বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডামি নির্বাচন নিয়ে উদ্বিগ্ন দিল্লীঃহাসিনাকে বার্তা!

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   214 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

ডামি নির্বাচন নিয়ে উদ্বিগ্ন দিল্লীঃহাসিনাকে বার্তা!

৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সির্বাচন। বাংলাদেশের এই ডামি নির্বাচন নিয়ে সর্তক ভারত। শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতায় রাখার কৌশলে গোটা বাংলাদেশটাই ভারত বিদ্বেষী রাষ্ট্রে পরিনত হতে পারে। এমন আশংকা প্রকাশ করেছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। নেপাল ও মালদ্বীপ প্রশ্নে একই ধরনের ভুলের নজির তাদের রয়েছে। বাংলাদেশে জনসর্মথনের বিবেচনায় আওয়ামী লীগের অবস্থান গত ৫০ বছরের তলানীতে। এমন জরিপ রয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর হাতে। তা নরেন্দ্র মোদিও টেবিলেই। শুধু মাত্র ভারত ভরসায় হাসিনা আবার ক্ষমতায় আসাতে মরিয়া-তা ভারতের সাউথ ব্লক নিশ্চিত। নির্বাচনের নামে বিরোধী দলের নেতাদের ভয়ভীতিতে প্রার্থী করা, নিজ দলের লোকজনদের ডামি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে আনা ও অর্থের হোলি খেলায় নির্বাচনকে অংশগ্রহনমূলক দেখানোর অপরিপক্ক ও অরাজনৈতিক পথে শেখ হাসিনা আগুন নিয়ে খেলছেন। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের বিপরীতে ডামি প্রার্থী দিয়ে নিজ দলের ভেতরে জেলায় জেলায় ও উপজেলা গুলোতে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন। যা দল হিসেবে আওয়ামী লীগের জন্য আত্মঘাতি। এতে দলীয় শৃংখলা ভেঙ্গে পড়তে পারে। নিজ দলের কর্মিরাই ভোটকে কেন্দ্র করে সংঘাতে জড়িয়ে পড়বেন। এমন আশংকা করছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ২০১৪ সালের এক তরফা ও ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে প্রদান জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। এবার এসেছে ডামি নির্বাচন। বারবার এ ধরনের আগুন নিয়ে খেলতে গিয়ে হাত পুড়ে যাবার সম্ভাবনাও থাকে। ইতোমধ্যেই ভারতের উদ্বেগের বার্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঠানো হয়েছে বলে প্রতিবেদক নিশ্চিত হয়েছেন।

নির্বাচন নিয়ে চীনের চাল, যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর মনোভাব,বাংলাদেশের জনগনের অবস্থান ও শেখ হাসিনার ডামি নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে মোদি প্রশাসনে। শংকা নিয়ে মোদি প্রশাসন নিজেদের মধ্যে আলাপআলোচনা করছেন। ইউরোপ, আমেরিকা ও জাতিসংঘের অবস্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শুধু ভারত ভরসায় হাসিনা নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে চাচ্ছেন এমন ধারনা মোদিদের ভাবিয়ে তুলেছে। রাজনৈতিক ও কূটননৈতিক পরিস্থিতিতে তারা এখন নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশের জনগনকে ভারতের প্রতিপক্ষে দাঁড় করানো হচ্ছে কিনা তাও ভাবাচ্ছে তাদের।

গীতিকার ও লেখক ফারায়েজি তার এক কলামে লিখেছেন, একতরফা নির্বাচন রাষ্ট্রের জনমানুষের সার্বভৌমত্বকে ভূলুন্ঠিত করবে, রাষ্ট্র ও জনগণের মাঝে চুক্তি অগ্রাহ্য হয়ে পড়বে, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে এবং ভূ-রাজনীতিতে রাষ্ট্র দাবার ঘুঁটিতে পরিণত হবে। সর্বোপরি রাষ্ট্র চরম বিপর্যয়ে পড়বে। সরকার গণমানুষের মৌলিক অধিকার, ভোটাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা-সহ জীবন রক্ষার অধিকারকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ। এমনকি বৈশ্বিক ক্ষেত্রেও যারা আমাদের বড় বাণিজ্যিক অংশীদার, তাদের সঙ্গেও চরম বৈরী সম্পর্ক গড়ে তুলবে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ-সহ অনেক মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে সরকার ইতিমধ্যে বিরোধপূর্ণ সম্পর্কে জড়িয়েছে। এর অবশ্যই অবসান হওয়া প্রয়োজন। নতুবা ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়াই একমাত্র বিকল্প থাকবে বাংলাদেশের। যে দেশের জনগণ বুকের তাজা রক্ত উপহার দিয়ে স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করলো, সেই স্বাধীন দেশেই জনগণের নিজেদের ভোটাধিকার নেই, এটা অগণিত শহীদদের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা। বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচনের পথ শুধু এটাই ইঙ্গিত দেয় যে, এতে বিদ্যমান রাজনৈতিক সঙ্কট শুধু দীর্ঘায়িত হবে, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্যও চ্যালেঞ্জিং হবে।

দ্য রিও টাইমসে রোকো ক্যালডেরো লিখেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন মৌসুম অশান্ত। এতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক ধরন বিপরীতমুখী। উভয় দেশই একটি স্থিতিশীল এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ সমর্থন করে। কিন্তু তাদের পদ্ধতির মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠু নির্বাচনে জোর দিয়েছে। যারা গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্থ করবে, তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। পক্ষান্তরে নির্বাচনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মনে করে ভারত। তারা এখানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নির্বাচনে কারসাজির অভিযোগের মধ্যে তিনি চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হতে চান।
অন্যদিকে এই নির্বাচন বর্জন করছে বিরোধী জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সহ আরও কিছু দল। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি করছে। বিএনপির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে টানাপড়েনের ইতিহাস আছে। অভিযোগ আছে, ভারতবিরোধী বিদ্রোহীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছে বিএনপি। ফলে শেখ হাসিনার প্রতি তাদের সমর্থন প্রভাবিত হয়েছে।

সরকার সাজানো নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিভিন্ন দলের লোক ভাগিয়ে এনে ডামি নির্বাচন আয়োজন করছে মন্তব্য করে গণতন্ত্র মঞ্চ বলছে, যে ব্যক্তিকে সহিংসতার মামলার আসামি করা হয়েছে তাকে জামিন দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করার মধ্য দিয়ে সরকার প্রমাণ করছে ভুয়া মামলায় বিরোধী দলের প্রায় ২০ হাজার মানুষকে জেলে রেখেছে। বাস পোড়ানের মামলায় জামিন পেয়ে বিএনপি নেতা শাহজাহান ওমর আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে নির্বাচন করছেন। আর বিএনপির মহাসচিব মির্জা আলমগীরকে জামিন না দিয়ে জেলখানায় পাঠানো হয়েছে। সরকারের দালালি করলে জামিন আর বিরোধিতা করলে জেলে রাখার মধ্যে দিয়ে বিচারবিভাগকে দলীয় প্রতিষ্ঠানের মতো ব্যবহারের নির্লজ্জতা দেখাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার।

বিবিসিকে বিএনপির নেতারা ভারত প্রশ্নে তীব্র ভাষায় বক্তব্য রাখছেন। এতদিন তাদেও মধ্যে কিছুটা রাখঢাক ছিল। বিাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপির নেতারা মনে করছেন ‘ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনের কারণেই’ পশ্চিমা বিশ্বের চাপ উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত আরেকটি ‘বিরোধী দলহীন নির্বাচনের’ দিকে এগিয়ে যেতে পারছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। দলটির দাবি ভারত বাংলাদেশের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং পশ্চিমা বিশ্বের চাপ ও বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলোর দাবিকে উপেক্ষা করে দেশটি যে অবস্থান নিয়েছে সেটি তাদের মতে ‘আরেকটি ভুল’। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড: আব্দুল মঈন খান বলছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবন স্পষ্টতই বাধাগ্রস্থ করছে ‘বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের সরকার’।বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছেন, “তারা কি আজ পুনরায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের অজুহাতে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করে ২০১৪ সালের মতো আরেকটি ভুল করতে যাচ্ছে না?”দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলছেন, ভারতের একতরফা সমর্থনের কারণে আরেকটি ভোটারবিহীন নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে পারছে সরকার, যা তাদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিলো।

 

Facebook Comments Box

Posted ১০:১৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com