সোমবার ১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

জয়কে নিয়ে রহস্যের জালঃ রেহানা ও পুতুল লাইম লাইটে

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   223 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

জয়কে নিয়ে রহস্যের জালঃ রেহানা ও পুতুল লাইম লাইটে

 

সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে দিন দিন রহস্যের জাল বিস্তার লাভ করছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় তাকে বাংলাদেশে দেখা যায়নি। নির্বাচনের পরও মা প্রধানমন্দ্রী শেখ হাসিনার বিজয় পরবর্তী আনন্দ-উৎসবে তিনি ছিলেন অনুপস্থিত। জয় প্রায় ১০ বছর ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আইটি বিষয়ক উপদেষ্টা। সর্বশেষ গঠিত নতুন ৫ সদস্যের উপদেষ্টাদের তালিকাতেও জয়ের স্থান নেই। নির্ভরযোগ্য ষুত্রের খবর, সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তবে তার চলাফেরা একবারেই সীমিত। বাংলাদেশি একটি কূটনৈতিক সূত্র ্এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সন্টতান হিসেবে জয় ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশেষ মর্যদায় অবস্থান করছেন। শুধুমাত্র বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথেই তার সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রয়েছে। প্রকাশ্য চলাফেরায় তাকে দেখা যাচ্ছে না। এমন গুজবও শোনা যাচ্ছে যে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ নজরদারিতে রয়েছেন তিনি।

এদিকে বংলাদেশের রজনীতিতে এতদিন তাকে মা শেখ হাসিনার উত্তরাধিকার হিসেবে দেখা হলেও সে সম্ভাবনা এখন আর নেই বলে পর্যবেক্ষকমহল মনে করছেন। উপদেষ্টা পরিষদ থেকে তার নাম বাদ পড়া অনকে বার্তাই বহন করে। আওয়ামী লীগের সিনিয়র এক নেতা এই প্রতিবেদককে বলেন, হিসেবের খাতাতেও তার নাম এখন আর নেই। এখন সামনে আনা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা,  ভাগ্নে ববি ও  কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে। গত এক বছর ধরেই পুতুলের ভাবমূর্তি উপরে তুলে ধরতে দেশ ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে তৎপরতা চলছে। দূতাবাস ও হাই কমিশনগুলো এ কাজে তৎপর রয়েছে। আর শেখ রেহানা তো দীর্ঘনি ধরেই লোক চক্ষুর গোচরে রয়েছেন। ছোট বোন শেখ রেহানাকে সার্বক্ষনিক পাশে পাশে রেখেছেন শেখ হাসিনা। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে শেখ রেহানা ও পুতুলকে সঙ্গে নিয়ে ভোট দিতে গেছেন প্রধানমন্ত্রী। রেহানাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবেগ ও ভালোবাসার প্রকাশও সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। অন্তত দু’বার ছোট বোনের গালে শেখ হাসিনার চুমু খাওয়ার দৃশ্য টেলিভিশনের পর্দায় ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা এএফপি সম্প্রতি জয় ও রেহানাকে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। সেখানে আভাস দেয়া হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে জয়ের বিদায়। পুতুল কিংবা রেহানা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উত্তরাধিকারী।

সজীব ওয়াজেদ জয় (৫২) হবেন ক্ষমতায় শেখ হাসিনার উত্তরাধিকারী এমনটিই ছিল সাধারণ ধারণা। তাকে সেভাবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াসও নেয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তাকে দলীয়ভাবে সংবর্ধনাও দেয়া হয়েছ্ েআওয়ামী লীগের ব্যানারে-পোস্টারে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার পাশে তার ছবিও স্থান পেয়েছে। তার জন্মদিনে বাংলাদেশের ডাক বিভাগ সরকারিভাবে তার ছবি দিয়ে স্মারক ডাক টিকিটও প্রকাশ করেছে। তাকে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ করার পর এই ভাবনা আরো দৃঢ় হয়। জয়কে সারা দেশে তুলে ধরা হয় বাংলাদেশকে ডিজিটালে পরিণত করার রূপকার হিসেবে। যদিও এ বিষয়ে শুধু প্রচার-প্রচারণা ছাড়া তার প্রকৃত অবদান সম্পর্কে স্পষ্ট কোন তথ্যই কখনও জানা যায়নি। জানা যায়, তিনি যুক্তরাষ্ট্রেই অবস্থান করতেন এবং এখানেই সম্পদ-সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে তার কিছু কর্মকান্ড এফবিআই-এর নজরে আসায় ধীরে ধীরে সজীব ওয়াজেদ জয় লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যেতে থাকেন। গত বছর ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর অন্য উপদেষ্টাদের মতো সজীব ওয়াজেদ জয়ও প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

নির্বাচন এলো। নির্বাচন গেলো। মা পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। এ সময় শেখ হাসিনাকে ঘিরে বোন পুতুল, খালা রেহানা ও খালাতো ভাই ববি’র সরব উপস্থিতি সবার নজরে এসেছে। কিন্তু জয়কে কোথাও দেখা গেল না। তিনি বাংলাদেশেই নেই।
প্রধানমন্ত্রী তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আর শেখ রেহানাকে নিয়ে ভোট দিলেন। এ সময় তার পাশে আর একজনের উপস্থিতি সবার নজর কাড়ল, তিনি শেখ রেহানার ছেলে ববি। কিন্তু জয় কোথায়? কোনো সংবাদমাধ্যমেই এই খবর পাওয়া গেল না। সজীব ওয়াজেদ জয়ের ২৯ নভেম্বর পদত্যাগের পর আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি গুগল সার্চ করেও। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতার বরাত দিয়ে লিখেছে, জয় চান না রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়তে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে চান। এদিকে এএফপি’র প্রতিবেদনে প্রশ্ন এসেছে, শেখ হাসিনার পর কে? তার যোগ্য উত্তরসূরির অভাবও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গণগ্রেপ্তারের মাধ্যমে বিরোধী দলকে কোনঠাসা করার অভিযোগ রয়েছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনা যদি তার এই মেয়াদ সম্পন্ন করতে পারেন, তবে তখন তার বয়স হবে ৮১ বছর। তিনি হয়ত এ সময়ের মধ্যে তার উত্তরসূরিকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করতে সক্ষম হবেন। শেখ হাসিনার পর দলের কী হবে- তা নিয়ে আওয়ামী লীগের বেশ ক’জন নেতার কাছে প্রশ্ন রেখেছিল এএফপি। কিন্তু বিষয়টির সংবেদনশীলতার কারণে কেউই এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক শাখায় কাজ করা একজন মধ্যম সারির নেতা এএফপিকে বলেন, তিনি এই উত্তরাধিকার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করছেন না।

হাসিনা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা এবং দেশের বংশানুক্রমিক রাজনীতির ঐতিহ্যের প্রতীক। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের পিয়ের প্রকাশ এএফপিকে বলেছেন যে, হাসিনার পরিবারের বাইরে থেকে উপযুক্ত উত্তরসূরি খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
শেখ হাসিনার পিতা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের বিপথগামী সেনা কর্মকর্তাদের হাতে নিহত হন। একই সময়ে শেখ হাসিনার মা, তিন ভাই এবং পরিবারের অন্য সদস্যদেরও হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা (৬৮) সেই সময় তার সঙ্গে বিদেশে ছিলেন। হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার পর তাদের মধ্যেকার বন্ধন আরও দৃঢ় হয়।

এবারের নির্বাচনে রেহানা নিয়মিতভাবে শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রচারে এবং বিদেশি নেতাদের সঙ্গে বিদেশে বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। ৭ জানুয়ারি ভোটের পর এই জুটিকে একসঙ্গে বিজয় উদযাপন করতে দেখা গেছে। লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অবিনাশ পালিওয়াল এএফপিকে বলেছেন, ‘ঢাকার পাওয়ার করিডোরের মধ্যে শেখ রেহানার অভিজ্ঞতা এবং প্রভাব তাকে একজন বিশ্বাসযোগ্য উত্তরসূরি করে তুলেছে’।

৫১ বছর বয়সী সায়মা ওয়াজেদ শেখ হাসিনার দুই সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। গত নভেম্বরে জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তার অভিজ্ঞতার অভাব থাকা সত্ত্বেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক প্রধান হিসেবে মনোনীত করা হয় সায়মাকে। মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেট ওয়াজেদের প্রার্থিতার স্বচ্ছতা এবং স্বজনপ্রীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যদিও অভিযোগগুলো তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। সায়মা ওয়াজেদ তার মায়ের হাই প্রোফাইল কূটনৈতিক সফরে নিয়মিত সদস্য। কিন্তু স্থানীয় রাজনীতিতে তার অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। পালিওয়াল বলেছেন যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি স্বচ্ছ ভাবমূর্তি থাকার কারণে তরুণ বাংলাদেশীদের কাছে তিনি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারেন। প্রায় ২৯ বছরের পারিবারিক জীবনের বিচ্ছেদ ঘটেছে তার। সাবেক স্বামী অর্থ কেলেংকারি মামলায় ভিনদেশী একটি কারাগারে আটক। পুতুল এখন মায়ের সার্বক্ষণিক সঙ্গী।
এই সময়ের সার্বিক পরিস্থিতি এখন এই বাস্তবতাই তুলে ধরছে যে, বাংলাদেশের আগামী দিনের ক্ষমতার বলয় থেকে জয় নির্বাসিত। সেখানে জোরদার অবস্থান শেখ রেহানা আর সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের।

Facebook Comments Box

Posted ৫:৫৯ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৪

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com