শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তৈরি পোশাকের চাহিদায় ভাটা, বাড়ছে উদ্বেগ

অর্থনীতি ডেস্ক   |   সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   278 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

তৈরি পোশাকের চাহিদায় ভাটা, বাড়ছে উদ্বেগ

ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদায় এখন ভাটার টান। গত আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমেছে ৩ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) রপ্তানি বাড়লেও কমে গেছে প্রবৃদ্ধি। দুই বাজারে নতুন রপ্তানি আদেশের গতিও তেমন নেই। আগামীতে রপ্তানি আদেশ বাড়ার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। এ বাস্তবতায় উদ্বেগ বাড়ছে রপ্তানিকারকদের।

একাধিক কারণে বিরূপ পরিস্থিতির মুখে পড়েছে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত। এর মধ্যে বেশি ভোগাচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর প্রভাবে পশ্চিমা ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। অন্যদিকে দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম কয়েক দফা বাড়ার ফলে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এ ছাড়া
বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত পোশাকের ফ্যাশনে থাকে খরা মৌসুম বা লিন সিজন। এ সময় বাজারে ভোক্তা চাহিদা থাকে তুলনামূলক কম। বেশ কয়েকটি কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য মিলেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, এই অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৩ শতাংশের মতো। এ সময় রপ্তানি হয়েছে ৫৬১ কোটি ডলারের পোশাক। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ৫৭৭ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের পোশাক রপ্তানি হয়। একক রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধান বাজার। রপ্তানি কমার কারণে বাংলাদেশের পোশাকের বাজার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ এখন ১৮ শতাংশেরও কম। গত বছর একই সময়ে যা ছিল ২১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, দেশটির মূল্যস্ফীতি এখন ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ২৭ দেশের জোট ইইউর পরিস্থিতিও একই রকম। এ কারণে প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করার ক্ষমতা নেই অনেক আমেরিকান এবং ইউরোপিয়ানদের।

কাঁচামাল ব্যবহারের হিসাবের ওপর পোশাক রপ্তানির আদেশের চিত্র পাওয়া যায়। কোনো কারখানা রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর কতটুকু কাপড় বা অন্য কাঁচামাল শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করতে পারবে, একে বলা হয় ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) সনদ। সরকারের পক্ষে এই সনদ দেয় তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটির তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, কয়েক মাসে ইউডির সংখ্যা অনেক কমেছে। গত জানুয়ারিতে এ সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭০৭টি। এর আগের বছরের জানুয়ারিতে ছিল ৩ হাজার ১০টি। একইভাবে গত ফেব্রুয়ারিতে ইউডির সংখ্যা ছিল দুই হাজার ১১২টি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ছিল দুই হাজার ২৮১টি।

সংখ্যা কমে আসার পাশাপাশি ইউডির বিপরীতে পোশাকের পরিমাণও কমছে। বিজিএমইএর সহসভাপতি এবং ক্লাসিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ইউডিতে পোশাকের পিসের সংখ্যাও এখন কম। স্বাভাবিক সময়ে একেকটি ইউডির আওতায় গড়ে পাঁচ হাজার পিস পোশাক থাকত। এখন ৫০০ পিসের বেশি থাকছে না। এ পরিস্থিতির কারণ হিসেবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চেইন ইফেক্টের কথা বলেন তিনি। তাঁর মতে, লন্ডনে একসঙ্গে তিনটির বেশি টমেটো কেনার অনুমতি না থাকার সরকারি সিদ্ধান্ত থেকেই পরিস্থিতিটি অনুমান করা যায়। খাদ্য কেনার ক্ষেত্রে যদি পরিস্থিতি এমন হয়, তাহলে তুলনামূক কম প্রয়োজনীয় হিসেবে পোশাকের চাহিদা কীভাবে আশা করা যায়।

রপ্তানি আদেশের এ পরিস্থিতিতে ইপিবির পরিসংখ্যানে রপ্তানি আয় কীভাবে বাড়ছে– জানতে চাইলে শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, এত বেশি পরিমাণে রপ্তানি আয়ের তথ্য তাঁরা নিজেরাও মেলাতে পারছেন না। পরিস্থিতির সঙ্গে রপ্তানি আয়ের মিল নেই। তাঁর ধারণা, প্রতি মাসে অন্তত ১ থেকে দেড় বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত দেখানো হচ্ছে। যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, ভোক্তার চাহিদা কমেছে। দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এ অবস্থায় রপ্তানি কীভাবে বাড়তে পারে, তাঁর বোধগম্য নয়।

ইপিবির উপাত্ত থেকে দেখা যায়, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত আট মাসে কৃষিপণ্য, ওষুধ, চিংড়ি, পাট, হোমটেক্সটাইলসহ ছোট-বড় প্রায় সব পণ্যের রপ্তানি কমেছে। ব্যতিক্রম শুধু তৈরি পোশাক। পোশাক রপ্তানি ১৪ শতাংশ বেশি– এ বিষয়ে নিট ক্যাটাগরির পোশাক রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, এত রপ্তানি তাঁরা করেননি। কাদের এত রপ্তানি, তাঁরা জানেন না।

উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার হচ্ছে খুব কম: রপ্তানিকারকদের অনেকেই জানান, রপ্তানি আদেশ কম থাকায় অনেক কারখানায় উৎপাদন সক্ষমতার ৪০ শতাংশের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রায় সব কারখানায় একই পরিস্থিতি। অন্যদিকে ব্র্যান্ড ক্রেতারা চাইছেন পোশাকের দাম কম দিতে, তাঁরা ডিসকাউন্ট চাইছেন। একসঙ্গে রপ্তানি আদেশ না দিয়ে ছোট ছোট স্লটে কম রপ্তানি আদেশ দিচ্ছেন। এ কারণে কারখানা পর্যায়ে উৎপাদন পরিকল্পনা ঠিক মতো করা যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, কিছু ব্র্যান্ড সম্প্রতি রপ্তানি আদেশ বাতিল করেছে। বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, কাজের অভাবে ফতুল্লার শাসনগাঁওয়ে তাঁর এমবি নিট ফ্যাশন কারখানায় ৪০ শতাংশ মেশিন কয়েক মাস অলস পড়ে আছে। অন্যান্য বছর এ সময় ঈদের ছুটির আগে রোজায় রাত-দিন কাজ চলে। এখন কাজ না থাকায় সপ্তাহে তিন দিন কারখানা বন্ধ রাখার চিন্তা করছেন তিনি।

Facebook Comments Box

Posted ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com