শনিবার ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জ্যাকসন হাইটসের সানাই রেষ্টুরেন্টের স্বাদ ও পরিবেশনায় ধ্বস

মনোয়ারুল ইসলাম   |   বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   232 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

জ্যাকসন হাইটসের সানাই রেষ্টুরেন্টের স্বাদ ও পরিবেশনায় ধ্বস

সানাই একটি রেষ্টুরেন্টের নাম। মাত্র ১ মাস হলো শুভযাত্রার। বেশ আলোড়ন তৈরি করেছে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। প্রশস্থ জায়গা নিয়ে কারুকার্য। নীচতলা, প্রথম ফ্লোর ও মেজানিন নিয়ে রেস্টুরেন্টটিতে কাস্টমারদের আতিথেয়তা। ব্যবসাতো বটেই। জ্যাকসন হাইটসের প্রাণকেন্দ্রে। ৭৪ স্ট্রিটের ওপর। বাংলাদেশি, নেপাল ও ভারতীয়দের পদচারণায় এলাকাটি মুখরিত। তবে অধিকাংশই বাংলাদেশি। এই রেষ্টুরেন্টে একর্টি পার্টির আয়োজনের কথা প্রবাসের পরিচিত মুখ, বিশিষ্ঠ আইনজীবি ও রাজনীতিক এটর্নি মঈন চৌধুরী বলেছিলেন। সাংবাদিক বন্ধু মোহাম্মদ সাঈদতো প্রসংশায় পঞ্চমুখ। আমারও কৌতুহল ছিল।

ইতোমধ্যেই ২ বার রেষ্টুরেন্টটি ভিজিট করার সৌভাগ্য হয়েছে। প্রথমবার নিউইয়র্ক বাংলাদেশি আমেরিকান লায়ন্স ক্লাবের একটি মাসিক সভায় যোগ দিতে গিয়ে। বেশ আলো ঝলমল বেজমেন্টটি সাজানো হয়েছে। যদিও স্টেজটি যেখানে বসানো হয়েছে তা অডিয়েন্সের সাথে বেমানান। অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের সাথে মঞ্চে আরোহীতদের (নেতানেত্রী) ব্যবধানটা একটু বেশিই মনে হবে। অবশ্য অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে নেতারা সেফ জোনে থাকবেন! ( জোক)। তারপরও বলবো, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় প্রসংশা পাবার দাবিদার। রেষ্টুরেন্টের একজন অন্যতম অংশীদার নিজে লায়নদের সেবা দিতে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন সেদিন। অবশ্য লায়ন বলে কথা। তবে খাবারের টেস্ট নিয়ে আমি সহ অনেকেই সেদিন প্রশ্ন তিুলেছিলেন।

ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসেছেন বাংলাদেশ সরকারের একজন যুগ্ম সচিব। শেরোবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। আমার কয়েক বছরের জুনিয়র। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই, আমেরিকার সদস্যরা তাকে নিয়ে ডিনার করার সিদ্ধান্ত জানালেন। আমি সহ বেশ কয়েকজন এই রেষ্টুরেন্টের নাম বললাম। তাদের মধ্যে কয়েকজন সিটির হেলথ ডিপার্টমেন্টের কর্মচারিও ছিলেন। আমিও বললাম, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, নতুন ও বাংলাদেশি মালিকানার একটি প্রতিষ্ঠান। সেখানেই বসা যাক।

২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা। ক্রিস্টমাস ইভ। কনকনে শীত। সানাই রেষ্টুরেন্টে ঢুকে ভালই লাগলো। অধিকাংশ কাস্টমারই বাংলাদেশি। কমিউনিটিতে বসবাস প্রবীন ও প্রখ্যাত এক সাংবাদিক ভাইও চায়ের আড্ডা দিচ্ছিলেন সেখানে। কুশলাদি বিনিময় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সতীর্থদের সাথে যোগ দিলাম। বসলাম মেজানিনে। তখন সন্ধ্যা ৭টা। পিক আওয়ার। খাবারের অর্ডার দিতে গিয়ে প্রথমেই হোঁচট খেতে হলো। প্রথম ৩টা আইটেমের কথা বলতেই কর্মচারিরা জানালেন, সরি শেষ হয়ে গেছে। চিকেন ললিপপ রান আউট। ভেজিটেবল রান আউট। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। জুনিয়ররা রেষ্টুরেন্টের এ অবস্থা দেখে বিব্রতও হচ্ছিলেন। অগত্যা যা আছে তা দেখেই খাবারের অর্ডার দেয়া হলো।
পানি, ন্যাপকিন, স্পুন, ফর্ক কিংবা নাইফ কিছুই সরবরাহ নেই। হটাৎ টেবিলে চলে এলো তরকারি—ডাল, চিকেন ও সালাদ। এর ৫ মিনিট পর এলো অর্ডারকৃত নান। কিন্তু কোন প্লেট নেই। অপেক্ষার পর বলতেই হলো প্লেটের কথা। তাও আসছে না। প্লেট ছাড়া খাবারও শুরু করা যাচ্ছে না। ৪ বার তাগাদা দেবার পর তা এলো। এরমধ্যেবিরিয়ানি, নান ঠান্ডা। আর সিজলিং গরম থেকে বরফে পরিনত। আর নান ঠান্ডা হলে যা হয়।রেষ্টুরেন্টের অন্যতম কর্ণধার রনজিৎ দেবের দৃষ্টি আর্কষন করা হয়। তিনি দুঃখ প্রকাশ করলেন। ওয়েটারকে ধমক দিলেন। একজন মালিকের স্ত্রী কাম ম্যানেজার এসে বললেন, ভাই ভীষণ ভীড়তো। তাই সামাল দেয়া যাচ্ছে না। ঠান্ডা নান আর সিজলিং দিয়ে ডিনার শেষ করতে হলো। কেউ কেউ বিরিয়ানী অর্ডার দিয়েছিলেন। একজন ছোট ভাইয়ের স্ত্রী হাসতে হাসতে বললেন, ভাই বিরিয়ানীটা টেস্ট করুন। কৌতুহলি হয়ে তা টেস্ট করলাম। বাস! টেস্ট বলতে যা বুঝায় তা লাপাত্তা। একেবারেই সানাই বাজিয়ে দিয়েছে মুখরোচকদের। অতিথির সামনে কোন মন্তব্য না করে বিল ও টিপস প্রদান করে সানাই বাজিয়ে কনেকনে শীতে বাড়ি ফেরা আর কি!

পাদটীকা: সানাই রেষ্টুরেন্টের লোকেশন আমার পছন্দের। যদিও এলাকাটিতে পার্কিং এর হ্যাসেল বেশ। সোনার হরিণ পাবার মতো। তবে রেষ্টুরেন্টটি খোলামেলা। আধুনিক সাজে সজ্জিত। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নও। কিন্তু খাবার টেস্ট, পরিবেশনা ও মান নিয়ে আমার অবজারেভেশন সুখকর নয়। এই জ্যাকসন হাইটসে বাংলাদেশি অনেক রেষ্টুরেন্ট আছে তারা কমিউনিটি ব্যবসার নামে কমিউনিটির সাথে ব্ল্যাকমেইল করেন। আমেরিকান মূলধারার চেইন রেষ্টুনেরন্টের চেয়েও তারা মূল্য হাঁকেন বেশি। হাইজেনিক স্ট্যান্ডার্ডের কথা বাদই দিলাম। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, সানাই রেষ্টুরেন্টের মালিকেরা দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসার সাথে জড়িত। মূলধারার কাস্টমারদের হ্যান্ডেল করেছেন দীর্ঘদিন। আশা করবো, তারা পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বশীলতার সাথে সেবা ও আতিথেয়তার সানাই বাজাবেন।

 

Facebook Comments Box

Posted ১:২২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com