শনিবার ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকাকে কৌশলগত বার্তা দিতে চেয়েছেন রাজনাথ সিং

জাতীয় ডেস্ক   |   রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   39 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

ঢাকাকে কৌশলগত বার্তা দিতে চেয়েছেন রাজনাথ সিং

গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের নতুন সরকার নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছে না ভারত। শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে দিল্লি ঢাকার কাছ থেকে যে ধরনের সুবিধা পেত, তাকে সমতার জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ইতোমধ্যে দিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ কী ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে এবং তা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে ভারতের সেনা নেতৃত্বকে নির্দেশনা দিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তাঁর এ ধরনের বক্তব্যকে কৌশলগত বার্তা হিসেবে দেখছেন ঢাকার নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।

লক্ষ্ণৌয়ে যৌথ কমান্ডার সম্মেলনে গত বৃহস্পতিবারের ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও চীনের মতো প্রতিবেশীদের বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন। সেনা নেতৃত্বকে তিনি নির্দেশ দেন অপ্রত্যাশিত কিছু এলে, তা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে। শান্তি রক্ষায় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা রাজনাথ।
বাংলাদেশের বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) রাজনীতির মূল বিষয় হচ্ছে ধর্মীয় এবং নিরাপত্তা কার্ড খেলা। এ দলটি ২০১৪ সালে ভারতের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজনৈতিকভাবে কোনো বিপদে পড়লে বা ভোটের ইস্যু এলে ধর্মীয় ও নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে। এ বছরের সাধারণ নির্বাচনেও মুসলিমদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য এবং হিন্দু ধর্ম রক্ষা নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন বিজেপি নেতারা। এ ছাড়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালেও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং আসামে নাগরিকদের জাতীয় নিবন্ধন কার্যক্রম এনআরসির সময় বাংলাদেশিদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা। দলটি মূলত রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যই ধর্ম ও নিরাপত্তা ইস্যু ব্যবহার করে থাকে।

ভারতের উস্কানিমূলক কথাবার্তা নতুন কিছু নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান। তিনি বলেন, একটি কৌশলগত বার্তা দিতে চেয়েছে ভারত। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, বাংলাদেশে অস্থিরতার প্রভাব ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পড়তে পারে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের দিক থেকে এ ধরনের বার্তা এসেছে। তাদের কৌশলগত প্রকল্পগুলো, যেমন– রেল সংযোগ, কনস্যুলেট স্থাপন পুনর্বিবেচনার ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিশেষ করে ভারত হাসিনা সরকারের আমলে এক ধরনের কৌশলগত সুবিধা বাংলাদেশ থেকে পেয়ে এসেছে। তবে ক্ষমতার পালাবদলের ফলে এখন তাদের এ কৌশলগত সুবিধা এক প্রকার স্ট্যাটেজিক বাফার বা শূন্যতায় পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, অভ্যুত্থান এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে ভারতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বাংলাদেশিদের নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। কিন্তু শুরুতে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন এবং এখন নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে এনে সাধারণ ভারতীয়দের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন বিজেপি ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপির দুই শীর্ষ নেতা রাজনাথ সিং ও অমিত শাহ গত ১০ বছরে একাধিকবার বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিদের নিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও অভিবাসন নিয়ে একাধিক বক্তব্য দিয়েছেন। পাশাপাশি মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য তো রয়েছেই। তবে আওয়ামী লীগ সরকার এসব বক্তব্যকে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বলে এড়িয়ে গেছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যের ওপর কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।

রাজনাথ সিংয়ের এ ধরনের বক্তব্য বাংলাদেশ ও ভারতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জন্য সহায়ক নয় বলে মন্তব্য করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমডোর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী। তিনি বলেন, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তাঁর সেনা নেতৃত্বকে দিকনির্দেশনা দিতেই পারেন। তবে বাংলাদেশ নিয়ে এ ধরনের সুনির্দিষ্ট মন্তব্য কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বিমানবাহিনীর সাবেক এ শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশ নিয়ে ভারতে প্রচুর অপপ্রচার হয়েছে। আর দেশটিতে বর্তমান ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার তার ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছে। এখানে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে আমাদের বাহিনীগুলোর মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয়। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকা এবং অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, কেউ যাতে কোনো সুযোগ না নিতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বাংলাদেশ একটি পর্যায়ে নিয়ে আসতে চায়। যাতে দুই দেশই লাভবান হবে। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন একাধিকবার গণমাধ্যমে বলেছেন, জনগণ যাতে অনুভব করে, ভারত বাংলাদেশের ভালো বন্ধু। দুই দেশের যে সোনালি অধ্যায়ের কথা বলা হয়, তা যেন দুই দেশের সরকারের মধ্যে হয়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, ভারতের বিষয়ে মানুষের ক্ষোভের অন্ত নেই। এটি ভারত ও বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের জন্য ভালো নয়।

অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার ১৩ বছরের এক কিশোরীকে বিএসএফ হত্যার পর প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এ ছাড়া বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে সীমান্ত সুরক্ষায় ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সীমান্তে ফেলানীর মতো হত্যাকাণ্ড আর দেখতে চাই না। বিজিবির উদ্দেশে তিনি বলেছেন, সীমান্তে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবেন না। নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করুন।

Facebook Comments Box

Posted ৩:২১ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com