সোমবার ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভোক্তা ঋণের সুদ নির্ধারণে নতুন বিভ্রান্তিতে ব্যাংক

অর্থনীতি ডেস্ক   |   শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   92 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

ভোক্তা ঋণের সুদ নির্ধারণে নতুন বিভ্রান্তিতে ব্যাংক

ভোক্তা ঋণের সুদহারে সর্বোচ্চ সীমা নিয়ে নতুন করে বিভ্রান্তিতে পড়েছে ব্যাংক খাত। গত অক্টোবরে দেওয়া মৌখিক নির্দেশনা এবং জানুয়ারিতে মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় দেওয়া আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে ভিন্নতার কারণে এ বিভ্রান্তি। এখন সব ধরনের ভোক্তা ঋণে ১২ শতাংশ সুদ নেওয়া যাবে, নাকি আবাসন ঋণ বাদে অন্য ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে, তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে শিগগিরই একটি সার্কুলার জারি করা হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার দিয়ে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য সব ঋণে সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ঠিক করে দেয় ৯ শতাংশ। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে আরেক নির্দেশনায় ক্রেডিট কার্ডে ২০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেওয়ার সীমা আরোপ করা হয়। আর ২০২১ সালের আগস্টে ব্যক্তি পর্যায়ের মেয়াদি আমানতে গড় মূল্যস্ফীতির বেশি সুদ দিতে বলা হয়। এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে শুরু থেকেই অনুরোধ জানিয়ে আসছেন ব্যাংকাররা। ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবি সম্প্রতি সিএমএসএমই, ভোক্তা ঋণসহ কিছু খাতে সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে গভর্নরের কাছে চিঠি দিয়েছে। গত অক্টোবরে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চ মূল্যস্ম্ফীতির এ সময়ে সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ার ভালো কোনো বিকল্প নেই। আর আইএমএফ সব সময় সুদহার বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দিয়ে আসছে। ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের আলোচনার সময় ধীরে ধীরে সুদহার বাজারভিত্তিক করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

আইএমএফের ঋণ নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত অক্টোবরে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির নেতাদের বাংলাদেশ ব্যাংকে ডেকে এনে ব্যক্তিগত ঋণ এবং গাড়ি কেনার ঋণে ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেওয়ার সুযোগের কথা জানানো হয়। আর মেয়াদি আমানতে মূল্যস্ম্ফীতির বেশি সুদ দেওয়ার যে নির্দেশনা ছিল, তা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়। এর পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ব্যাংকগুলোকে টেলিফোন করে বলা হয়, ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার আগের ঋণে ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা বহাল থাকবে। নতুন ঋণে বাড়তি সুদ নেওয়া যাবে। তাও একবারেই কোনো ব্যাংক ১২ শতাংশে উন্নীত করতে পারবে না। বরং ধীরে ধীরে সুদহার বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ওই পর্যায়ে নেওয়া যাবে। এর মধ্যে গত ১৫ জানুয়ারি মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ক্রেডিট কার্ডে সুদহারের কোনো সীমা নেই। ভোক্তা ঋণেও ব্যাংকগুলো এখন থেকে ১২ শতাংশ সুদ নিতে পারবে। ভোক্তা ঋণ নীতিমালার আওতায় ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ড, গাড়ি, আবাসন ও ব্যক্তিগত- এই চার ধরনের ঋণ বিতরণ করে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফ মিশনের কয়েক দফা আলোচনায় সুদহারে সীমা প্রত্যাহারের বিষয়টি সামনে আসে। এর আগে গভর্নরের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভায় গিয়ে সাইডলাইন বৈঠকেও বিষয়টি আলোচনা হয়। সংস্থাটি জানায়, মুক্তবাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সুদহারের সীমা বেঁধে দেওয়ার সুযোগ নেই। এটি পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হওয়া উচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়, বৈশ্বিক কারণে এমনিতেই মানুষ মূল্যস্ম্ফীতির চাপে রয়েছে। এর মধ্যে সব ধরনের ঋণে একবারে সীমা প্রত্যাহার করলে বা বাড়ালে উৎপাদন খরচ অনেক বাড়বে। মূল্যস্ম্ফীতি আরও বেড়ে দরিদ্র শ্রেণির মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যে কারণে এখনই সুদহারের সীমা প্রত্যাহার না করে বিলাসী পণ্য হিসেবে বিবেচিত ভোক্তা ঋণের আওতায় বিতরণ করা ব্যক্তি (পার্সোনাল) ঋণ ও গাড়ি (অটো) কেনার ঋণে সুদহারের সীমা বাড়ানো হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্নিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, বৈশ্বিকভাবে মূল্যস্ম্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ভারতসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ চাহিদা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মূল্যস্ম্ফীতি কমাতে সুদহার বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ সুদহারের সীমা বহাল রেখে মূল্যস্ম্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। তবে সুদহারের সীমা তুলে দিলে সঞ্চয়কারীদের সুবিধা হলেও ব্যবসার খরচ বাড়বে। যে কারণে এখনই সর্বোচ্চ সীমা তোলা যাচ্ছে না।

Facebook Comments Box

Posted ১২:১৭ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com