শনিবার ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মন্তব্য প্রতিবেদন

বাংলাদেশ জুড়ে ব্লকরেইড!রাষ্ট্র যেন মগেরমুল্লুক

মনোয়ারুল ইসলাম   |   রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   147 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

বাংলাদেশ জুড়ে ব্লকরেইড!রাষ্ট্র যেন মগেরমুল্লুক

পুরো বাংলাদেশ জুড়ে ব্লকরেইড চলছে। যেন মগের মুল্লুক।যাকে ইচ্ছে গ্রেফতার করা হচ্ছে।বাসাবাড়িতে কলেজ বিশ্ববিদ্যায়গামী ছেলেমেয়ে থাকলেই তল্লাশী। জিজ্ঞাসাবাদ। তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তার জবাব নেই। সন্তান ঘরে ফিরে না আসা পর্যন্ত বাবা মা’র ঘুম নেই। ফরিয়াদ জানানোর যায়গা নেই। অনেক পরিবার রাত হলেই আতংকে থাকেন। এখনই হয়তো কেউ দরজায় কড়া নাড়বে। বৈষম্য বিরোধী মিছিল আন্দোলনে যাওয়া শিক্ষার্থীদের লাখ লাখ পরিবার আতংকের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। যেন মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন রাত্রি নগরী। জোড়ে কথা বলা যাবে না। এই বুঝি রাজকার বা পাক বাহিনী দরজা কড়া নাড়লো। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর নিজ দেশের আইনশৃংখলা বাহিনী কিংবা সরকারের সর্মথকগোষ্ঠী সে ভূমিকায় নেমেছে। এমনই একটি ভীতির পরিবেশ বিরাজ করছে দেশ জুড়ে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনটি ছিল শান্তিপূর্ন। এই আন্দোলনকে রাজাকারদের আন্দোলন হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর তা ভিন্ন মাত্রায় রুপ নেয়। সরকার ও দলের দ্বিতীয় সবোর্চ্চ ব্যক্তি ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগকে উস্কে দিয়ে বলেন, কোটা আন্দোলন দমাতে ছাত্রলীগই যথেষ্ঠ।বাস! শুরু হয় সাধারন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা। হেলমেঠ মাথায় রক্তের হোলি খেলায় মেতে ওঠে ছাত্রলীগ। পুলিশের প্রশ্রয়ে হায়নায় রুপ নেয়। প্রতিরোধ গড়ে তোলে ছাত্র সমাজ। পিছু হটতে বাধ্য হয় সরকারি বাহিনী। কিন্তু ইতোমধ্যেই ঝরে পড়ে শতশত শিক্ষার্থীর প্রান। জেলা উপজেলায় সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। আওযামী লীগ ও ছাত্রলীগাররা গা ঢাকা দিতে শুরু করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে কার্ফু জারি করা হয়। রাস্তায় নামানো হয় সেনাবহিনী ও বিডিআর। জাতিসংঘের মনোগ্রামসহ সাঁজোয় যান নামানো হয় রাস্তায়। জনগনের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয় সেনাবাহিনীকে। কার্ফুর সুযোগে লাঠিয়াল বাহিনী ও পুলিশ আন্দোলনকারিদের রক্তসোতে ভাাসিয়ে ঘরে তুলে দেয়। আর শুর হয় ব্লকরেইড। চলছে নির্বিচারে গ্রেফতার এখনও।
কাফৃূর্ দিয়ে ও সেনাবহিনী নামিয়েও সরকার নিজেদের নিরাপদ মনে করে নি। ইন্টারনেট, ফেসবুক সহ সকল সোশাল মিডিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্ধ হয়ে যায় টেলিেভিশন ও সকল সংবাদপত্র। গোটা বিশ্ব থেকে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। জনগনের সকল মৌলিক অধিকার করা হয় হরণ। যা ইচ্ছে তাই করা হলো। মুখে যা আসে তা বলা হলো। প্রতিবাদে ভাষাটি কেড়ে নেয়া হলো। স্তব্ধ চারিদিকে। শুনশান নীরবতা। গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অপার মহিমায় নতুনরপে উদ্ভাবিত হয় বাংলাদেশ? ধিক! ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে ফিরে যাওয়া হলো বর্বর যুগে। ওবায়দুল কাদের বললেন, দেখামাত্রই গুলি। তিনি খেলার সুযোগ পেলেন না। বাঁচতে নামালেন বিডিআর আর সেনাবহিনী।

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি চোর ডাকাত নন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের ভোটে নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। রাজনীতি করার অপরাধে তাকে গ্রেফতার করে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। নুরের স্ত্রী মারিয়া নুর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, দু’দফায় রিমান্ডে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের উপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। সেখানে নুরকে ইনজেকশন পুশ করা হয় (স্লো পয়জনিং কি না জানি না) এবং ইলেকট্রিক শক দেয়া হয় বলেও অভিযোগ তার। গত শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ভুক্তভোগী পরিবারের উদ্যোগে ‘নুরুল হক নুরসহ আটকৃতদের মুক্তি, রিমান্ডে নির্যাতন বন্ধ ও চিকিৎসার দাবিতে’ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। নুরের রিমান্ডে নির্যাতনের বর্ণনা করতে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বেশিরভাগ সময়ই সবার সামনে ডুকরে কেঁদে উঠেন মারিয়া নুর। আদালতকে বারবার অনুরোধ করার পরে নুরের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান জানিয়ে মারিয়া নুর বলেন, ও আমাকে বলেছে— রিমান্ডে পাঁচটা দিন ওর উপরে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে।

 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ও বলছিলো— ওর পা দুটো উপরের দিকে ঝুলিয়ে, তারপরে যত নির্যাতন আছে—ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে (স্লো পয়জনিং কি না জানি না), ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়েছে। নির্যাতনের কি যন্ত্রণা, সেটা সহ্য করতে না পেয়ে তিন থেকে চারবার অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো। ওর সঙ্গে কি হয়েছিল তা ও নিজে বলতে পারেনি। মারিয়া নুর বলেন, আমার স্বামীকে অন্তত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেয়া হোক। ও যেন সুচিকিৎসাটা পায়। আর ওর উপর যেন শারীরিক নির্যাতন বন্ধ করা হয়। আমার রাজনীতি করতে হবে না, দরকার নেই। আমাদের খুব চাওয়া—পাওয়ার কিছু নেই। আমার স্বামীকে আমি রাজনীতি করতে দিবো না। শুধু ওকে আমাদের কাছে ফেরত দিন। সভ্য সমাজে রংপুরে সাঈদ হত্যাকান্ড বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। ক্ষমতায় থাকার জিঘাংসা মনুষ্যত্ব ও বিবেক নাই হয়ে গেছে। বাঘের পিঠ থেকে নামার সকল রাস্তাই আজ বন্ধ। আজ বা কাল জাতি এই নাট্যশালার দৃশ্য দেখার প্রতিক্ষায়!
ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক মানবজমিনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দেশব্যাপী প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ মামলা হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় ৭ হাজারের মতো আসামি গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মহানগর থেকে শুরু করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অভিযান চালিয়ে আসামি গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা মহানগর পুলিশও বিভিন্ন এলাকায় ব্লক রেইড দিচ্ছে। এলাকা ভাগ করে গত কয়েকদিন ধরে বিরোধী ঘরানার রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও অন্যান্য শ্রেণি—পেশার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পুলিশের অভিযোগ যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তারা কোটা আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে সহিংসতা ও নাশকতা চালিয়েছে।

প্রতি রাতেই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযানে সেনাবাহিনী ও বিজিবি সহযোগিতা করছে। যেসব এলাকায় সহিংসতা ও নাশকতা বেশি হয়েছে ওইসব এলাকায় বেশি ব্লক রেইড দেয়া হচ্ছে। ব্লক রেইডের আগে গোয়েন্দারা তথ্য সংগ্রহ করছেন। তারপর সুবিধামতো সময়ে রেইড দেয়া হয়। ব্লক রেইডের অংশ হিসাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ দল ওই এলাকার প্রতিটি অলিগলির রাস্তায় অবস্থান নেয়। এলাকাগুলো পুরোপুরি ঘেরাও করা হয়। যাতে করে সন্দেহভাজন ও গোয়েন্দা তথ্যের আসামিরা পালিয়ে যেতে না পারে। পরে বাসায় বাসায় অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করে থানা ও ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়।

 

ব্লক রেইডের সঙ্গে যুক্ত পুলিশ ও ডিবির এমন কর্মকর্তারা বলছেন, সহিংসতার সময় ধারণ করা ভিডিও ও স্টিল ছবি বিশ্লেষণ করে আসামিদের পরিচয়, নাম, মোবাইল নম্বর ও লোকেশন জেনে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। অসাবধানতাবশত নির্দোষ কাউকে আটক করা হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, সহিংসতায় সম্পৃক্ততা আছে এমন ভিডিও ফুটেজ ও ছবি রয়েছে তাদের ছাড় দেয়া হচ্ছে না। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অযথা কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী, ইন্ধনদাতা, অর্থের যোগানদাতা, ককটেল—অস্ত্র ও নাশকতায় অংশ নিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের খোঁজা হচ্ছে।

 

ডিএমপি’র সূত্রগুলো বলছে, এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর যেসব নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা হলেন— বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জহিরউদ্দিন স্বপন, আমান উল্লাহ আমান, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রুহুল কবির রিজভী, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, রশিদুজ্জমান মিল্লাত, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, রফিকুল ইসলাম, আমিনুল হক, নাসিরউদ্দিন আহমেদ অসীম, নিপুণ রায় চৌধুরীসহ আরও অনেকে। জামায়াতের গ্রেপ্তার নেতাদের মধ্যে রয়েছেন— সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, মিয়া গোলাম পরওয়ার, মোবারক হোসাইন। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান (পার্থ), জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র এহসানুল হুদা, দন্ত চিকিৎসক সাখাওয়াত হোসেন ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।

 

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার বলেছেন, ব্লক রেইড চলছে। তবে সেটা আমাদের প্রয়োজনমতো করছি। এটা আমাদের একটা কৌশল। যখন আমরা মনে করছি রেইড দেয়া দরকার তখনই দিচ্ছি। সেটা মধ্যরাতে বা ভোররাতে হতে পারে। প্রয়োজন মনে করলে ২ থেকে ৪ দিন বন্ধ করে আবার শুরু করবো। তিনি বলেন, যারা নাশকতা, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িত তাদের প্রত্যেককেই আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।

 

Facebook Comments Box

Posted ২:৪৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com