মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

র‌্যাঙ্কিং সেরাদের সঙ্গে মুনিরের অবিচার

খেলা ডেস্ক   |   সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   47 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

র‌্যাঙ্কিং সেরাদের সঙ্গে মুনিরের অবিচার

কয়েক বছর আগেও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হলে টেবিল টেনিসের খেলোয়াড়দের অংশ নিতে হতো বাছাই প্রক্রিয়ায়। সেখান থেকে র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা চারে থাকা খেলোয়াড়ই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতেন। দু-তিন বছর ধরে যোগ্যতার সেই মাপকাঠি নির্ধারণের বাছাই প্রক্রিয়া কিংবা র‌্যাঙ্কিং প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে না বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশন। ‘অনিয়ম’কে নিয়ম বানানোর এমন অভিযোগ আছে ফেডারেশনের সহসভাপতি খন্দকার হাসান মুনিরের বিরুদ্ধে।

শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা চারে থাকা খেলোয়াড়কে বাদ দিয়ে বিমান ভাড়া পাওয়ার আশায় বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলোয়াড়কে অগ্রাধিকার দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। দেশের চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হাসান মুনিরের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতিসহ আরও নানা অভিযোগ উঠেছে। যদিও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টিটির সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক।

মে মাসে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৯ টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ। এই প্রতিযোগিতাকে সামনে রেখে গত মাসে হয়েছে প্রাইজমানি র‌্যাঙ্কিং টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতা। যেখানে অনূর্ধ্ব-১৫ বয়সী থেকে শুরু করে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী খেলোয়াড়সহ মোট ২৪ জন অংশ নেন। যাতে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় টুর্নামেন্টের জন্য অনূর্ধ্ব-১৯ দলের জন্য চূড়ান্ত করা হয় খৈই খৈই সাই মারমা, সামান্তা হোসেন তুষি, ঐশী রহমান ও রেশমিকে।

কিন্তু অনূর্ধ্ব-১৫ খেলোয়াড়দের নিয়ে আলাদা করে কোনো র‌্যাঙ্কিং প্রতিযোগিতা হয়নি। তারা সবাই খেলেছে অনূর্ধ্ব-১৯ বয়সী খেলোয়াড়দের সঙ্গে। সেই হিসাবে টুর্নামেন্টের র‌্যাঙ্কিংয়ের বিচারে যারা সেরা চারে আছে, তাদেরই খেলার কথা শ্রীলঙ্কায়। কিন্তু র‌্যাঙ্কিংয়ের তোয়াক্কা না করে হাসান মুনির নিজের পছন্দের খেলোয়াড়দের একটা তালিকা তৈরি করেন। যেখানে নেই র‌্যাঙ্কিংয়ে সাত নম্বরে থাকা লক্ষ্মী দেবনাথ। অথচ র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথম ছয়জনের বয়স বেশি হওয়ায় তারা অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্টে খেলতে পারবে না। সে হিসাবে অনূর্ধ্ব-১৫ বয়সীদের র‌্যাঙ্কিংয়ে লক্ষ্মী দেবনাথের অবস্থান চলে আসে এক নম্বরে।

সেটা না করে র‌্যাঙ্কিংয়ে ৯ নম্বরে থাকা বৈশাখী খাতুন, ১০ নম্বরে আসমা খাতুন ও ১১ নম্বরে থাকা শ্রাবন্তী দেবনাথকে নিয়েছেন মুনির। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এই তিন ক্রীড়াবিদের বাইরে রাজশাহীর বুলবুলিকেও চূড়ান্ত করেছিলেন মুনির। টিটি ফেডারেশনের ক্ষমতাধর এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছেন অনেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খেলোয়াড়ের দাবি, তাঁর সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে, ‘নিজের ইচ্ছামতো প্লেয়ারকে বিদেশে টুর্নামেন্ট খেলানোটা দুই থেকে তিন বছর ধরে করে আসছেন তিনি (হাসান মুনির)। আগে নিয়ম ছিল জাতীয় দলে যে আটজন আছেন তাদের ক্যাম্পে ডাকা হতো, পরে তাদের ট্রেনিং করানোর পর যে পাঁচজন ভালো করত, তাদের নিয়ে যাওয়া হতো। কিন্তু এখন তাঁর ইচ্ছামতো নিয়ে যান। আর বিকেএসপির খেলোয়াড় নিলে বিমান ভাড়া লাগবে না। তাহলে এই টাকাটা তিনি কী করেন? আমি যতদূর জানি, সাউথ এশিয়ান টেবিল টেনিস থেকে একটা বাজেট আসে। এসব টুর্নামেন্টের খরচ তো সাউথ এশিয়ান থেকে আসে।’

গত বছর ভারতে সাউথ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে খেলোয়াড়দের বিমানে নিয়ে গিয়ে সড়ক পথে ফেরানো হয়েছিল। যদিও কথা ছিল আকাশ পথেই দেশে ফিরবেন খেলোয়াড়রা।

ক্ষমতাবলে একটা ফেডারেশনের সবকিছু দেখভালের দায়িত্ব সাধারণ সম্পাদকের। কিন্তু টিটি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে একপ্রকার উপেক্ষিত করে একাই সব সিদ্ধান্ত নেন হাসান মুনির। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলমের ব্যাখ্যা, ‘আমি ওকে (মুনির) দিয়ে কাজ করাই। ফেডারেশনে ও একটু বেশি সময় দেয়। আমি হয়তো রাজনৈতিক বা অসুস্থতার কারণে একটু কম সময় দিই। আমি শতভাগ সময় দিতে পারি না। কিন্তু আমার কথা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। প্লেয়াররা কোচিংয়ে যেখানে যায়, তাদের খাওয়া-দাওয়া, টাকা-পয়সা– এগুলো তো আমাকেই করতে হয়। মুনির হয়তো দৃশ্যমান আছে। আমি হয়তো দৃশ্যমান নেই। পার্থক্যটা এখানেই।’

র‌্যাঙ্কিং প্রক্রিয়া অনুসরণ না করার অভিযোগ অস্বীকার করেননি হাসান মুনির। তাঁর দাবি গত চার বছরে জুনিয়র ন্যাশনাল হয়নি। তাই এবার অনূর্ধ্ব-১৫ বয়সী খেলোয়াড়দের আলাদা ডাকা হবে এবং সাউথ এশিয়ান জুনিয়র টুর্নামেন্টের জন্য নির্বাচন করা হবে। আর বিকেএসপি তাদের খেলোয়াড়ের বিমান ভাড়া মাঝে মাঝে দিলেও সব সময় দেন না বলে গতকাল জানান হাসান মুনির, ‘বিকেএসপির খেলোয়াড়রা খেললে বিকেএসপি মাঝেমাঝে তাদের বিমান ভাড়া দেয়। সর্বশেষ যে টুর্নামেন্টে খেলেছিল আমাদের বিমান ভাড়া দেওয়ার কথা ছিল, সেটা তারা দেয়নি। যদি এটাই হতো আর আমরা যদি বিকেএসপিকে প্রাধান্য দিতাম, তাহলে রামহিম, হৃদয় এরা কিন্তু উঠে আসত না। আমরা টুর্নামেন্টের জন্য বিকেএসপির কাছে শুধু নাম চেয়েছি। অনূর্ধ্ব-১৫ প্লেয়ার কে কে আছে। আর টেবিল টেনিস ফেডারেশন এতটা হীন অবস্থায় নয় যে, বিকেএসপির কাছ থেকে অর্থ সহযোগিতা পাব বলে তাদের পাঠাব। এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে টিম গেল, সেখানে কিন্তু বিকেএসপির প্লেয়ার ছিল, সেখানে তো কোনো অর্থ দেয়নি। যে অভিযোগ করেছে এটা ঠিক না।’

কিন্তু অভিযোগ উঠেছে বিকেএসপি যে প্লেন ফেয়ারের টাকা দেয়, সেখানে নাকি একটা অনিয়ম হয়, যেটার সঙ্গে নাকি আপনি জড়িত, ‘প্রমাণ ছাড়া এসব কথা বলা ঠিক না। আর টেবিল টেনিস ফেডারেশনে বিকেএসপি অর্থ দেবে, সেটা ঠিকভাবে পরিচালিত হবে না, তা কিন্তু নয়। আমরা কোথাও গেলে সেটার পাই পাই করে হিসাব নেওয়া হয়। প্লেনের ভাড়া, ট্রেনের ভাড়া কত, বাসের ভাড়া কতো, ট্যাক্সি ভাড়া কত প্রতিটি আলাদা আলাদা করে সাবমিট করা হয়।’

Facebook Comments Box

Posted ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com