অর্থনীতি ডেস্ক | মঙ্গলবার, ০১ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট | 76 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফায় মিশ্র ধারা দেখা গেছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৫ ব্যাংকের মধ্যে ন্যাশনাল এবং আইসিবি ইসলামিক ছাড়া বাকি সবগুলো মুনাফা করেছে। মুনাফায় থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে নিট মুনাফা বেড়েছে ২২টির, কমেছে ১১টির। তবে অন্তত ১০ শতাংশ মুনাফা বেড়েছে ১১টি ব্যাংকের। আবার সমান সংখ্যক ব্যাংকের মুনাফা অন্তত ১০ শতাংশ কমেছে।
মুনাফা বৃদ্ধি পাওয়া কিছু ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সুদ আয় বৃদ্ধির বিপরীতে সুদ ব্যয় বেড়েছে তুলনামূলক বেশি। তার পরও মুনাফা বেড়েছে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ থেকে আয় বৃদ্ধি এবং প্রভিশন ও কর ব্যয় কমে যাওয়ায়।
বর্তমানে দেশে ৬১ দেশি-বিদেশি ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৫টি। গতকাল সোমবার পর্যন্ত তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর প্রকাশিত অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় লোকসান বা মুনাফা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য মিলেছে।
লোকসানি দুই ব্যাংক ছাড়া তালিকাভুক্ত বাকি সব ব্যাংকের জানুয়ারি-জুন সময়ে নিট ৪ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা মুনাফা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। ন্যাশনাল ব্যাংকের লোকসান গত বছরের ১৭৪ কোটি টাকা থেকে বেড়ে এ বছর প্রায় ৬২৮ কোটি টাকা হয়েছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, যেসব ব্যাংক শেয়ারপ্রতি কমপক্ষে ১ টাকা আয় বা ইপিএস অর্জন করেছে, সেগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ৪৪ শতাংশ মুনাফা বৃদ্ধি নিয়ে শীর্ষে ব্যাংক এশিয়া। গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ৮৮ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২ টাকা। নিট প্রায় ৩৩৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে এ ব্যাংক।
নিট মুনাফায় প্রায় ৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ব্যাংক এশিয়ার পরের অবস্থানে ব্র্যাক ব্যাংক, যার ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৯৩ পয়সা। গত বছর ইপিএস ছিল ১ টাকা ৩৭ পয়সা।
এ তালিকায় পরের অবস্থানে থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ইপিএস ৩২ শতাংশ বেড়ে ১ টাকা ১৫ পয়সায়, প্রাইম ব্যাংকের ২১ শতাংশ বেড়ে ১ টাকা ৯৩ পয়সায়, পূবালী ব্যাংকের প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে ২ টাকা ৭১ পয়সায়, যমুনা ব্যাংকের প্রায় ১৩ শতাংশ বেড়ে ৩ টাকা ১৬ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া সিটি, প্রিমিয়ার, এক্সিম, শাহ্জালাল, ইস্টার্ন, এনসিসি এবং ইসলামী ব্যাংকের ইপিএসও এক টাকার বেশি প্রবৃদ্ধি ছিল।
মুনাফায় বড় প্রবৃদ্ধির কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যাংক এশিয়ার সুদ আয় গত বছরের তুলনায় সোয়া ১২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। একই সময় সুদ ব্যয় ২১ শতাংশ বেড়ে ছাড়িয়েছে ৮৪৬ কোটি টাকা। তা সত্ত্বেও মুনাফা বেড়েছে। কারণ বিনিয়োগ আয় ২২২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৫০৮ কোটি টাকা হয়েছে এবং নিট প্রভিশন ২৩৭ কোটি টাকা থেকে কমে ১২২ কোটি ৫৬ লাখ টাকায় নেমেছে।
একই চিত্র দেখা গেছে প্রাইম ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনেও। এ ব্যাংকটির সুদ আয় ৩৪ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ১৫১ কোটি টাকা হলেও সুদ ব্যয় পৌনে ৫৯ শতাংশ বেড়ে ৬৯৬ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তবে প্রভিশন ১০২ কোটি টাকা থেকে কমে ৬৭ কোটি টাকায় নামা এবং কর ব্যয় প্রায় ২৭ কোটি টাকা কমে ১৪৩ কোটি টাকা হওয়ায় নিট মুনাফা বেড়েছে।
ইপিএস ১ টাকার বেশি; কিন্তু মুনাফায় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল সাউথইস্ট (-৩৯%), মার্কেন্টাইল (-৩৯%) ব্যাংকের। মিউচুয়াল ট্রাস্ট, উত্তরা, ট্রাস্ট বাংকের ১৭-১৯ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। তুলনামূলক কম ছিল ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের (-৩.৬০%)।
সাউথইস্ট ব্যাংকের মুনাফা কমার কারণ নিট সুদ আয় ১৯০ কোটি টাকা থেকে কমে ১০৪ কোটিরও নিচে নেমেছে। এতে মোট পরিচালন আয় ১০৯ কোটি টাকা কমে ৭৬৯ কোটি টাকার নিচে নেমেছে। আবার প্রভিশন ১৪৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১৬৩ কোটি টাকা হয়েছে।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মুনাফা কমলেও ইপিএসের দিক থেকে শীর্ষে ছিল এ ব্যাংক। তাদের ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ২১ পয়সা, যা গত বছর ছিল ৩ টাকা ৩৩ পয়সা। ইপিএসের দিক থেকে শীর্ষে থাকা অন্য উল্লেখযোগ্য ব্যাংকগুলো হলো– যমুনা (৩.১৬ টাকা), ব্যাংক এশিয়া (২.৮৮ টাকা), পূবালী (২.৭১ টাকা), শাহজালাল (২.৪৫ টাকা), ইসলামী (২.১৩ টাকা), ইস্টার্ন (২.০১ টাকা), সিটি ব্যাংক (১.৯৭ টাকা), ব্র্যাক (১.৯৩ টাকা), প্রাইম (১.৯৩ টাকা)।
শেয়ারপ্রতি ১ টাকার কম মুনাফা অর্জনকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে মুনাফায় সর্বাধিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংকের। ব্যাংকটির ইপিএস ১৪০ শতাংশ বেড়ে ৩৬ পয়সা হয়েছে। ৪৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে এর পরের অবস্থানে রয়েছে গ্লোবাল ইসলামী। ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাউথবাংলার। আইএফআইসি ব্যাংকের মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশ।
বিপরীতে এমন ব্যাংকগুলোর মধ্যে ওয়ান ব্যাংকের ইপিএস ৪৪ শতাংশ কমে ৫২ পয়সায় নেমেছে। এ ছাড়া আল-আরাফার ইপিএস ৩২ শতাংশ কমে ৭৭ পয়সায়, এনআরবিসির ইপিএস ৩০ শতাংশ কমে ৫১ পয়সায়, ইউসিবির ইপিএস ২০ শতাংশ কমে ৬৮ পয়সায় এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ইপিএস প্রায় ৭ শতাংশ কমে ১৪ পয়সায় নেমেছে।
টাকার অঙ্কে বছরের প্রথম ছয় মাসে সর্বাধিক ৩৪৩ কোটি টাকা মুনাফা করেছে ইসলামী ব্যাংক। এর পরের অবস্থানে ছিল ব্যাংক এশিয়া (৩৩৬ কোটি), ব্র্যাক (৩১০ কোটি)। ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে পূবালী, শাহ্জালাল, যমুনা, ইস্টার্ন, সিটি, ডাচ্-বাংলা এবং প্রাইম।
Posted ৪:১৬ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০১ আগস্ট ২০২৩
nykagoj.com | Stuff Reporter