বিনোদন ডেস্ক | বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট | 116 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
‘কথা আছে, কথা আছে, আমার কিছু কথা আছে। আমি সেটা বলবোই’ এই গানের মাধ্যমে তরুণ নির্মাতা তপু খান তাঁর প্রথম নির্মিত চলচ্চিত্র ‘লিডার –আমিই বাংলাদেশ’-এ দেশের সমাজব্যবস্থা, রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতির খণ্ডচিত্র তুলে ধরে দর্শকদের উদ্দেশে নানা কথা বলেছেন। সমসাময়িক এবং বাস্তবসম্মত বিষয় নিয়ে শুভ্র রাহার সুরে, তাবিব মাহমুদের লেখা এবং গাওয়া এই র্যাপ গানটি শুরুতেই ব্যবহার করে দর্শককে সিনেমা হলে বসিয়ে রাখবার জন্য নির্মাতার প্রথম চেষ্টা। এতেই বোঝা যায় গল্পটি কোন দিকে নিয়ে যেতে পারে।
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ঘটে যাওয়া অসংগতিপূর্ণ নানা ঘটনা, তার প্রতিবাদ এবং প্রতিকারের উপায় তুলে ধরে ‘লিডার–আমিই বাংলাদেশ’ এর চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন যৌথভাবে দেলোয়ার হোসেন দিল এবং তপু খান। সিনেমা হলে বসে ছবি দেখার সময় দর্শক হিসেবে প্রতি মুহূর্তেই মনে হবে নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া চেনাজানা ঘটনার খণ্ডচিত্র দেখছি।
‘আমি আমার দেশকে নিজের মহল্লা মনে করি আর মহল্লাকে নিজের ঘর। নিজের ঘর, নিজের মহল্লা, নিজের দেশকে পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব তো আমাদেরই’– অথবা ‘অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি দেখে প্রতিবাদ করুন’। কিংবা ‘দেশকে ভালোবাসুন, দেশের মানুষকে ভালোবাসুন’। এই সংলাপগুলো মানুষ হিসেবে আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভাবাবে, নাগরিক হিসেবে দেশের প্রতি দায়িত্বশীল করবে। জাহিদ আকবরের লেখা নাভেদ পারভেজের সুরে, ইমরান এবং কোনালের কণ্ঠে সুরমা সুরমা গানটি বেশ ভালো লেগেছে।
দেশের এক নম্বর সুপারস্টার শাকিব খান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অভিনয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। প্রতি মুহূর্তেই চরিত্রটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে উপস্থাপন করেছেন। কখনও কখনও তাঁর প্রতিবাদী কণ্ঠ এবং অভিব্যক্তি দর্শককেও প্রতিবাদী করে তুলেছে। বুবলির অভিনয় ভালো লেগেছে। মিশা সওদাগর বরাবরের মতোই তাঁর অভিনয় দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন [যদিও চরিত্রের ভিন্নতা ছিল না, তাঁকে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে দর্শক দেখতে চায়], সুব্রত, শহীদুজ্জামান সেলিম, সমু চৌধুরী, খাইরুল বাশার, মিলি বাশার, টুটুল চৌধুরী থেকে শুরু করে সবাই যাঁর যাঁর চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন। অনেক অভিনয়শিল্পীর ভিড়ে নবীন অভিনেতা স্মরণ সাহাকে চোখে পড়েছে।
বাপ্পা মজুমদারের সংগীতায়োজন খুবই ভালো লেগেছে। বিশেষ করে বিরতির পর আবহসংগীতের ব্যবহার ছবির গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। পুরো ছবিতেই রানা আখন্দের সাউন্ড ডিজাইন ভালো ছিল। প্রায় ৮০ ভাগ শুটিং এফডিসিতে হওয়ায় লোকেশন এর ভিন্নতা ছিল কম। কিন্তু পুরো এফডিসিতেই একাধিক ভিন্নভিন্ন সেট হওয়ায় তা বিরক্তির কারণ হয়নি। শিল্প নির্দেশক রহমতুল্লাহ বাসুকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। অ্যাকশন দৃশ্যে আরমান হোসেন বরাবরের মতোই ভালো করেছেন। কস্টিউম ভালো ছিল। ছবির প্রথমভাগে অর্থাৎ বিরতির আগ পর্যন্ত চিত্রনাট্য খানিকটা ধীরগতির মনে হলেও বিরতির পরে গিয়ে গতি বেড়েছে। সম্পাদনায় আরেফিন সরকারকে আরও একটু সচেতন হওয়া উচিত ছিল। বাপ্পা মজুমদারের ‘আমিই বাংলাদেশ’ টাইটেল গানটি অসম্ভব ভালো লেগেছে। ছোটোখাটো অসংগতি ছাড়া পুরো চলচ্চিত্রটি নির্মাতা তপু খান দর্শক আকৃষ্ট করতে পেরেছেন, এটিই নির্মাতার সার্থকতা।
প্রযোজক আশিকুর রহমানকে ধন্যবাদ জানাই এমন একটি চলচ্চিত্রে অর্থলগ্নি করার জন্য। বর্তমানে দেশের সেরা অভিনেতা শাকিব খানের কণ্ঠে– আমি চাই বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে এমন একটা মানুষ গড়ে তুলতে, যারা রাজনীতি না করেও একেকজন একেকটা লিডার হবে। আমরা জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস, আমরাই সরকার, আমরাই লিডার, আমরাই বাংলাদেশ সংলাপটি যথার্থ।
লেখক: চলচ্চিত্র নির্মাতা
Posted ১:০০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৩
nykagoj.com | Stuff Reporter