বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গি সোহেলের সঙ্গে লাপাত্তা তাঁর স্ত্রীও

অপরাধ ডেস্ক   |   রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২২   |   প্রিন্ট   |   92 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গি সোহেলের সঙ্গে লাপাত্তা তাঁর স্ত্রীও

দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ও আবু সিদ্দিক সোহেলকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার তদন্তে চমকে ওঠার মতো নতুন তথ্য সামনে এসেছে। পুরান ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (সিজেএম) ফটক থেকে ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গি মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আবু সিদ্দিক সোহেলের স্ত্রী ফাতেমা খানম শিখা ও তাঁর আট বছরের এক সন্তান ঘটনার দিন সকালে পুরান ঢাকার আদালত চত্বরে ছিলেন। স্বামীর হাজিরার কথা আগে থেকেই জানতেন তিনি। পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওই দিন থেকেই স্বামীর সঙ্গে শিখা ও তাঁর সন্তান লাপাত্তা। সোহেলের স্ত্রী প্রকৌশলী। ঢাকার একটি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পাস করেছেন শিখা। তদন্ত-সংশ্নিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে গতকাল এসব তথ্য জানা গেছে।

এ ছাড়া বছরের শেষ সময়ে চাঞ্চল্য তৈরি করা এই জঙ্গি ছিনতাইকাণ্ডে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের আস্তানার ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জের বরপা এলাকার কসাইবাড়ি এলাকার মাকসুদুল আলমের বাসার নিচতলায় পরিকল্পনাকারীরা বসবাস করতেন। চাকরিজীবী সেজে চার মাস ওই বাসার রুম ভাড়া নিয়ে থাকতেন তাঁরা। গত ৩০ নভেম্বর ছিনতাই অপারেশনের কয়েকদিন আগে ম্যানেজারকে না জানিয়ে বাসা ছেড়ে পালিয়ে যান জঙ্গিরা। ওই বাসায় একাধিক মিটিংও হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ছিনতাইকাণ্ডের কমান্ডার আয়মান ওরফে মশিউর রহমান। এখন পর্যন্ত তদন্ত-সংশ্নিষ্টদের কাছে যে তথ্য এসেছে তাতে দেখা গেছে, দুই সহযোগীকে ছিনিয়ে নেওয়ার পুরো পরিকল্পাটির সমন্বয় করেন আয়মান।

ছিনতাইকাণ্ডে ব্যবহূত মোটরসাইকেল নারায়ণগঞ্জের কসাইবাড়ির ওই বাসায় রাখা হয়েছিল। এরই মধ্যে সেই বাসায় তল্লাশি করেছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট ও র‌্যাবের গোয়েন্দারা। জঙ্গিদের ব্যবহূত বালিশ-কাঁথা, গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডার ছাড় আর কিছু পাওয়া যায়নি। বাসাটি আলামতস্থল হিসেবে এখন তালাবদ্ধ করেছে পুলিশ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিটিটিসির প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নারায়ণগঞ্জের বরপার আস্তানার খোঁজ আমরা পেয়েছি। জঙ্গিরা সেখান থেকে পালিয়েছেন। পলাতক দুই জঙ্গির সন্ধানে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করেছি। এ ছাড়া জঙ্গি সোহেলের স্ত্রীরও খোঁজে নানামুখী তৎপরতা চলছে।

এ ব্যাপারে মকসুদুলের বাড়ির ম্যানেজার বোরহান উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, চার মাস আগে এক ব্যক্তি এসে মাসে ৩ হাজার টাকায় একটি রুম ভাড়া নিয়েছিলেন। তিন বন্ধু মিলে থাকার কথা জানান। কিছুদিন পর তিন বন্ধু বাসায় বসবাস শুরু করেন। তিনজনের দাড়ি ছিল। মোটরসাইকেলে তাঁরা চলাফেরা করতেন। তিনজনই ঢাকায় চাকরি করেন বলে জানিয়েছিলেন। অধিকাংশ দিন সকালে বেরিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতেন তাঁরা। নভেম্বর মাস পর্যন্ত তাঁরা বাসায় থাকবেন বলে আগেই জানিয়েছিলেন। গত ১২ নভেম্বর কাউকে না জানিয়ে তালাবদ্ধ করে তিনজনই চলে যান। প্রথম ভেবেছিলাম হয়তো কোনো কাজে আটকা পড়ায় আসছেন না। কয়েকদিন যাওয়ার বুঝতে পারি তাঁরা পালিয়েছেন। মাসিক ভাড়া ৩ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। তাঁরা যাওয়ার আগে ভাড়াও পরিশোধ করেননি।

বোরহান উদ্দিন আরও বলেন, ভাড়া নেওয়ার সময় কোনো এনআইডি রাখেনি এটাই ভুল করেছি। ঢাকায় জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর হঠাৎ পুলিশ ও র‌্যাবের লোকজন বাসায় এসে খোঁজ নেয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যাতে ওই রুমে আপাতত কাউকে ভাড়াটিয়া হিসেবে ওঠানো না হয়। ওই ঘটনার পর বাসার সামনে সিসিটিভি লাগানো হয়েছে।

তদন্তের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গি সোহেলের স্ত্রী শিখা ও তাঁর সন্তান ৩০ নভেম্বর পুরান ঢাকার আদালত চত্বরে ছিলেন এ ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পর তাঁরাও বিস্মিত হন। পুরান ঢাকার নারিন্দায় শিখার নানাবাড়ি, গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। শিখার ভাই সাইমনও দুর্ধর্ষ জঙ্গি। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় সাজার পর সাইমন এখন কারাবন্দি। স্বামীর হাজিরা উপলক্ষে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় এসেছিলেন শিখা। পরিকল্পনা অনুযায়ী শিখাকেও গোপন আস্তানায় রাখা হয়েছে। পুলিশ এখন পর্যন্ত ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গি সোহেল, শামীম ও শিখার হদিস পায়নি। তবে তদন্তে উঠে এসেছে, ছিনতাইকাণ্ডে অন্তত চারটি মোটরসাইকেল ব্যবহূত হয়। এর মধ্যে তিনটি মোটরসাইকেল পুলিশ জব্দ করেছে। ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ধাপে ধাপে এসব মোটরসাইকেল বিক্রয় ডটকম থেকে কেনা হয়। ঘটনার দিন দুই জঙ্গিকে একটি মোটরসাইকেলে আদালত চত্বর থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত নেওয়া হয়। সেখানে মোটরসাইকেল থেকে দুই জঙ্গিকে নামিয়ে তাঁদের আরেক সহযোগীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর পর হেঁটে তাঁরা পালান। আর মোটরসাইকেলের চালকও সেখানে বদল হয়েছিল।

তদন্ত-সংশ্নিষ্ট একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, ছিনতাইয়ের টার্গেট ছিল চারজনকে। তাঁদের মধ্যে সবুর ও আরাফাতকে ছিনিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাঁরাও মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি। অন্তত পাঁচ-ছয় মাস আগে পরিকল্পনা হয়। আনসার আল ইসলামের ১০-১২ জনের একটি গ্রুপ ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় জড়িত। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সংগঠনটির নতুন সদস্য। ঘটনার দিন সকালে কাশিমপুর কারাগার থেকে মোহাম্মদপুর থানার সন্ত্রাসবিরোধী মামলার ১২ আসামিকে প্রিজনভ্যানে করে আদালতের হাজতখানায় আনা হয়। সেখান থেকে তাঁদের সকাল সাড়ে ১০টায় সিজেএম আদালত ভবনের আটতলায় সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয়। শুনানি শেষে এজলাস থেকে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে ১২ জনের মধ্যে আটজনকে ফের কোর্ট-হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের ওপর হামলা ও পিপার স্প্রে ছুড়ে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের ঘিরে পুলিশের ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। একাধিক পুলিশ সদস্যকে সাসপেন্ড ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

Facebook Comments Box

Posted ১২:২৮ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২২

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com