জাতীয় ডেস্ক | বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট | 93 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
নগরায়ণের গতি যত দ্রুত হচ্ছে ততই শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ হারিয়ে রাতারাতি গড়ে উঠছে উঁচু ভবন, কাটা পড়ছে গাছ, মাটি ঢেকে যাচ্ছে কংক্রিটে। মানুষের সুবিধা ও আরাম-আয়েশের জন্য গড়ে ওঠা বড় বড় নগরগুলো আজ বায়ু, পানি, শব্দসহ নানামুখী দূষণে বিপর্যস্ত। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা তো বায়ুদূষণে পৃথিবীর শীর্ষ দূষিত নগরীগুলোর একটি। নগর কৃর্তপক্ষ পরিবেশ দূষণের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে নানারকম কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। চলছে সচেতনতা কার্যক্রমও। কিন্তু পরিবেশের মারাত্মক দূষণের কারণে মানুষের পাশাপাশি শহরে বসবাসকারী অন্য জীবজন্তুও যে নীরবে ভয়াবহ ক্ষতির শিকার, তা কেউ ভাবছে না।
ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা এবং অসুস্থ ও আহত পথকুকুর উদ্ধারকারী সংগঠন কানান অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার। একটি গবেষণার বরাত দিয়ে চলতি বছরের মে মাসে তাদের এক ব্লগ পোস্টে বলা হয়, মানুষ ছাড়াও দ্রুত নগরায়ণ এবং বিভিন্ন শহরের বেপরোয়া বৃদ্ধি অন্যান্য প্রাণীকেও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। বিশেষ করে শহরে যেসব প্রাণী থাকে এবং পথকুকুর, বিড়াল বা যাদের রাস্তা ছাড়া থাকার কোনো জায়গা নেই তারা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত। রাস্তায় গাড়ির তীব্র হর্ন, কোলাহল এবং উজ্জ্বল আলো কুকুর ও বিড়ালের জন্য অত্যন্ত ভীতিকর এবং বিরক্তিকর। এ ধরনের পরিবেশ রাস্তার কুকুর ও বিড়ালকে অধৈর্য, ভীত ও অস্থির করে তোলে। ফলে অকারণে তারা হিংস্র হয়ে ওঠে। এ ছাড়া কুকুর ও বিড়াল উচ্চ মাত্রার শহুরে বায়ুদূষণের সংস্পর্শে এসে হাঁপানি এবং ব্রঙ্কাইটিসের মতো রোগে ভুগছে।
শহুরে পরিবেশ দূষণ প্রাণীদের মধ্যে কেমন প্রভাব ফেলছে তা মাঠ পর্যায়ে থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন প্রাণী অধিকার কর্মী ও প্য ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রাকিবুল হক এমিল। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় রমনা পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ আশপাশের পার্কগুলোতে প্রচুর প্রাণী আছে। এ ছাড়া ঢাকার আইল্যান্ডগুলোতে প্রচুর গাছ আগে ছিল, এখন যদিও অনেকগুলো উন্নয়ন কাজের জন্য কেটে ফেলা হয়েছে। খেয়াল করলে দেখা যাবে, এসব পার্ক ও আইল্যান্ডের গাছগুলোতে সন্ধ্যার পর প্রচুর পাখি আশ্রয় নেয়। শহরে আগে হলুদ নরম আলোর সোডিয়াম লাইট ছিল। এখন সব জায়গায় উজ্জ্বল আলোর এলইডি লাইট লাগানো হয়েছে। এলইডি লাইটের উজ্জ্বল আলোয় ঢাকার পাখি, ইঁদুর, বেজির মতো প্রাণী বা পতঙ্গের জন্য আর রাত নামে না। শহরের এত উজ্জ্বল আলোয় এখন দেখা যায় যে, পাখিগুলো এখন আর ঘুমায় না। এ সম্পর্কে দেশে সম্ভবত পরিপূর্ণ কোনো গবেষণা হয়নি। আমাদের মাঠের অভিজ্ঞতা বলছে, ঘনবসতি, ফুটপাত দখলসহ নানা কারণে কুকুর-বিড়ালরাও তাদের বাচ্চা নিয়ে সব জায়গায় একটু শান্তিতে বসতে পারছে না। শব্দ এবং কোলাহলের দরুন রাস্তার কুকুর-বিড়ালগুলোর মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকছে। ফলে একটুতেই তারা হিংস্র হয়ে উঠছে। যেহেতু প্রাণীই বাস্তুতন্ত্রে ভূমিকা রাখে, তাই আমাদের নগর কর্তৃপক্ষের উচিত এ বিষয়ে গবেষণা করে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া।
শহরে উঁচু গাছ কমে যাওয়ায় কমে গেছে চিল, ঈগল, প্যাঁচার মতো বড় পাখিও। গবেষকরা বলছেন, বড় গাছ হারিয়ে যাওয়া এবং আলোদূষণের কারণে ঢাকায় পাখির সংখ্যা কমে গেছে। এ ছাড়া উঁচু উঁচু ভবন অনেক পাখির উড়ালপথে বাধার সৃষ্টি করছে। আগে ঢাকায় প্রচুর কাক দেখা যেত। মৃত প্রাণী, নোংরা আবর্জনা খেয়ে শহরটাকে পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব যেন নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল এ প্রাণীটি। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় কীটনাশকের ব্যবহার, খাদ্যে বিষ, গাছ না থাকা, বংশবৃদ্ধিতে প্রভাবসহ নানা কারণে কাক শহর থেকে প্রায় দূরেই সরে গেছে।
বর্তমানে রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গুর যে মারাত্মক প্রকোপ চলছে, এর জন্যও বিভিন্ন প্রাণী কমে যাওয়াকে দায়ী করেন বিজ্ঞানীরা। মশা ও তার লার্ভার প্রাকৃতিক খাদক ব্যাঙ, কচ্ছপ, মাছ, ফড়িং, বাদুড় সংরক্ষণ না করে বরং মশাবাহিত নানা রোগের দাপটে যে হারে কীটনাশকের ব্যবহার বাড়ছে, তাতে প্রমাদ গুনছেন প্রাণীবিজ্ঞানীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আবুল বাশার বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গুর যে প্রকোপ, তার বহু আগে থেকেই আমি এ বিষয়ে বলেছিলাম। মশার লার্ভার স্টেজকে প্রাইমারিভাবে চিহ্নিত ও নিয়ন্ত্রণ যদি না করা হয় তাহলে সারাজীবন নানাভাবে চেষ্টা করেও মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। আমি একজন শিক্ষক হয়ে রাজনৈতিক কথা তো বলতে পারি না; কিন্তু রাজনীতিবিদদের এটা বুঝতে হবে।
সম্প্রতি টাইমস অব ইন্ডিয়ায় এক নিবন্ধে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জীববৈচিত্র্য পর্ষদের চেয়ারম্যান পতঙ্গ বিশারদ অশোক কান্তি স্যান্যাল বলেন, মশা মারতে কীটনাশকের ব্যবহার বড় ক্ষতি করছে পরিবেশের। এর ফলে প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাচ্ছে মশার, যা ভবিষ্যতে মশা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করবে। তার চেয়েও বড় কথা কীটনাশক বাস্তুতন্ত্রের খাদ্য ও খাদক সম্পর্ককেও নষ্ট করছে।
Posted ১:২৬ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩
nykagoj.com | Stuff Reporter