শনিবার ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এ সরকারকে সময় দিচ্ছে বিশ্ব সম্প্রদায়

জাতীয় ডেস্ক   |   বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   27 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

এ সরকারকে সময় দিচ্ছে বিশ্ব সম্প্রদায়

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে রাষ্ট্র সংস্কার করার জন্য সময় দিচ্ছে বিশ্ব সম্প্রদায়। ফলে রাজনীতির বিষয়ে তারা কম গুরুত্ব দিচ্ছে। বড় করে সামনে নিয়ে আসছে সংস্কারের বিষয়টি। সম্প্রতি মার্কিন অর্থ দপ্তরের সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফর নিয়ে এমনটাই মত বিশ্লেষকদের। তাদের মতে, রাজনীতির বদলে সামনে এসেছে সংস্কার ও অর্থনীতি।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, বাংলাদেশকে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিয়ে আসা। ইতোমধ্যে সংস্কারের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন এবং সংবিধান সংস্কার। এ জন্য গঠনও করা হয়েছে পৃথক কমিশন। পাশাপাশি হাতে নেওয়া হয়েছে আর্থিক খাতের সংস্কার।

সার্বিক বিষয়ে সহযোগিতা করতে সম্প্রতি ঢাকা সফর করে গেল মার্কিন অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও উন্নয়নবিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী প্রতিনিধি দল। সফরে ওয়াশিংটনের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশের যে প্রবৃদ্ধি গত কয়েক দশকে ধারাবাহিকভাবে বজায় রেখেছে, সে প্রবৃদ্ধি যাতে অব্যাহত থাকে। সেই সঙ্গে এখানে স্থিতিশীলতা যাতে ফিরে আসে। প্রতিনিধি দল এমন বার্তাই দিয়ে গেছে।

ব্রেন্ট নেইম্যান বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও বাড়াতে এবং গভীর করতে হলে বাংলাদেশের ক্রমাগত স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাঙ্ক্ষিত সংস্কার বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে এবং যে কোনো সহায়তা দিতে প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে আগ্রহী।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ঢাকা-ওয়াশিংটন একত্রে বৈঠক বসেছে, কিন্তু রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করেনি, তা মানতে নারাজ সাবেক ও বর্তমান কূটনীতিকরা। ঢাকা সফরের আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ঘুরে এসেছেন দিল্লি। সেখানে যোগ দিয়েছিলেন ওয়াশিংটন ও দিল্লির মধ্যকার প্রতিরক্ষাবিষয়ক ইন্টারসেশনাল সংলাপে। সেই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় ইস্যুর পাশাপাশি আলোচনায় গুরুত্ব পায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। তাতে ঢাকার পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে। ফলে রাজনীতির বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও ড. ইউনূস সরকারকে সময় দিচ্ছে ওয়াশিংটন।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ওয়াশিংটনের আস্থা রয়েছে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান। তিনি বলেন, এবারের সফরে রাজনীতির বিষয়টি কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল না। বরং সংস্কার ও অর্থনীতিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এর কারণ হিসেবে অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সফল বা ব্যর্থ হয়েছে, তা বিচার করার জন্য এখনই সঠিক সময় নয়। কারণ, সরকারটি মাত্র দায়িত্ব নিয়েছে। তাদের কাজ গোছাতে সময় লাগবে। বিশেষ করে বিচার বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন খাতে যে মানবসম্পদের অভাব তৈরি হয়েছে, তা পূরণ করে সরকারকে সচল করে প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করা এবং নতুন করে তৈরি করতে সময় লাগবে। ফলে সার্বিক দিক থেকে বিশ্ব সম্প্রদায় এ সরকারকে সময় দিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এ অধ্যাপক মনে করিয়ে দেন, ‘তার মানে এই নয়, অনির্দিষ্টকালের জন্য সময় পেয়েছে এ সরকার। সরকার যদি সময়মতো সব কিছু গোছাতে না পারে, তখন এ বিশ্ব সম্প্রদায়ই নির্বাচনসহ বাকি বিষয়গুলোকে সামনে তুলে আনবে।’

এদিকে রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করতেই মার্কিন প্রতিনিধি দলের এ সফর বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, এ প্রতিনিধি দলে শুধু রাজনৈতিক নয়, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ইস্যুতে কথা বলতে পারেন এমন লোকজনও ছিলেন। প্রক্রিয়াধীন থাকায় বাণিজ্যের বিষয়ে অনেক কিছুই হয়তো প্রকাশ করা হয়নি। ভিয়েতনামসহ আফ্রিকার কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়, কিন্তু বাংলাদেশ পায় না, নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া স্থগিত হওয়া জিএসপি সুবিধা ফেরত পাওয়ার বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত সংস্কারসহ অর্থ পাচার চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষতা রয়েছে। দেশটিসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিয়ে ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার করেছে। পাচার অর্থ দেশে ফেরত আনার জন্য বাংলাদেশ থেকে অর্থ কোন দেশ হয়ে কোন দেশের গেছে, তা চিহ্নিত করা জরুরি। আমি অনেকটা নিশ্চিত, এ বিষয়গুলো নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে আলোচনা হয়েছে। অর্থ উদ্ধারের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের কর্মসূচির আওতায় জাতিসংঘ এবং ইউএসএআইডির সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কারিগরি সহায়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার পর টাকা ফেরত আনার বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য বিষয়েও দেশটির বেশ দক্ষতা রয়েছে, যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কাজে আসবে।

ভূরাজনৈতিকভাবে ভারতসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং দ্বিপক্ষীয় সম্মানের ভিত্তিতে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রয়োজন বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, আগে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো থাকলেও, সেটি ছিল অনেকটা পরাধীন বা একপক্ষীয়ভাবে। বাংলাদেশের একটা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে সম্মানের ভিত্তিতে আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক মেরুদণ্ডটাকে শক্ত করে। সরকার পার্শ্ববর্তী দেশকে সাহসের সঙ্গে বলতে পারে, বর্ডারে একটি ১৫ বছরের মেয়ে ক্রস করে গেলে তোমরা গুলি করতে পারবে না। কৌশলগত কারণেই পার্শ্ববর্তী দেশগুলোও সম্পর্কটাকে ভালো রাখতে চায়।

Facebook Comments Box

Posted ৩:৪৬ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com