সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নতুন কৌশলে সক্রিয় পুরোনো জঙ্গিরা

অপরাধ ডেস্ক   |   বুধবার, ২৮ জুন ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   75 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

নতুন কৌশলে সক্রিয় পুরোনো জঙ্গিরা

বাংলাদেশের ইতিহাসে গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলাকে জঙ্গিদের চালানো অন্যতম বড় আঘাত বলে বিবেচনা করা হয়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই চালানো ওই হামলায় বিশ্বব্যাপী চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল। এতে ১৭ জন বিদেশি নাগরিক ও ৩ বাংলাদেশি নিহত হন। প্রতিবছর ভয়াবহ এই দিনটি সামনে এলে হামলায় সরাসরি জড়িত নব্য জেএমবি ও দেশে সক্রিয় অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের সর্বশেষ কার্যক্রমের প্রসঙ্গও আসে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশে সক্রিয় জঙ্গিরা নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে। দৃশ্যমান অপারেশনাল কার্যক্রম না থাকলেও গোপনে তারা সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। অনলাইনে সদস্যদের রিক্রুট করছে আনসার আল ইসলাম, জেএমবি, নব্য জেএমবি, জামায়াতুল আনসার হিন্দ আল শারক্বিয়া ও হরকাতুল জিহাদ অব বাংলাদেশ (হুজিবি)।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আপাতত তাদের বড় ধরনের হামলার সক্ষমতা নেই ভাবা হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আত্মতুষ্টিতে থাকার সুযোগ নেই। এবার ঈদের ছুটিতেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকছে বাড়তি নিরাপত্তা। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গুলশানকেন্দ্রিক নিরাপত্তায় থাকছে আলাদা নজর।

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জঙ্গিরা অনলাইন ও অফলাইনে সক্রিয় আছে। তবে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরাও নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছি।

জঙ্গি তৎপরতার ওপর দেড় দশকের বেশি সময় ধরে নজরদারিতে নিয়োজিত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হলি আর্টিসানে হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে উগ্রপন্থিরা। সংগঠনটির অনেক সদস্য অভিযানে নিহত হয়েছে। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়। এর পর অস্তিত্ব সংকটে পড়ে তারা।

২০১৯ সালের নভেম্বরে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ আদালত আলোচিত এই মামলার রায়ে ৭ জঙ্গিকে ফাঁসির আদেশ দেন। এখন উচ্চ আদালতে এই মামলার আসামিপক্ষের জেরা চলছে।

গুলশানে হামলার তিন বছরের মাথায় আবার তারা কিছুটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল গুলিস্তান এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা করা হয়। একই বছর পুলিশ বক্স টার্গেট করে মালিবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। একই আদলে পল্টন ও খামারবাড়ি মোড়ের পুলিশ বক্স থেকে বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। এসব ঘটনায় নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মোহাম্মদ কামরুল হাসান ওরফে মাহাদী হাসান জন ওরফে আবু আব্বাস আল বাঙালির সম্পৃক্ততা পায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাংলাদেশি গোয়েন্দাদের তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি মাহাদী তুরস্কে গ্রেপ্তার হলেও এখনও তাকে দেশে আনা সম্ভব হয়নি।

২০১৬ সালে মাহাদী হাসান শ্রমিক ভিসায় সৌদি আরবে যান। সেখান থেকে অবৈধভাবে প্রবেশ করেন তুরস্কে। সেখান থেকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নেতা আবু আইয়ুব আস সামির সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। তুরস্কে বসেই দীর্ঘ দিন বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন এই জঙ্গি নেতা। বিষয়টি সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের নজরে এলে আনুষ্ঠানিকভাবে তুরস্ক সরকারকে জানানো হয়। ইমো, টেলিগগ্রামসহ বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে বাংলাদেশে তরুণ সমাজকে জঙ্গিবাদের দীক্ষা দিয়ে নিউ জেএমবিতে আসতে উদ্বুদ্ধ করতেন মাহাদী।

দায়িত্বশীল আরেক কর্মকর্তা জানান, নব্য জেএমবির বড় ধরনের হামলা করার দৃশ্যমান সাংগঠনিক শক্তি নেই। তবে তারা পুরোপুরি সাংগঠনিক কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়নি। গোপনে দল গোছানোর চেষ্টা করছে। সহায়ক পরিবেশ পেলে তারা আবার ভয়ঙ্কর সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সক্ষমতা রাখে। তবে দেশে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে বর্তমানে সাংগঠনিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী হলো আনসার আল ইসলাম।

সর্বশেষ গত নভেম্বরে এই সংগঠন তাদের শক্তিমত্তা জানান দেয়। পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে দিন-দুপুরে আদালত চত্বর থেকে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবকে ছিনিয়ে নেয় তাদের সহযোগিরা। ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী। জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক অভিজিৎ রায় হত্যার রায়ে তাদের দণ্ডিত করা হয়।

এ ছিনতাইকাণ্ডে জড়িতদেরও আইনের আওতায় আনা যায়নি। এ ঘটনার পর ছিনিয়ে নেওয়া দুই আসামির খোঁজে মাঠে নামে পুলিশ। ঘোষণা করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট। সবার সহায়তা চেয়ে দুই জঙ্গিকে ধরতে ১০ লাখ টাকা করে পুরস্কারের ঘোষণা দেয় পুলিশ।

আরেকটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আনসার আল ইসলাম ও পুরনো জেএমবি একই প্ল্যাটফর্মে এসেছে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে সিরিজ বোমা হামলা চালিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল পুরনো জেএমবি। ব্লগার-লেখক হত্যায় জড়িত আনসার আল ইসলাম ও সিরিজ বোমা হামলায় সংশ্লিষ্ট জেএমবি নিজেদের আল-কায়দার আদর্শের অনুসারী বলে দাবি করে। আনসার আল ইসলামের বর্তমান কৌশল হলো বিচ্ছিন্নভাবে কোনো ঘটনায় জড়িত হয়ে তারা সাংগঠনিক শক্তি নষ্ট করতে চায় না।

উগ্রবাদ বিশেষজ্ঞদের ধারনা, আনসার আল ইসলামের শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে শায়খুল হাদিস ওসমান গনি ও মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া। অনেক দিন ধরেই তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। তবে এখনো তারা ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে।

সম্প্রতি দেশে সক্রিয় জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে আরেক জঙিগ সংগঠনের নাম সামনে আসে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট- কেএনএফে’র তত্ত্বাবধানে তাদের ক্যাম্পে ওই জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এর আগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক তরুণের মগজ ধোলাই করে কথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের করে নেয় এই সংগঠন।

জঙ্গি কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারিতে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, নব্য জেএমবির চারটি গ্রুপ। এর মধ্যে মূল গ্রুপটির নেতৃত্বে ছিল তামিম চৌধুরী। তার গ্রুপের আড়াইশ’ ওপরে সদস্য ছিল। এছাড়া নব্য জেএমবির নোয়াখালীকেন্দ্রিক একটি গ্রুপ রয়েছে।

ধারনা করা হয়, এই গ্রুপের নেতৃত্বে আবদুল ওয়াহেদ। সে বর্তমানে ইয়েমেন সীমান্তে অবস্থান করছে বলে তথ্য রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। নব্য জেএমবির আরেকটি গ্রুপ হলো সিলেটকেন্দ্রীক। এই গ্রুপ সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নেই। তবে সিলেটকেন্দ্রীক গ্রুপটির এক সদস্য পাতারটেকের অপারেশনে নিহত হয়েছিল। নব্য জেএমবির আরেকটি গ্রুপ হলো শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও খুলনা অঞ্চল ঘিরে। এই গ্রুপের সদস্য মোল্যা ফাইজুল্ল্যাহ পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়।

Facebook Comments Box

Posted ৯:০৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৮ জুন ২০২৩

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com