বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমেরিকার হুমকিতে আওয়ামী লীগের প্রথম নির্বাচনী শহীদ আজমত উল্লাহ খান

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ২৮ মে ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   141 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

আমেরিকার হুমকিতে আওয়ামী লীগের প্রথম নির্বাচনী শহীদ আজমত উল্লাহ খান

 

আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লাহ খান মেয়র পদে জিতবেন এটা ছিল নিশ্চিত। মাঠ থেকে উঠে আসা এ নেতাকে চেনেন না এমন মানুষ গাজিপুরে খুবই কম আছে। ঢাকার অদূরে শিল্প এলাকা ও আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে জোয়ারও তোলা হয়েছিল। নেতানেত্রী ছাড়াও সিনে পাড়ার নায়ক নায়িকাদের পাঠানো হয়েছিল গাজিপুরে। রাজনীতি ও প্রশাসনিক মার প্যাচে জাহাঙ্গীর আলমকে নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এতে তার প্রতি সাধারন মানুষের সহানুভূতি জন্মায়। জাহাঙ্গীর ছায়া প্রার্থী হিসেবে মা জায়েদা খাতুনকে মেয়র পদে দাঁড় করিয়ে দেন। জায়েদা খাতুন ছেলের জনপ্রিয়তায় ভালো ভোট পাবেন তা ছিল আলোচনায়। কিন্তু জিতবেন আজমত উল্লাহ খান। এ ধারনা ছিল সবার। বিজয়ের লক্ষ্যে প্রশাসনের সকল প্রস্তুতিও ছিল। ভোটের আগের সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ইউনিফর্মহীন আইনশৃংখলা বাহিনীর হাজারের ওপর সদস্যকে গাজিপুরে পাঠানো হয়। অপারেশন নিশ্চিত করাই ছিল লক্ষ্য। কিন্তু ভোটের মাত্র ২ দিন আগে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, ‘বাংলাদেশে সুষ্ঠু  নির্বাচন অনুষ্ঠানে যে বা যারা বাধা প্রদান করবে তারা এবং তাদের আত্মীয়স্বজন ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে’। আমলা, আইনশৃংখলা বাহিনী, রাজনীতিক কিংবা বিচারপতি সকলেই এ নিষেধাজ্ঞায় থাকবেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তা বজ্রপাতের গতিতে আলোড়ন তৈরি করে। এক সপ্তাহ আগে বিবিসিকে শেখ হাসিনা বলেন,“আমাকে আমেরিকা ক্ষমতায় রাখতে চায় না।”  তা দৃশ্যপটে ভেসে ওঠে সাধারন মানুষের মনে।  মিলাতে শুরু করে হিসেব। ঘরে ঘরে আলোচনা ও বিতর্ক জমে ওঠে। এক ধরনের প্যানিক তৈরি হয় আওয়ামী মহলে।  তার প্রভাব পড়ে গাজিপরের নির্বাচনেও। সেখানে কর্মরত নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা, পুলিশ অফিসার ও আমলারা নড়েচড়ে বসেন। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারাও ছিলেন উদ্বিগ্ন। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার রিস্কটি তারা নিতে চান নি। এই নির্বাচনে দায়িত্বরত অফিসারদের পরিবার থেকেও চাপ ছিল বিতর্কে না জড়িয়ে যাওয়া। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের ছায়া ভূত তাদের তাড়া করে। যে কারনে দিনের ভোট রাতে করার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এ সুযোগে জাহাঙ্গীর তার মায়ের পক্ষে মরণ কামড় দিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে লড়াইয়ে। তার কর্মিবাহিনী যারা ৭ দিন আগেও মাঠে নামতো না অজানা আশংকা আর ভয়ে। যুক্তরষ্ট্রের বিবৃতি প্রকাশের পর তারা নেমে পড়ে নিশংকচিত্তে। বিজয়ের মুকুট হাত ছাড়া হয় আজমতের। গাজিপুরের জনসাধারনকে বলতে শোনা গেছে, আমেরিকার হুমকিতে আওয়ামী লীগের প্রথম শহীদ আজমত উল্লাহ খান।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী এডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ১৬১৯৭ ভোটে হারিয়ে জায়েদা খাতুন গাজিপুরের প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। জায়েদা ভোট পেয়েছেন ২,৩৮,৯৩৪, আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২,২২,৭৩৭ ভোট।  দিনভর অনেকটা শান্তিপূর্ণ ভোট হলেও রাতে ফল ঘোষণায় দীর্ঘ সময় লাগায় টানটান উত্তেজনা দেখা দেয়। দুই প্রার্থী হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে থাকায় তাদের সমর্থকদের মধ্যেও উত্তেজনা বিরাজ করে। ফল প্রকাশে দেরি হওয়ায় প্রশ্ন তোলেন মেয়র প্রার্থীরা। গভীর রাতে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম।
ফল ঘোষণার শুরু থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন এগিয়ে ছিলেন। দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান বেশি না হওয়ায় অনেকে নানা শঙ্কা প্রকাশ করতে থাকেন। চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগেই অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আজমত উল্লা বিজয়ী হয়েছেন বলে তাকে অভিনন্দন জানাতে থাকেন। ভোটের ফল দেরিতে আসায় অনেকে সামাজিক মাধ্যমে নানা রকম মন্তব্য করেন।
গাজীপুর সিটি নির্বাচন বর্জন করে এতে কোনো প্রার্থী দেয়নি বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।

 

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন সাবেক মেয়র এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। শুরুতে জাহাঙ্গীর আলম নিজেই প্রার্থী হয়েছিলেন। খেলাপি ঋণ থাকার কারণে তার মনোনয়ন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। আপিল করেও মনোনয়ন ফিরে না পাওয়ায় তিনি মা জায়েদা খাতুনকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনী মাঠে থাকায় তাকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করে আওয়ামী লীগ। নিজের মনোনয়ন বাতিল, দলীয় পরিচয় হারানোর পরও মাকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে দৃঢ় অবস্থান নেন জাহাঙ্গীর আলম। প্রচার প্রচারণার সময় বেশ কয়েক দফা তিনি ও তার মা হামলার শিকার হন। প্রচারে বাধা দেয়া, এজেন্টদের হুমকি ও হয়রানি করার অভিযোগ করা হয় জায়েদা খাতুনের পক্ষ থেকে। ভোট গ্রহণের দিন অনেক কেন্দ্রে জায়েদা খাতুনের এজেন্টও দেখা যায়নি। কিন্তু ভোটের ফলে বাজিমাত করেন জায়েদা। মূলত তার ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ছায়ার কাছেই হেরে যান আওয়ামী লীগের প্রার্থী। সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর মেয়র থাকার সময় গাজীপুরে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি বিতর্কিত বক্তব্যের জেরে তাকে দলীয় পদ হারাতে হয়। সাময়িক বরখাস্ত করা হয় মেয়র পদ থেকে।

 

Facebook Comments Box

Posted ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৮ মে ২০২৩

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com