অর্থনীতি ডেস্ক | শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট | 174 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
চলতি অর্থবছরের জন্য প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি চেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ ১৭ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত কোনো ভর্তুকি দেবে না অর্থ মন্ত্রণালয়। বিদ্যুৎ বিভাগকে এ অবস্থান জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সংশ্নিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত অর্থবছর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এতে গত অর্থবছরে রেকর্ড লোকসানের মুখে পড়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এ অবস্থায় সংস্থাটির পক্ষে বিদ্যুৎ বিভাগ গত অর্থবছরের বকেয়া ও চলতি অর্থবছরের জন্য ভর্তুকি বাবদ ৪৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে। চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের চেয়ে যা ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেশি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় বাজেট বরাদ্দের ১৭ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া সম্ভব হবে না। বাকি অর্থের সংস্থানের বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, মূল্য বাড়ানোর পাশাপাশি এ খাতের অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ করে পিডিবির লোকসান কমিয়ে আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আইএমএফের কাছ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার শর্তের মধ্যে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার বিষয়টি রয়েছে। এ বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, কৃষিতে ভর্তুকি কমাতে আইএমএফের কোনো পরামর্শ নেই। তবে বিদ্যুতে ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় তাদের মতামত জানিয়েছে। কিন্তু তাঁরা এ বিষয়ে আলোচনায় বসবেন। কারণ, প্রয়োজনীয় অর্থ না পাওয়া গেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। তা ছাড়া ভর্তুকি কমাতে দাম বাড়ানোও সহজ নয়।
গত ২১ নভেম্বর পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ানো হয়। ইউনিটপ্রতি বাড়ানো হয় ১ টাকা ৩ পয়সা। এর পরই খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন করে বিতরণ কোম্পানিগুলো।
এসব প্রস্তাবের ওপর আগামী ৮ ও ৯ জানুয়ারি গণশুনানি হবে। শুনানির পর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) দাম বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
বিদ্যুতের দাম বাড়লে নিম্ন আয়ের জনগণ অসুবিধায় পড়বে এবং সে ক্ষেত্রে সরকারের কোনো উদ্যোগ আছে কিনা জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ৫৩ শতাংশ সেচকাজে ডিজেল ব্যবহার হয়, যার দাম এরই মধ্যে বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া ৪৭ শতাংশের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়। ফলে বিদ্যুতের দাম বাড়লে কৃষক আরও চাপে পড়বে। তাই কৃষকদের জন্য একটি পৃথক লক্ষ্যভিত্তিক প্রণোদনা প্যাকেজ নেওয়ার চিন্তা রয়েছে। এ ছাড়া দারিদ্র্যের হার ৩০ শতাংশের ওপরে থাকা ৬০টি উপজেলায় বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। অতি দরিদ্রপ্রবণ এসব অঞ্চলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসৃজন করবে এমন একটি লক্ষ্যভিত্তিক প্রণোদনা প্যাকেজ হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতে ১১ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা ছিল, তা দিয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসের জন্য চলতি বাজেটে বরাদ্দ করা অর্থ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে চলতি অর্থবছর ও আগের অর্থবছরের দুই মাসের ভর্তুকির দাবি এসেছে।
বিদ্যুৎ খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি রোধ ও মুনাফা যৌক্তিকীকরণ করা হলে এত ভর্তুকির প্রয়োজন হবে না বলে মনে করেন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রহণযোগ্য মুনাফার হার হচ্ছে ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। কিন্তু সরকার বেসরকারি খাতকে মুনাফা দিচ্ছে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত। তিনি বলেন, অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ খাতে নানাভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে এ খাতে সাশ্রয় সম্ভব হতো।
Posted ১২:২০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২
nykagoj.com | Stuff Reporter