অর্থনীতি ডেস্ক | বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট | 105 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
দক্ষিণ-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একটি অর্থনৈতিক করিডোর হলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের সম্ভাবনা তৈরি করবে। এর মাধ্যমে ২০৫০ সাল নাগাদ উৎপাদিত শিল্পপণ্যের মূল্য দাঁড়াতে পারে ২৮৬ বিলিয়ন ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৩১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। উৎপাদন কর্মকাণ্ডের সুবিধায় কর্মসংস্থান হতে পারে ৭ কোটি ১৮ লাখ মানুষের।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ ইকোনমিক করিডোর ডেভেলপমেন্ট হাইলাইটস’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ধরনের কোনো করিডোর না হলে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান দুটিই অনেক কম হারে এগোবে। করিডোরহীন অবস্থায় ২০৫০ সাল নাগাদ উৎপাদিত শিল্পপণ্যের মূল্য দাঁড়াতে পারে ১০৮ বিলিয়ন ডলারে। আর কর্মসংস্থান মাত্র ৩ কোটি ১১ লাখ, অর্থাৎ করিডোর হলে শিল্প উৎপাদন ও কর্মসংস্থান দ্বিগুণের বেশি হবে।
অনুষ্ঠানে এডিবির পক্ষে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সংস্থার সিনিয়র কান্ট্রি স্পেশালিস্ট সুন চ্যাং হোং। তিনি বলেন, প্রস্তাবনা অনুসারে এই করিডোর হলে দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৪ শতাংশ এর আওতায় আসবে। এই করিডোর বাংলাদেশের সামনে অনেক বড় সুযোগ। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাতে সহায়ক হতে পারে এই করিডোর।
এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ইকোনমিক করিডোর (বিইসি) নামে এই করিডোরটি খুলনা থেকে শুরু হয়ে মধ্যাঞ্চল হয়ে সিলেট পর্যন্ত নেওয়া যেতে পারে। এজন্য প্রস্তাবিত ১৪টি জেলা হচ্ছে– খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ ও সিলেট। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর, বেনাপোল, আখাউড়া ও তামাবিল স্থলবন্দর, গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর ও মহাসড়ক এতে সংযুক্ত থাকবে।
সংস্থাটির মতে, এর মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব ধরনের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা এবং উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামোর সুবিধার মাধ্যমে স্থানীয়দের জীবনযাত্রার মানে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। এতে উন্নয়ন বৈষম্যও দূর হবে। এ ছাড়া আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে সারাবিশ্বের সঙ্গে আরও বেশি সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এ ধরনের অর্থনৈতিক করিডোরকে সমর্থন করে সরকার। এ করিডোর বাস্তবায়নে নীতি এবং অবকাঠামো সুবিধা দেওয়া হবে। এ বিষয়ে এডিবির কাছেও সহায়তা চান তিনি।
এ ছাড়া অর্থ পাচার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগ ও ব্যবসা-সংক্রান্ত নীতিমালা আরও উদার হলে অর্থ পাচার হবে না। সরকার সেই চেষ্টাই করছে। উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি।
আলোচনায় পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ বলেন, এ ধরনের করিডরের মাধ্যমে প্রতিবেশী ভারতসহ অনেক দেশ অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে এগিয়েছে। এতে সব ধরনের সেবা এবং অবকাঠামো সুবিধায় শিল্প উৎপাদন বাড়ে। রপ্তানি এবং অভ্যন্তরীণ বাজারও এতে সম্প্রসারিত হয়। আঞ্চলিক বৈষম্য কমে। তবে ইকোনমিক করিডোর সফল করতে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন জরুরি। প্রাতিষ্ঠানিক নেতৃত্বও গুরুত্বপূর্ণ। এসবের সমন্বয় না হলে করিডোর বরং স্থানীয় পর্যায়ে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
প্রাণ-আরএলএফ গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী বলেন, বিদ্যমান অবকাঠামোকে উপযোগী করে নতুন কিছু সংযোজন করেই ইকোনমিক করিডোর করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে পরিবেশের বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। প্রসঙ্গক্রমে রপ্তানি নীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাণিজ্যনীতি রপ্তানি সহায়ক নয়। এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং বলেন, প্রস্তাবিত ইকোনমিক করিডোর বাংলাদেশের উত্তর এবং দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এবং এ দেশের টেকসই উন্নয়নে বড় ধরনের সহায়ক হতে পারে।
Posted ৮:৩৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৩
nykagoj.com | Stuff Reporter