সোমবার ১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালু নিয়ে আলো আঁধারের খেলা

ডেস্ক রিপোর্ট   |   শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   315 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালু নিয়ে আলো আঁধারের খেলা
ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালু করার জন্য ইন্টারন্যাশনাল এভিয়েশন সেফটি অ্যাসেসমেন্ট (আইএএসএ) বা আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল নিরাপত্তা মূল্যায়নের জন্য মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে (এফএএ) এখনো অনুরোধ করেনি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। সম্প্রতি  ঢাকা সফর করে যাওয়া এফএএ অ্যাটাশে ড্যানিয়েল জ্যাকবকে উদ্ধৃত করে মার্কিন দূতাবাস এ তথ্য জানিয়েছে।

মার্কিন দূতাবাস জানায়, ড্যানিয়েল জ্যাকব গত ৯ থেকে ১২ জুন ঢাকা সফর করেন। সফরে তিনি বেবিচক চেয়ারম্যান এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এক বিজ্ঞপ্তিতে মার্কিন দূতাবাস জানায়, বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় সরাসরি ফ্লাইটের লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা নিয়ে কথা হয়েছে বৈঠকে।

আকাশপথে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সঙ্গে যুক্ত হতে অনেক দিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ঢাকা। কিন্তু বেসামরিক বেবিচককে মার্কিন কর্তৃপক্ষ ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত না করায় এ চেষ্টা এখনো সফলতার মুখ দেখেনি। আমেরিকায় ফ্লাইট শুরুর পূর্বশর্তই হলো বেবিচককে ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত হতে হবে। এরপর বাংলাদেশের বিমান সংস্থাগুলো ফ্লাইট শুরুর জন্য স্লট পেতে আবেদন করতে পারবে। তবে দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থার তালিকায় এখনো বেবিচকের অবস্থান ক্যাটাগরি-২।

বিবৃতিতে জ্যাকব বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্যাটাগরি-১ নিরাপত্তা রেটিং অর্জন করতে হলে এফএএর ইন্টারন্যাশনাল এভিয়েশন সেফটি অ্যাসেসমেন্ট (আইএএসএ) বা আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল নিরাপত্তা মূল্যায়নে উত্তীর্ণ হতে হবে। ক্যাটাগরি-১ রেটিং নিশ্চিত করবে যে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইসিএও) গুরুত্বপূর্ণ মান এবং প্রস্তাবিত অনুশীলন মেনে চলে।’

ড্যানিয়েল জ্যাকব বলেন, ‘বেবিচকের অনুরোধে এফএএ ক্যাটাগরি-১ রেটিংয়ের জন্য আইএএসএ পরিচালনা করবে। বেবিচক এখনো আইএএসএ বা আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল নিরাপত্তা মূল্যায়নের জন্য এফএএকে অনুরোধ করেনি।’

একসময় নিয়মিত ঢাকা থেকে নিউইয়র্কে ফ্লাইট পরিচালনা করত বিমান। ২০০৬ সালে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশকে ক্যাটাগরি-২ এ অবনমন করে এফএএ। এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান সে সময় ব্যবহার করত মার্কিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাকডোনাল্ড অ্যান্ড ডগলাসের তৈরি ডিসি-১০ মডেলের উড়োজাহাজ।

ম্যাকডোনাল্ড অ্যান্ড ডগলাস তাদের সর্বশেষ ডিসি-১০ উড়োজাহাজ তৈরি করে ১৯৮৮ সালে। এরপর এটি মার্কিন আরেক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়। এফএএ আমেরিকায় ২০ বছরের পুরোনো উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয় না।

মার্কিন কর্তৃপক্ষের তালিকায় বাংলাদেশের অবনমনের ফলে সে দেশে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ হারায় বিমান। ক্যাটাগরি-১ এর মর্যাদা পুনরুদ্ধারে বেশ কয়েক বছর ধরেই চেষ্টা চলছে। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের কাছ থেকে ১২টি নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজও কিনেছে বিমান। নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের। এখন নতুন করে ইউরোপীয় নির্মাতা এয়ারবাসের কাছ থেকে যে নতুন এ-৩৫০ মডেলের উড়োজাহাজ কেনার কথা চলছে, সেটিও এই নিউইয়র্ক ফ্লাইটকে মাথায় রেখেই।

এর মধ্যে এফএএ কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বাংলাদেশ সফর করেছেন। নিরীক্ষা করেছেন বিমান ও বেবিচককে। কিন্তু সেসব নিরীক্ষায় সংস্থাটি কী পেয়েছে, তা প্রকাশ্যে জানানো হয়নি। অবশ্য বেবিচকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ইতিবাচক তথ্য পাওয়ার কথা বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে ড্যানিয়েল জ্যাকব বলেন, ‘বেবিচক যদি ক্যাটাগরি-১ রেটিং অর্জন করে, তার পরের ধাপে আমেরিকার ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (টিএসএ) একটি পৃথক মূল্যায়ন এবং পরিদর্শন পরিচালনা করবে। এই মূল্যায়ন নির্ধারণ করবে যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস আমেরিকা-বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইটের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার শর্ত পূরণ করে কি না।’

ড্যানিয়েল জ্যাকব দাবি করেন, ‘কয়েক বছর ধরে এফএএ এবং টিএসএ বেবিচক এবং বিমানকে আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা অর্জনের জন্য বিনামূল্যে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে আসছে। মার্কিন সরকার শাহজালাল বিমানবন্দরে বিনামূল্যে স্ক্রিনিং সরঞ্জাম সরবরাহ করছে এবং বাংলাদেশি বিমান কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করছে, যাতে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মান পূরণ করতে পারে।’

বিমান বোয়িংয়ের কাছ থেকে যে উড়োজাহাজগুলো কিনেছে, তার মধ্যে আছে দুটি বোয়িং সেভেন থ্রি সেভেন, চারটি বোয়িং ট্রিপল সেভেন, আর ছয়টি বোয়িং সেভেন এইট সেভেন ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ। এর মধ্যে ট্রিপল সেভেন ও ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজগুলো টানা ১৬ ঘণ্টার বেশি উড়তে সক্ষম। নিউইয়র্কে ফ্লাইট শুরুর অনুমতি পাওয়া যাবে এ আশা করেই এই উড়োজাহাজগুলো কেনা হয়েছিল।

অবশ্য এর মধ্যে ২০১৪ সালে একবার ভাড়ায় আনা উড়োজাহাজ দিয়ে নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল বিমান। বিমানের সেই সময়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেভিন স্টিল এক সংবাদ সম্মেলনে টিকিট বিক্রির ঘোষণাও দিয়েছিলেন। তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৩ সালের ১৭ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিমান চলাচলে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। তারপর অবশ্য সে উদ্যোগ আর এগোয়নি।

অবশ্য বিমান নিউইয়র্কে যেতে না পারলেও কানাডার টরন্টোতে ফ্লাইট শুরুর মাধ্যমে উত্তর আমেরিকার সঙ্গে আকাশপথে এরই মধ্যে যুক্ত হয়েছে। রুটটি বর্তমানে বিমানের লাভজনক রুটগুলোর একটি।

Facebook Comments Box

Posted ১:৫২ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com