
নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট | 378 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটের অঘোষিত হর্তাকর্তা তিনি। কনস্যুলেট অফিসই শুধু নয়, জাতিসংঘে বাংলাদেশের মিশনেও রয়েছে তার প্রতিপত্তি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, নতুন কোন কনসাল জেনারেল কিংবা স্থায়ী মিশনে কোন কর্মকর্তা নিউইয়র্কে এলেই তাদেরকে তার পরামর্শ গ্রহণ করতে হয়। দীর্ঘদিন ধরেই এটা হয়ে রয়েছে এই দুই অফিসের অঘোষিত রীতি। বিশেষ করে কনস্যুলেটের প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে তার আধিপত্য। তাকে নিয়ে তটস্থ থাকেন স্টাফরা। অফিসের যে কোন বিষয়ে খবরদারি করাটা তার নৈমিত্তিক কাজ। তার বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস কারো নেই। পান কেনা থেকে শুরু করে সকল ভিআইপি আয়োজনে তিনিই থাকেন মধ্যমনি। অফিসের যে কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তার ইশারা ছাড়া গৃহীত হয় না বলে শোনা যায়।
কনস্যুলেটের এই ক্ষমতাধর ব্যক্তিটি কে? বাংলাদেশি কমিউনিটির অধিকাংশ মানুষের কাছেই তিনি খুব পরিচিত। নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটে তার পদার্পন ১৯৯৬ সালে। তখন থেকেই, মাঝে বিএনপি আমল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের সময়টা বাদ দিয়ে তিনি একটানা বহাল আছেন এই কনস্যুলেটে। জানা যায়, কনস্যুলেটে তার এই একটানা বহাল থাকার পেছনে আশীর্বাদের হাত প্রসারিত রয়েছে তার ভাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ঘনিষ্ঠ নকিবউদ্দিন মানুর। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবনে, যখন তিনি জেল জুলুম ও অত্যাচারের মধ্য দিয়ে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন এবং পরে ১৯৯১ সাল থেকে বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তখন তার সার্বক্ষনিক ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন তিন সাহসী যুবক। তারা হলেন বাহাউদ্দীন নাসিম, নকিব উদ্দিন মানু ও মৃনাল কান্তি দাস। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা শেখ হাসিনার সাথে ছিলেন। ৩২ নম্বরের বাড়ি কিংবা সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী থাকাবস্থায় ২৯ মিন্টু রোডস্থ ভবনই ছিল তাদের ঠিকানা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসে। নাসিম প্রধানমন্ত্রীর সহকারি একান্ত সচিব ও মানু ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি পদে নিযুক্তি লাভ করেন। যে কোন কারণেই হোক মৃনাল ছিটকে পড়েন ক্ষমতার বলয় থেকে। অবশ্য ২০০১ সালে আওয়ামী রাজনীতিতে আবার সক্রিয় হন তিনি। বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। নাসিম সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
নকিব উদ্দীন মানুু প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি হবার পরই কনস্যুলেটের এই প্রতাপশালী ব্যক্তির ভাগ্য খুলে যায়। তিনি মানুর আপন ভাই। নিয়োগ পান নিউইয়র্ক কনস্যুলেটে ১৯৯৬ সালে। ২০০১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে তিনি কনস্যুলেটে পুনর্বহাল হন। তখন থেকে এখনও রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশ থেকে মন্ত্রী, এমপি ও বড় আমলা এলে তার ব্যস্ততা বেড়ে যায়। কনস্যুলেট এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের পক্ষে জেএফকে বিমানবন্দরের কাজকর্মে তার একচেটিয়া খবরদারির কথা সর্বজনবিদিত। অবশ্য তার চাকরির পদটাই এমন। কমিউনিটির লোকজনের ভাষায় তিনি কনস্যুলেটের অঘোষিত নিয়ন্ত্রক। কমিউনিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে থাকে তার সরব উপস্থিতি ও খবরদারি। তার অবশ্য প্রশংসাও রয়েছে। তার কাছে পৌঁছাতে পেরেছেন এবং কোন কাজের জন্য তদবির করেছেন এমন কেউ কখনও নিরাশ হন নি। সেটা নো ভিসা, পাওয়ার অব এটর্নি, পাসপোর্ট সংক্রান্ত বা অন্য যে কোন বিষয়েই হোক। এভাবেই চলছে কনস্যুলেটে তার ২৭ বছরের চাকরি জীবন।
Posted ৩:৪৬ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৩
nykagoj.com | Monwarul Islam