নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট | 329 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
“আমরা যদি একটি ফুলের অলৌকিক বিষয় পরিষ্কারভাবে দেখতে পেতাম তবে আমাদের পুরো জীবনটাই বদলে যেত।“ আমার কথা নয়,বুদ্ধ বলে গেছেন ।বাক্যটি মিথ্যা না ।প্রকৃতি হচ্ছে আল্লাহ্’র তৈরী শিল্প। প্রকৃতি কখনোই আমাদের সাথে প্রতারণা করে না ।বরং আমরা নিজেরাই নিজেদের সাথে প্রতারণা করি।
“ওগো বিদেশিনী তোমার চেরী ফুল দাও,আমার শিউলী নাও।“ এন্ড্র কিশোরের গানটি মনে পড়ে যায় ।গানটি শুনে খুবই ভালো লাগতো।তখন থেকেই ভাবতাম চেরী ফুল দেখতে কেমন ? ভাবতে ভাবতেই নীল নয়না বিদেশিনীর দেশে চলে এলাম ।প্রবাসজীবনে নিজেকে নিয়ে ভাবার সময়ের বড়ই অভাব।তাই কিছু বছরের জন্য নীল নয়না বিদেশিনীর চেরী ফুল কিংবা আমার শিউলী ফুল থেকে দূরে ছিলাম ।এভাবে যেতে যেতেই পথে দেখা হলো চেরী ফুলের সাথে ।২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত নিউইয়র্ক থেকে ৭০মাইল দূরে পুক্যাপসীতে ছিলাম । এক বছর ভাড়া বাসায় থাকার পর ছোট খাটো নিরিবিলি পরিবেশে বলতে গেলে প্রকৃতির মাঝেই একটি বাড়ি কিনে উঠি।সময়টি ছিল জুলাই মাস।সামারের সময়, প্রকৃতি তাই আরও সুন্দরভাবে নিজেকে সাজিয়েছিল।প্রকৃতির সৌন্দর্যই হচ্ছে ফুল ।নানা রকম সাজ দেখিয়ে শীতকালকে দিয়ে সামার চলে যায় ।
মার্চের শেষ থেকেই স্প্রিং এর আগমন ।এন্ড্র কিশোরের গানের বিদেশিনীর কাছে চাওয়া সেই চেরী ফুলের আবির্ভাব ঘটে এ স্প্রিং এ ।চেরী ফুল কখনো দেখিনি। চেরীফল দেখেছি,খেয়েছি এবং তুলতেও গিয়েছিলাম ।মজার ব্যাপার হলো আমার ধারণা ছিল,চেরী ফুল থেকেই চেরী ফল হয় ।প্রতিবারই মনে করি চেরী ফুল বা ফল গাছ দেখতে যাবো কিন্তু প্লান করতে করতেই গাছে আর কোন চেরী ফল থাকে না ।সারা বছর এই ফল পাওয়া যায় ,তবে গাছে থাকে অল্প সময়ের জন্য ।২৩ বছরে একবার মাত্র পিক করতে পেরেছিলাম।যা হোক,যেটা বলছিলাম আমার সেই নিরিবিলি প্রকৃতির মাঝে বাড়িতেও স্প্রিং চলে আসে। এরই মধ্যে চেরী ফুল গুলো তার অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে যে যার মতো করে দাঁড়িয়ে আছে ।কোন একদিন দরোজা খুলতেই তার অপরূপ সৌন্দর্যে আমি মুগ্ধ ।আমার ঠিক সামনের রাড়িটাতেই চেরী ফুল গাছটি ছিল ।আমি আমার নয়ন দিয়ে প্রত্যেক দিন উপভোগ করতাম তার সৌন্দর্য ।চেরীফুলও অল্প সময়ের জন্য আসে।গোলাপী রংয়ের ফুল গুলো যখন ঝরে পরে যেতো মনে হতো রাগ করে মাটিতে নেমে এসেছে ।গাছ বেচারী দুই তিনটা পাতা নিয়ে কিছু দিন থাকার পর সেটাও ধরে রাখতে পারতো না ।অপেক্ষা পরের স্প্রিং এর জন্য।শিউলী ফুলের সাথে মিল খুঁজে পেলাম ।রোজার সময় সেহেরি খেয়ে ঘুমাতে না গিয়ে পাড়ার দুই তিনটা মেয়ের সাথে শিউলী ফুল কুঁড়াতে যেতাম।তখন এতো দালান কোঠা ছিল না ।প্রায় সব বাড়ির সামনের জায়গাতেই শিউলী ফুল গাছের দেখা পেতাম ।নিচে বিছিয়ে পড়ে থাকা শিউলী ফুলগুলোকেও অপূর্ব লাগতো।সে যুগে ঘেরওয়ালা ফ্রকে করে ফুল গুলো বাসায় নিয়ে আসতাম।এখানেই শেষ না । মালা গাঁথতাম এবং জাফরান রং বানাতাম জাফরংয়ের বোটা দিয়ে ।আমাদের দেশে পড়ে থাকা শিউলী ফুলের সৌন্দর্য আমার মতো গুটিকতক মেয়ের খোঁপায় বা হাতে পরার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল ।চেরী ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিবছর (চেরী ব্লোসম)ফেস্টিবেল উদযাপন করা হয় ওয়াশিংটন ডি সি তে ।হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে এসব ফেস্টিবলে।জাপানেতো কথাই নেই,এত জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে উদযাপন হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।জাপানই আমেরিকাকে বন্ধুত্বের প্রতিক হিসেবে উপহার দিয়েছিল এই সব চেরিফুল গাছ।কি আর করা এ মুহূর্তে জাপানে তো যাওয়া হচ্ছে না ।তাই আমেরিকাতেই দেখবো বলে ঠিক করেছি ।নিউজার্সিতে বসবাসরত ছোট ছেলে প্রান্তকে বললাম,দেখতো চেরী ব্লোসম ফেস্টিবেলের খবর।জানা গেল এপ্রিলের ১ হতে ১৬ তারিখ পর্যন্ত ব্র্যান্স ব্রুক পার্কে ওয়ার্ল্ড ফেমাস চেরী ব্লোসম অনেক গাছ আছে। অবশেষে গত ৪।২।২০২৩ রবিবার রওনা দিলাম ।গিয়ে নিরাশ হয়েছিলাম,কোথায় ওয়ার্ল্ড ফেমাস চেরী ব্লোসম গাছ ?হয়তো যাওয়াটা একটু আগেই হয়ে গেল কি না ?এদেশে সাইনবোর্ড মিথ্যা বলে না ।কি আর করা ছবি তুলে নিজেকে সান্ত্বনা দিলাম নেক্সট বার।
বাংলার বিখ্যাত ব্যক্তি সত্যজিৎ রায় ছোটকালে শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন বরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে দেখা করতে ।কবিগুরু তার উদ্দেশ্যে ছোট একটি কবিতা লিখে বলেছিলেন,এখন বুঝবে না,একটু বড় হলে বুঝবে।কবিতাটি -—
“বহুদিন ধরে ,বহুক্রোশ দূরে ,বহু ব্যয় করি,বহু দেশ ঘুরে দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু -— দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু ।“ এখন আমি নিউইয়র্কে যে ছোট নীড়ে থাকি,সেখানেও ঘর থেকে বের হলেই বড় বড় দুটো চেরী ফুল গাছ আছে।নেক্সট বারের জন্য অপেক্ষার দরকার হবে না ।সবশেষে বলবো ফুলের মতো বাঁচুন এবং আপনার জীবনটাকে রঙিন করুন।
Posted ৭:১২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৩
nykagoj.com | Monwarul Islam