সের দরকার হয়। থাকতে হয় মেডিকেইড বা মেডিকেয়ার সুবিধা। মেয়ে তার মাকে নিয়ে ডাক্তারের অফিস ভিজিট করে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। বাইরে অপেক্ষা করছিলেন বড় ভাই। মাকে নিয়ে ডাক্তার অফিসের বাইরে আসতেই ভাই মায়ের হাত ধরে টানতে শুরু করেন। চিৎকার করে বলতে থাকেন, মা আমার কাছে থাকবে। আমার বোন ষড়যন্ত্র করে মাকে নিয়ে গেছে। মাকে কাছে রেখে সকল বেনিফিট ভোগ করছে। বোনও নাছোড় বান্দা। মাকে কোনভাবেই ভাইয়ের হাতে তুলে দিবেন না। তিনিও চিৎকার শুরু করেন। ডাক্তার তার চ্যাম্বার থেকে বেরিয়ে এসে এমন পরিস্থিতি দেখেতো অবাক। স্থানীয় কিছু লোকজন ইতিমধ্যে জড়ো হয়ে গেছেন। হৈচৈ ও বাকবিতন্ডায় বৃদ্ধা মায়ের চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসছিল। পরে ডাক্তার ও স্থানীয় লোকজনদের সহায়তায় ভদ্র মহিলা তার মাকে নিয়ে বাসায় চলে যান। বাবা মা কিংবা শ্বশুর-শ্বাশুড়িদের নিয়ে এমনই নানা ঘটনা এখন প্রায়শই শোনা যাচ্ছে। কারনতো একটাই।

Facebook Comments Box

Posted ৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১২ মার্চ ২০২৩

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com