সোমবার ১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

হাসিনার করা আইনেই হাসিনাকে ফেরত

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   93 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

হাসিনার করা আইনেই হাসিনাকে ফেরত

*হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
* মাসের মধ্যে ফেরত আনার চেষ্টা—পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
*হাসিনা ভারতেই থাকবেন—ভারতের পররাষ্ট্র মুখপাত্র

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)। জুলাই—আগস্টের ছাত্র আন্দোলনকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তার বিরুদ্ধে এই আদেশ। ট্রাইব্যুনালের নিদেশ মোতাবেক, আগামী ১৮ই নভেম্বরের মধ্যে শেখ হাসিনাকে ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজির করার জন্যে আইন—শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রথম দিনেই এই আদেশ দেন তিন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি অপর একটি অভিযোগের কারণে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ আরও ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের সঙ্গে থাকা বাংলাদেশের ‘চুক্তি ফলো করা হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। দুই দিনের সফরে রাজশাহীতে গিয়ে আজ শনিবার দুপুরে বিজিবির রাজশাহী সদর দপ্তর পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। বন্দি বিনিময়ের এ চুক্তিটি ভারতের সাথে হাসিনাই করেছিলেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছেন, আসামীদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে আইন—শৃঙ্খলা বাহিনী আসামীদের গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করার চেষ্টা করবেন। এই ক্ষেত্রে আইন—শৃঙ্খলা বাহিনী ইন্টারপোল কিংবা অন্যান্য আন্তর্জাতিক এজেন্সির সহায়তা নিতে পারেন। তারপরও তারা আসামীদের গ্রেফতারে সমর্থ না হলে কী কারণে সম্ভব হচ্ছে তা জানিয়ে ট্রাইব্যুনালে একটি প্রতিবেদন পেশ করবেন। প্রতিবেদনে যদি এমন উল্লেখ থাকে যে, আসামীরা বিদেশে থাকার কারণে তাদের গ্রেফতার সম্ভব হচ্ছে না তবে প্রসিকিউশনের তরফে ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রকে আসামীদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণের জন্যে আদেশ দেবার আবেদন করা হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল আসামীদের ফিরিয়ে আনার জন্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিতে পারে। তখন আইন মন্ত্রণালয়ের চিঠির আলোকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতকে অনুরোধ জানাতে পারে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর জন্য। এই প্রক্রিয়া আগামী এক মাসে পুলিশের প্রচেষ্ঠা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সম্পন্ন হবার সম্ভাবনা কম।

এখন থেকে দুই মাসের বেশি আগে ছাত্র—জনতার অভ্যূত্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যূত হন। তিনি গত ৫ আগস্ট সামরিক বিমানে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তি সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর শেখ হাসিনাসহ তার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সহযোগিদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ছাত্র—জনতার আন্দোলনে প্রায় হাজারখানেক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। এই হত্যাযজ্ঞের দায়ে তারা অভিযুক্ত হচ্ছেন।

শেখ হাসিনার আমলে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের বিচারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিলো। এখন সেই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা ও তার সহযোগিদের বিচার করতে গিয়ে ট্রাইব্যুনাল পুর্নগঠনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু হাইকোর্টের অধিকাংশ বিচারপতি ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করলে নতুন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরফে ‘ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার সরকারের সহযোগি’ ১২ জন বিচারপতিকে অপসারণের দাবি তোলা হয়। ছাত্ররা উচ্চ আদালত প্রাঙ্গন ঘেরাও করলে ওই সকল ১২ বিচারপতিকে আদালতের কাজ থেকে বিরত রাখা হয়। উচ্চ আদালতের বেঞ্চগুলি পুর্নগঠন করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আগামী রোববারের মধ্যে ‘ফ্যাসিস্টেও দোসর’ ১২ বিচারপতিকে অপসারণের জন্যে আল্টমেটাম দিয়েছে।

বিচারপতি মোঃ গোলাম মর্তোজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট ট্রাইব্যুনাল পুর্নগঠন করা হয়। শেখ হাসিনার আমলে আসামী পক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে এবার গঠন করা হয়েছে প্রসিকিউশন। শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের কাছ থেকে এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তারা তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা আইনি মোকাবেলায় কোনও আইনজীবী নিয়োগ দেবেন কিনা সেটিও এখনও স্পষ্ট নয়। আসামী পক্ষ যদি আইনজীবী নিয়োগ না দেয় তবে সরকার আসামীদের জন্য আইনজীবী নিযুক্ত করে মামলা পরিচালনা করবে।

এদিকে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, শেখ হাসিনা ভারতে আছেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তাকে আগামী এক মাসের সময়সীমার মধ্যে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে তিনি চেষ্টা চালাবেন। তবে এই চেষ্টা কী প্রক্রিয়ায় চালানো হবে সে সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রত্যার্পণ চুক্তি আছে। এই চুক্তির আওতায় তাকে ফেরানো সম্ভব কিনা সেটি নির্ভর করবে ভারতের ইচ্ছার ওপর। ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অবশ্য নিশ্চিত করেছেন যে, শেখ হাসিনা ভারতেই আছেন। বাংলাদেশের পরিস্থিতির বিষয়ে ভারত অবগত আছে। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা নিরাপত্তাজনিত কারণে ভারতে আশ্রিত আছেন। তাকে ফেরত দেওয়া হবে কিনা তা মুখপাত্র স্পষ্ট করেননি।

শেখ হাসিনা ছাড়াও তার বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার মন্ত্রী পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, দীপু মনি, আ ক ম মোজাম্মেল হক, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, শেখ সেলিম, ব্যারিষ্টার ফজলে নূও তাপস, শেখ ফজলে শামস পরশ, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ, পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার, প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক র‌্যাব ডিজি হারুন অর রশিদ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, শেখ হাসিনার সাবেক সামরিক উপদেষ্টা তারেক আহমদ সিদ্দিক, সাবেক বিচারপতি শাসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ড. জাফর ইকবাল, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের নাম ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলায় আসামীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছেন।
আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা—কমীর্ এখন পলাতক। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত কেউই প্রকাশ্যে নেই। অনেকে বিভিন্নভাবে দেশত্যাগ করেছেন। অনেকে আবার কারাগারে আছেন। সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ও আব্দুল মান্নান ছাড়া উচ্চ পর্যায়ে তেমন কেউ জামিন পাননি। বরং প্রতিদিনই নতুন নতুন অনেকে গ্রেফতার হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে ট্রাইব্যুনালে মামলা আওয়ামী লীগের তরফে কীভাবে মোকাবেলা হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

 

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতেই আছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল আজ বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, নিরাপত্তার কারণে খুব অল্প সময়ের নোটিশে শেখ হাসিনা ভারতে চলে এসেছিলেন। এখনো আছেন।

 

শেখ হাসিনা ভারতে আছেন, নাকি অন্য দেশে চলে গেছেন, তা নিয়ে কিছুদিন ধরেই জল্পনা চলছে। বাংলাদেশের কোনো কোনো গণমাধ্যমে কখনো লেখা হয়, তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলে গেছেন। আবার বলা হয়, ভারত সরকার তাঁর ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ ইস্যু করেছে। এ বিষয়ে সত্যটা কী, শেখ হাসিনা ভারতে আছেন কি না, সাংবাদিকেরা সেই প্রশ্ন করেন ব্রিফিংয়ে।

 

জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভারতে চলে আসার বিষয়ে আগেই জানানো হয়েছিল, নিরাপত্তার কারণে অল্প সময়ের নোটিশে তিনি ভারতে চলে এসেছিলেন। এখনো আছেন, থাকবেন (কন্টিনিউজ টু বি)।’

 

Facebook Comments Box

Posted ৪:০৬ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com