প্রবাস ডেস্ক | বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ | প্রিন্ট | 40 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
স্পেনে বাংলাদেশি কমিউনিটির সূচনা হয় প্রায় ৩৪ বছর আগে। ১৯৮৯ দেশটির রাজধানী মাদ্রিদে তখন হাতেগোনা কয়েকজন বাংলাদেশি অভিবাসী বসবাস করতেন। ধীরে ধীরে কমিউনিটি বড় হতে থাকে। বর্তমানে প্রায় ৭০ হাজার বাংলাদেশি বসবাস করছেন দেশটিতে। ইউরোপের অন্যতম পর্যটন নির্ভর দেশটির রাজধানী মাদ্রিদে বসবাসরত আছেন প্রায় ৩৫ হাজার বাংলাদেশি। তাদের অনেকেই পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। তাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করে। পরিবারের অভিভাবকরা অধিকাংশ কল-কারখানা, রেস্তোরাঁ বা পর্যটন সংশ্লিষ্ট চাকরিতে আছেন। কেউ কেউ ব্যবসা-বাণিজ্যও করেন। নারীদের বড় অংশ ঘর-গৃহস্থালির কাজ করেন, কেউ কেউ চাকরিও করেন।
অভিবাসী বাংলাদেশিদের প্রথম জেনারেশন বা ছেলে-মেয়েদের একটা বড় অংশ এখন পূর্ণ যৌবনে পা দিয়েছে। কেউ কেউ কর্মজীবন শুরু করেছে। অনেকেই পছন্দের মানুষকে বিয়ে করে সংসারও পেতেছে । কিন্তু ছেলে-মেয়েদের একটা বড় অংশ লেখাপড়া শেষ করেনি বা করতে পারেনি। বেশিরভাগই প্রাথমিক এবং ‘ও’ লেভেল থেকেই তারা ঝরে পড়েছে। সংসারের হাল ধরেছে। পরিবার তথা বাবা-মাকে আর্থিক সহযোগিতার জন্য কর্মজীবনে নেমে পড়েছে। তাদের মধ্যে যারা লেখাপড়া শেষ করেছেন, তাদের একজন জুমা আক্তার কালাম। স্পেনে প্রথম বাংলাদেশি চিকিৎসক তিনি।
রোববার মাদ্রিদের ঐতিহ্যবাহী মনক্লোয়া হাসপাতালে যোগদান করেন জুমা। তাঁর এমন সাফল্যে বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন ও অভিবাসীদের মধ্যে বইছে এখন খুশির ঝিলিক। ইউরোপে বাংলাদেশিদের বসবাসের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দেশটিতে প্রথম বাঙালী নারী চিকিৎসক হওয়ায় প্রবাসীরা ও আনন্দে উচ্ছ্বাসিত।
জুমা আক্তার ১৯৯৯ মাদ্রিদের ১৬ জানুয়ারি মাদ্রিদের ঐতিহ্যবাহী মনক্লোয়া হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আবুল কালাম সেলিম। তিনি মাদ্রিদে বাংলাদেশি কমিউনিটির পরিচিত মুখ ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তার আদি-নিবাস বাংলাদেশের কুমিল্লায়। জুমা আক্তার স্থানীয় স্কুলে পড়ালেখা শেষ করে মেডিসিন বিষয় নিয়ে ভর্তি হন উনিভারসিদাদ অটোনোমো মাদ্রিদ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বাবা-মা, দুই বোনকে নিয়ে মাদ্রিদে বসবাস জুমা আক্তারের। তাঁর বড় বোন সুমা নাহিদা আক্তার স্থাপত্য ও নগরায়ন নিয়ে ইউনিভার্সিটি অফ আর্কিটেচার আলকালা দে হেনারেসে অধ্যয়নরত। ছোট বোন জান্নাত আক্তার লন্ডন কিং লো বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন।
জুমা আক্তার বলেন, ছেলে-মেয়েদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হলে বাবা-মার উৎসাহ থাকতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব কিংবা অপপ্রচারে কর্ণপাত না করে আর্থিক ও মানসিকভাবে ছেলে-মেয়েকে সহযোগিতা করতে হবে। আর ছেলে-মেয়েদের মধ্যেও চেষ্টা, সাধনা থাকা প্রয়োজন।
এই সাফল্যে কমিউনিটির মধ্যে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখেছেন তাতে জুমা খুশি উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি ফুল টাইম চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চাই। চিকিৎসাশাস্ত্রে আরও ডিগ্রি অর্জন করতে চাই।’
জুমা বলেন, ‘আমি জন্মসূত্রে স্প্যানিশ হলেও মা-বাবার কল্যাণে বাংলা ভাষায় (কঠিন শব্দ ব্যতীত) কথা বলতে পারি। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও বাংলা সংস্কৃতির প্রতিও রয়েছে গভীর আগ্রহ। আমি বাংলা এবং স্প্যানিশ উভয় সংস্কৃতির মানুষের কাছ থেকে ভালোবাসা পেতে চাই। তাদের সেবা করে যেতে চাই।’
জুমার এমন সাফল্যে বাবা আবুল কালাম সেলিম, বাংলাদেশি মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ভালিয়েন্তে বাংলার সভাপতি মো. ফজলে এলাহীসহ কমিউনিটির লোকজন তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
Posted ২:২৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
nykagoj.com | Stuff Reporter