শনিবার ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত বাংলাদেশ

ভারতের জলে ডুবলো বাংলা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   99 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

ভারতের জলে ডুবলো বাংলা

টানা প্রবল বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা ঢলে সৃষ্ট আকষ্মিক ও ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত বাংলাদশের দক্ষিণ—পূর্বাঞ্চল। কয়েকফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে কমপক্ষে ১০ জেলার অধিকাংশ এলাকা। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন ও ক্ষতির মুখে পড়েছেন কমপক্ষে ৩৬ লাখ মানুষ। স্বাভাবিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। উদ্ধার কাজে সেনা মোতায়েন করা হলেও ভারি বৃষ্টি ও প্রবল শ্রোতে উদ্ধার কাজও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এসব এলকায় পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কমপক্ষে আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, গত বুধবার থেকে আট জেলায় বন্যা দেখা দিলেও বৃহস্পতিবার তা আরও চার জেলাসহ মোট ১২ জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। জেলাগুলো হলো ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ।

৩৬ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আর প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত। টেলিযোগাযোগ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেক তথ্য জানা যাচ্ছে না। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা হচ্ছে ফেনী।  অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। এ সময় সীমান্তে পতাকা বৈঠকের মতো দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন কোনো উচ্চুর কমিটি বা ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব দেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠক শেষে প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ভারতে বন্যা হলে ভাটির দেশ বাংলাদেশে অবধারিতভাবে এর প্রভাব পড়ে। তাই বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ ও ভারতের একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে এই পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা দুই দেশের মধ্যে পানিবণ্টনের বিষয়টি তুলেছেন। পানিবণ্টন নিয়ে যেসব বিষয় আছে, সেগুলো যৌথভাবে নিষ্পত্তি কথা বলেছেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, গতকাল চট্টগ্রামের মিরসরাই, কুমিল্লার বুড়িচং, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বন্যার্তদের উদ্ধার কার্যক্রমে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশন, ২৪ পদাতিক ডিভিশন এবং ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের সেনাসদস্যরা পানিবন্দী মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সহায়তা করছেন। এ ছাড়া ফেনী, চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে সেনাবাহিনীর পাঁচটি চিকিৎসা দল সহায়তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে। বন্যাদুর্গতদেও উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর পাশাপাশি বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ ও খাদ্য বিতরণ করছে সেনাবাহিনী।
সেনাবাহিনী ছাড়াও ফায়ার সার্ভিস, কোষ্টকার্ড ও স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনও সাধ্যমতো উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছে।

জানা গেছে, বন্যার পানিতে রেললাইন তলিয়ে যাওয়ায় গতকাল থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা—চট্টগ্রাম মহাসড়কের অনেক স্থানে পানি উঠায় যান চলাচলে ধীরগতি দেখা যায়। বন্যাকবলিত অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে। এতে কার্যত ওই সব এলাকার মানুষ যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর, কোথাও বুকসমান পানি। কোথাও কোথাও ১০ ফুটের উপরেও উঠেছে পানি। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, পুকুর, রাস্তাঘাট, মাছের ঘের, আউশ ধান ও আমনের বীজতলা। এসব এলকার আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোও পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত সীমান্তবর্তী জেলা ফেনী। জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার পর ফেনী সদর পুরোটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত। বেশির ভাগ একতলা ঘর তলিয়ে গেছে। এমনকি দোতলায়ও কয়েকফুট পানিতে তলিয়ে যাবার খরব পাওয়া গেছে। কেউ কলাগাছের ভেলা বানিয়ে, কেউ অথৈ পানিতে সাতরে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আবার অনেকে বড় পাতিলে করেও সন্তানকে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠানোর চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর উচ্চবিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া ৭০ বছর বয়সী ননী বেগম বলেন, আগেও অনেকবার এ রকম বৃষ্টি দেখেছি। দিনের পর দিন বৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু কোনোবার এত পানি দেখিনি।’
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জে ১০ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ঢলের সঙ্গে কুমিল্লায় এক দিনেই ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বাঁধ ভেঙে ৩৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে ইমিগ্রেশনের সব কার্যক্রম বন্ধ আছে। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারীর বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যায় পানিবন্দী হয়ে আছেন এই তিন উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ। বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, নাজিরহাট, খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়ক। কক্সবাজারের রামুতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন অন্তত ২৩ হাজার মানুষ। ডুবে আছে পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বিস্তীর্ণ এলাকার বসতবাড়ি। শহরের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। লক্ষ্মীপুরেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
বন্যার পানিতে ডুবে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আটজন মারা গেছেন। এর মধ্যে কুমিল্লায় চারজন, কক্সবাজারে দুজন, ফেনীতে একজন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন মারা গেছেন। পানির তোড়ে ভেসে যাওয়া কক্সবাজারের দুজন নিখোঁজ আছেন।
চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। একইভাবে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সিলেটের সঙ্গেও সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।
মোবাইল টাওয়ার অচল

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বন্যাকবলিত জেলাগুলোয় মোবাইল ফোনের ২২ শতাংশ টাওয়ার অচল হয়ে গেছে। জেলা গুলোর ৬ হাজার ৯৮৬টি টাওয়ারের মধ্যে ৫ হাজার ৪৭৬টি সচল আছে। ফেনীর ৪২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং খাগড়াছড়ির ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ টাওয়ার এখন অচল আছে। এসব টাওয়ার সচল করতে কাজ করা হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন দপ্তর বা সংস্থার কর্মকর্তা—কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

অপর দিকে বন্যাদুর্গত এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ফ্রি করার নির্দেশ দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।

 

 

Facebook Comments Box

Posted ১০:৫৬ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৪

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বু বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com