অপরাধ ডেস্ক | শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট | 80 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
সরকার অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অশ্নীলতা বন্ধে একের পর এক পর্নো সাইট বন্ধ করলেও চক্রগুলো কৌশল পাল্টাচ্ছে প্রতিনিয়ত। অপরাধ কার্যক্রম চালাতে প্রযুক্তির নতুন নতুন ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার এর মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া টাকা পাচার হচ্ছে বিদেশে। লাইভ ভিডিও প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অন্তত ১৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এমন একটি চক্রের প্রধানকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তদন্ত সংশ্নিষ্টরা বলছেন, দুই বছর ধরে ভিডিও লাইভ প্ল্যাটফর্ম ‘টপ ক্লাস এন্টারটেইনমেন্টে’র মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ‘ড্রিম লাইভ’ পরিচালনা করে আসছিলেন চক্রের প্রধান আবু মুসা ইমরান আহমেদ সানি। এই প্ল্যাটফর্মে ভার্চুয়াল ডায়মন্ড বা ভার্চুয়াল গেম কয়েন বিক্রি করতে সানি সারাদেশে ৩০০ এজেন্ট নিয়োগ দিয়েছেন। অবৈধভাবে গেম কয়েন বিক্রি থেকে পাওয়া টাকা বিভিন্ন কৌশলে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। সানির সঙ্গে জড়িত রয়েছে ভারতীয় এক নাগরিক। ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ গত ১৩ ডিসেম্বর রমনা থানায় সানির বিরুদ্ধে মামলা করে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে সানির চার সহযোগী আবু শামা, শায়লা আক্তার, শাহ আরমান ও মো. সেলিমকে।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, সফটওয়্যার কোম্পানির নামে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে সানি ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের ব্যবসা পেতেছেন। ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের একটি অ্যাপ্লিকেশন হলো ড্রিম লাইভ। ড্রিম লাইভে যারা নিজেদের প্রদর্শন করে, তাদের বলা হয় ইনফ্লুয়েন্সার। তারা লাইভে এসে দর্শকদের সঙ্গে ভিডিও চ্যাটে কথা বলে। এ ছাড়া অশ্নীল গল্প ও ছবি শেয়ার করা হয়। তারা সানি এবং তাঁর এজেন্সির হয়ে কাজ করে। সানির চক্রে ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে অন্তত দেড় হাজার তরুণী রয়েছে। এই ভিডিও চ্যাট ও জুয়া খেলার জন্য প্রয়োজন হয় ভার্চুয়াল কয়েন বা ডায়মন্ডের। এর আগে সেখানে ভার্চুয়াল কয়েনের বিনিময়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয় দর্শককে। এসব কয়েন টাকার বিনিময়ে সানির নিয়োগ করা এজেন্সির মাধ্যমে সংগ্রহ করে অ্যাকাউন্টধারীরা। এ জন্য সারাদেশে ৩০০ এজেন্ট নিয়োগ দিয়েছেন সানি। বিকাশের মাধ্যমে টাকা নিয়ে ভার্চুয়াল কয়েন দেওয়া হয় গ্রাহককে। দর্শকরা ইনফ্লুয়েন্সারদের মোহে পড়ে ভার্চুয়াল কয়েন উপহার দেয়। ওই কয়েন পরবর্তী সময়ে ইনফ্লুয়েন্সাররা ড্রিম লাইভ কর্তৃপক্ষের কাছে ফের বিক্রি করতে পারে।
সানির প্ল্যাটফর্মটিতে পিকে নামের একটি গেমের ব্যবস্থাও রয়েছে। গেমটিতে দু’জন লাইভ হোস্ট নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দর্শকদের আনন্দ দেয়। সেখানেও কয়েন উপহার দিতে হয়। এ ছাড়া প্ল্যাটফর্মটিতে অনলাইন জুয়া খেলা হয়। শুধু সানির নির্বাচিত সদস্যরাই সেখানে জুয়া খেলতে পারে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, সানি প্রতিমাসে অন্তত ১০ কোটি টাকার ভার্চুয়াল ডায়মন্ড বা ভার্চুয়াল গেম কয়েন বিক্রি করেছেন। কয়েন বিক্রিকে উৎসাহিত করতে তিনি প্রতি মাসে অন্তত এক কোটি টাকা বেতন ও উপহার দিতেন সহযোগীদের।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কয়েন বিক্রির টাকার ২০ শতাংশ কমিশন নিজের কাছে রেখে এজেন্টরা সানির বিকাশের মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেয়। গত তিন মাসে তাঁর বিকাশের মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টে ৬৩ কোটি টাকা ঢুকেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্নিষ্টরা। বিকাশের মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টের টাকা ইস্টার্ন ব্যাংক এবং সিটি ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্টে চলে যায়। এই টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। ইস্টার্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট সানি এবং ভারতীয় এক নাগরিকের যৌথ নামে করা।
সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, সানির সঙ্গে বিদেশি এক নাগরিক জড়িত রয়েছেন। ইস্টার্ন ব্যাংকে তাঁদের একটি যৌথ অ্যাকাউন্ট আছে। সানির বিকাশের মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকা গেছে ওই অ্যাকাউন্টসহ অপর একটি অ্যাকাউন্টে। ব্যাংকের ট্রানজেকশনগুলো নীতিমালার মধ্যে করা হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।
Posted ১২:৩৬ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২২
nykagoj.com | Stuff Reporter