বুধবার ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘কী খাইব মাইনষে ব্রয়লারও ২২০ টাকা’

অর্থনীতি ডেস্ক   |   শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   86 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

‘কী খাইব মাইনষে ব্রয়লারও ২২০ টাকা’

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রয়লার মুরগির দাম শুনে আঁতকেই উঠলেন ক্রেতা বেলাল হোসেন। অনেক ভেবেচিন্তে সোয়া কেজি ওজনের একটি মুরগি কেনার পর তাঁর ক্ষুব্ধ কণ্ঠ। বললেন, ‘কী খাইব মাইনষে, ব্রয়লারের কেজিও ২২০ টেঁয়া। অথচ কয় দিন আগেও ১৪০ টেঁয়া দি কিনছি। আঙ্গো মতন গরিব মাইনষের বাজারে আইনই বন্ধ হই যাইবো। যে জিনিসই কিনতে যাই, আগুন দর। সামনের রোজায় জিনিসপত্রের দাম কোনাই যাইবো আল্লাই জানে।’

বাজারে এখন ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা দরে। যা ঠিক এক মাস আগে বিক্রি হয়েছিল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। একইভাবে গত এক মাসে সোনালি জাতের মুরগির দাম কেজিতে ৬০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায়।

মুরগির দাম বাড়ার কারণে বেড়েছে ডিমের দামও। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে। তবে হালি হিসেবে কিনতে গেলে গুনতে হয় ৫০ টাকা। এ ছাড়া পাকিস্তানি মুরগির ডিমের ডজন ২২০ টাকা এবং হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২২৫ টাকা দরে।

মুরগির দাম লাগামহীন হওয়ার জন্য উৎপাদন কম এবং খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। কারওয়ান বাজারের নরসিংদী ব্রয়লার হাউসের বিক্রেতা আবুল কালাম বলেন, এক কেজি খাদ্যের দাম এখন ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। তিন মাস আগে ছিল ৬০ থেকে ৬২ টাকা। এক বছর আগে আরও কম ছিল। তখন প্রতি কেজি খাদ্য কেনা যেত ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্রয়লারের উৎপাদন কমছে দাবি করে ওই মুরগি বিক্রেতা বলেন, রমজানের আগে দাম আরও বাড়তে পারে। যা অন্তত ১৫ রমজানের আগে কমবে না।

ডিম-মুরগির পাশাপাশি বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। বাজারে এখন ৭০০ টাকার কমে মাংস কেনার সুযোগ নেই। কোনো কোনো জায়গায় বিক্রি হচ্ছে ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে। গত এক মাসে সব ধরনের মাছ কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ১০০ টাকার মতো।

এই বাড়ে তো, এই কমে। দুই বছর ধরে ভোজ্যতেলের বাজারে চলছে এমন ভেলকিবাজি। সরকার নির্ধারিত সর্বশেষ দর অনুযায়ী খোলা সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৭ এবং পাম অয়েলের লিটার ১১৭ টাকা দরে বিক্রি হওয়ার কথা। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন এর চেয়ে বেশি দামে। তাঁরা প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৭০ থেকে ১৭২ এবং পাম অয়েল ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।

তেজকুনিপাড়া কাঁচাবাজার থেকে ১৭০ টাকায় এক লিটার খোলা সয়াবিন তেল কিনেছেন মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, ৮-১০ দিন আগেও কিনেছি ১৬৫ টাকায়। দম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তেজকুনিপাড়ার মুদি দোকানি মাঈন উদ্দিন বলেন, এক সপ্তাহ ধরে পাইকারি পর্যায়ে খোলা তেলের দাম বাড়তি। বোতলজাত তেলের দাম বাড়েনি। তবে কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা আবারও দাম বাড়বে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

রমজানের আগেই বাড়তে শুরু করেছে ছোলার দাম। বাজারে এখন যেসব ছোলা বিক্রি হচ্ছে সেগুলার বেশিরভাগই নিম্নমানের। এর পরও কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে। যা মাসখানেক আগে ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। এ ছাড়া খোসাহীন ছোলাবুট বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা দরে। আগের মতোই বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে মুসর ডাল। দেশি (ছোট দানা) মুসরের কেজি ১৪০ ও আমদানি করা (বড় দানা) মুসর ডালের দাম ১১০ টাকা।

কারওয়ান বাজারে তুহিন জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. রায়হান বলেন, ভালো ছোলা এখনও আসেনি। পুরোনোগুলোই বিক্রি হচ্ছে। নতুন ছোলা এলে সেগুলোর দাম আরও বেশি হতে পারে।

ঠিক সময়ে আমদানি না হলে রমজানে ছোলার সরবরাহ কম হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘ছোলা আমদানির জন্য ব্যাংকগুলো এলসি (ঋণপত্র) খুলছে না। আবার কোনো কোনো ব্যাংক এলসি খুলছে। তবে তাঁদের ডলারের জোগান দিতে হয়। কথা হচ্ছে, আমদানিকারকরা ডলার পাবেন কোথায়?’
শফি মাহমুদ বলেন, ‘রমজানে সাধারণত ভালো মানের ছোলার চাহিদা বেশি থাকে। তবে অস্ট্রেলিয়া থেকে আগে আমদানি করা যেসব ছোলা ব্যবসায়ীদের কাছে মজুত রয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগেই পোকা ধরেছে। রমজানে এসব ছোলা চলবে না। ভারত থেকে কিছু ছোলা আসছে। সেগুলোই এখন ভরসা।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে ব্রয়লারের দাম প্রায় ৩৮ শতাংশ এবং ডিমের দাম ১৭ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে খোলা সয়াবিনের দাম ১ শতাংশ, পাম অয়েলের দাম আড়াই শতাংশ এবং ছোলার দাম প্রায় ৬ শতাংশ বেড়েছে। তবে এক বছরের ব্যবধানে এ পণ্যগুলোর দাম আরও বেশি বেড়েছে।
আগের মতোই বেড়ে যাওয়া দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল, আদা, রসুন ও মসলাজাতীয় পণ্য। তবে আটায় কিছুটা স্বস্তির খবর আছে। দাম গড়ে ৫ টাকা কমে খোলা আটার কেজি ৫৫ থেকে ৬০ এবং প্যাকেটজাত আটার কেজি ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এবার বছরজুড়েই ছিল সবজির চড়া দাম। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ সবজি ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বেগুন, করলা, বরবটিসহ কয়েকটি সবজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে।

Facebook Comments Box

Posted ১:২০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com