ইউএনএ নিউজ | রবিবার, ০২ জুলাই ২০২৩ | প্রিন্ট | 165 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে গত বুধবার নিউইয়র্কসহ উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন শহরে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়েছে। ঈদুল আযহা মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। ঈদুল আযহা উদযাপনের অন্যতম প্রধান কর্মকান্ড হচ্ছে ঈদের নামাজ আদায় করার পর সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে পশু কোরবানি। চমৎকার আবহাওয়ায় জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার-জেএমসি’র আয়োজনে নিউইয়র্কে সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সংশ্লিষ্টদের ধারণা জেএমসি’র ঈদের জামাতে সর্বস্তরের ১০/১২ হাজার লোক অংশগ্রহণ করেন। নিউইয়র্কের মসজিদগুলো ছাড়াও কোথাও কোথাও খোলা মাঠে ঈদের জামাত হয়েছে। মসজিদ আল আরাফা (আরাফা ইসলামিক সেন্টার) ও আমেরিকান মুসলিম সেন্টারের (এমসি) উদ্যোগে জ্যামাইকায় আরো দুটো মাঠে ঈদের জামাত হয়েছে। এই দুই জামাতেও শত শত মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের (জেএমসি) উদ্যোগে ঈদুল আযহার একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় স্থানীয় থমাস এডিসন হাইস্কুল মাঠে সকাল সোয়া ৮টার দিকে। এই জামাতে শিশু-কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ পর্যন্ত সর্বস্তরের শত শত পুরুষ-মহিলা নামাজে অংশ নেন। এটিই ছিলো নিউইয়র্কে সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত। সংশ্লিষ্টদের ধারণা জেএমসি’র ঈদের জামাতে সর্বস্তরের ১০/১২ হাজার লোক অংশগ্রহণ করেন। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম এখানে ঈদের নামাজ আদায় ও মসুল্লিদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ঈদের জামাত শেষে অনুষ্ঠিত বিশেষ মুনাজাতে প্রবাসী ও দেশবাসীসহ জাতির কল্যাণ এবং করোনামুক্ত বিশ্ব কামনা করা হয়।
জেএমসি আয়োজিত ঈদের জামাতে ইমামতি এবং বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন জেএমসি’র খতিব ও ইমাম মওলানা মির্জা আবু জাফর বেগ আর খুৎবা পাঠ করেন শেখ জুনায়েদ। নামাজের আগে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান ডেভিড আই ওয়েপ্রিন। এছাড়াও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জেএমসি পরিচালনা কমিটির সভাপতি ডা. সিদ্দিকুর রহমান এবং ট্রাস্টিবোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. নাজমুল খান। এই পর্ব পরিচালনা করেন জেএমসি’র সেক্রেটারী আফতাব মান্নান।
আমেরিকান মুসলিম সেন্টারের (এএমসি) উদ্যোগে ঈদুল আযহার ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় মসজিদ ভবনে সকাল ৬টা, ৭টা, ৮টায়। এরপর চতুর্থ ও পঞ্চম জামাত অনুষ্ঠিত হয় জ্যামাইকার রুফাস কিং পার্কে সকাল ৯টা এবং সকাল ১০টায়। তবে এখানকার চতুর্থ জামাত আদায়ের সময় ইমামের অসাবধানতাবশত ভুলের কারণে দু’বার নামাজ আদায় করতে হয়।
জ্যামাইকার মসজিদ আল আরাফার (আরাফা ইসলামিক সেন্টার) উদ্যোগে পবিত্র ঈদুল আযহার একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৮টায় স্থানীয় সুসান বি এন্থনী স্কুলের খোলা মাঠে। এতে ইমামতি করেন ইমাম মোহাম্মদ শোয়েব। এখানে সর্বস্তরের শত শত পুরুষ ও মহিলা জামাতে অংশ নেন।
জ্যামাইকার ‘হাজী ক্যাম্প মসজিদ’ নামে পরিচিত মসজিদ মিশনে ঈদুল আযহার ৪টি জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৬টায়, সকাল সাড়ে ৭টা, সকাল সাড়ে ৮টা ও সকাল সাড়ে ৯টায়। জামাতগুলোতে ইমামতি করেন হাফেজ রফিকুল ইসলাম, হাফেজ তানভিরুল ইসলাম, মওলানা মঞ্জুরুল করীম ও হাফেজ মারওয়ান।
ম্যানহাটানের মদিনা মসজিদের উদ্যোগে ঈদের দুটি জামাত হয় সকাল সাড়ে ৮টায় ও সাড়ে ৯টায়।
ব্রংক্সের পার্কচেস্টার জামে মসজিদে ঈদুল আজহার দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় মসজিদ ভবনে সকাল ৮ ও সকাল ৯টায়। এত ইমামতি করেন মসজিদের ইমাম জুবাইর রশিদ ও মোয়াজ্জিন মওলানা নূরুল ইসলাম।
এস্টোরিয়ার আল আমীন জামে মসজিদ এন্ড ইসলামিক সেন্টারে ঈদুল আযহার জামাত অনুষ্ঠিত হয় ৩৬ ও ৩৭ এভিনিউর মাঝে ৩৬ স্ট্রিটে খোলা রাস্তায় সকাল ৮টায়। ইমামতি করেন হাফেজ মওলানা লুৎফর রহমান চৌধুরী। এতে কয়েক হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করেন বলে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জয়নাল আবেদীন জানান।
এছাড়াও জ্যামাইকার দারুস সালাম মসজিদ, ফুলতলী ইসলামিক সেন্টার, জ্যাকসন হাইটস ইসলামিক সেন্টার, সানিসাইড মসজিদ, এস্টোরিয়ার গাউসিয়া মসজিদ, ব্রæকলীনের বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টার, বায়তুল জান্নাহ ইসলামিক সেন্টার, ওজোনপার্কের আল আমান মসজিদ, আল ফুরকান জামে মসজিদ ও ফুলতলী জামে মসজিদ সহ অন্যান্য মসজিদের উদ্যোগে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে কানাডা ও ওয়াশিংটন ডিসিসহ যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি, কানেকটিকাট, মেরিল্যান্ড, পেনসিলভেনিয়া, ভার্জিনিয়া, ওহাইয়ো, ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলাইনা, সাউথ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া, মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস প্রভৃতি স্টেটে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিউজার্সির প্যাটারসনে অবস্থিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন অব নিউজার্সির জালালাবাদ মসজিদের উদ্যোগে স্থানীয় হিলচাল ফি স্টেডিয়ামে ঈদের জামাত হয়।
প্রতিটি ঈদের জামাত শেষে নবীন-প্রবীণ, ছোট-বড়, সকলে কোলাকুলি করে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অনেকে সপরিবারে বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘনিষ্ঠজনদের বাসা-বাড়িতে গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদ পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে সর্বত্রই নেয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঈদের নামাজ আদায়ের স্থানগুলোর আশপাশের রাস্তায় ফ্রি গাড়ি পার্কিংএর ব্যবস্থা থাকায় দূর দূরান্ত থেকে শত শত ধর্মপ্রাণ মুসল্লী সপরিবারে ঈদের নামাজে শরীক হন। ঈদের দিনটি উইক ডে হলেও বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশীকে ঈদের নামাজ আদায় করতে দেখা যায়।
অপরদিকে গ্রোসারীর মাধ্যমে অনেকেই খাসী ও গরু কোরবানি দেন। কোরবানির মাংস হাতে পাওয়ার পর সেই মাংস আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের বাসায় বাসায় গিয়ে বিতরণ করা হয়।
নিউইয়র্ক ঈদগাহ
জ্যাকসন হাইটসস্থ ডাইভারসিটি প্লাজায় নিউইয়র্ক ঈদগাহর ঈদুল আদহার ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। দূরে কোরবানি করতে যাওয়া মুসল্লীদের সুবিধার্থে ও তাঁদের অনুরোধে প্রথম জামাতটি সকাল ৬টায়। ১১টার জামাত মোহাম্মদী সেন্টার মসজিদে ব্যবস্থা করা হয়। ঈদগাহর ৫টি জামাতের ইমামতি করেন ইমাম কাজী কায়্যূম, ইমাম শাইখ আবদুল্লাহ মামুন, ইমাম শাইখ মুসতানজিদ বিল্লাহ রাব্বানী বদরপুরী, ইমাম শাইখ হাফিজ মোশাররফ হোসাঈন এবং ইমাম শাইখ ক্বারী আবুল খাইর। প্রতিটি জামাতের ইংরেজী খুতবায় কোরবানির ঐতিহ্য ও বিশেষত্ব তুলে ধরা হয়। আমেরিকার মুসলমান, মুসলিম বিশ্বের ঐক্য এবং বিশ্ব মানবতার কল্যাণ, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য দোয়া করা হয় প্রতিটি জামাতেই। সংবাদ বিজ্ঞপ্তির।
আটলান্টিক সিটির মসজিদ আল হেরা
সুব্রত চৌধুরীঃ নিউজার্সির আটলান্টিক সিটিতে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ত্যাগের মহিমায় পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়েছে। গত ২৮ জুন, বুধবার সকালে আটলান্টিক সিটির বিভিন্ন মসজিদে প্রবাসী বাংলাদেশী আমেরিকান মুসলিম সম্প্রদায়সহ বিপুল সংখ্যক মুসলিম ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য সমবেত হন।
আটলান্টিক এভেনিউস্থ বাংলাদেশী আমেরিকানদের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত আল হেরা মসজিদে ঈদের জামাতে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী মুসলিমসহ অন্যান্য কমিউনিটির মুসলিমরাও অংশ নেন। মহিলারাও ঈদের জামাতে অংশ নেন। ঈদের নামাজ আদায় শেষে খুৎবা প্রদান করা হয়, দেশবাসী ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সুখ-সমৃদ্ধির জন্য দোয়া করা হয়। এখানে ঈদের জামাতে ইমামতি করেন মসজিদ আল হেরার খতিব আবু সুফিয়ান ও হাফেজ নজরুল ইসলাম। এখানে দু’টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
মুসল্লিদেরকে ঈদ শুভেচ্ছা জানান মসজিদ আল হেরার সভাপতি ওবায়দুল্লাহ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক রিয়াজউদ্দীন চৌধুরী।
আটলান্টিক সিটির স্যান্ড ক্যাসল স্টেডিয়াম
আলবেনি এভিনিউতে অবস্থিত স্যান্ড ক্যাসেল স্টেডিয়ামের সুবিশাল মাঠে প্রবাসী বাংলাদেশী আমেরিকান মুসলিম সম্প্রদায় সহ বিপুল সংখ্যক মুসলিম ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য সমবেত হন। পুরুষদের পাশাপাশি নামাজের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা থাকায় বিপুল সংখ্যক মহিলাও এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন। ঈদ জামাতে ইমামতি করেন ইমাম কামাল আল সায়েগ। নামাজ শেষে মানব জাতির কল্যাণ কামনার পাশাপাশি মহান আল্লাহর কাছে মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
আটলান্টিক সিটির মসজিদ আল তাকওয়া, ইসলামিক সেন্টার অব আটলান্টিক সিটি, গ্যালাওয়ে টাউনশিপের দারুস সালাম একাডেমি, প্লিজেন্টভিলের মসজিদ বায়তুল নসরের যৌথ উদ্যোগে এই ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এই বিশাল ঈদ জামাতের আয়োজন প্রসঙ্গে ইসলামিক সেন্টার অব আটলান্টিক সিটির প্রতিষ্ঠাতা ইকবাল হোসাইন জানান, নিউজার্সীর মুসলিমদের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং আন্তরিকতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আটলান্টিক সিটি এবং পাশ্ববর্তী অন্যান্য মসজিদের মুসল্লীদের সমন্বয়ে একটি ঈদের জামাত করার জন্য দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার ফসল এই বিশাল ঈদ জামাত।
Posted ৩:৪৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০২ জুলাই ২০২৩
nykagoj.com | Monwarul Islam