শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ষ্ট্রিট’ নামকরণ অনুষ্ঠানে বাঙালীরা অবহেলিত এবং উপেক্ষিত কেন ?

এস. কে. সরকার   |   বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   238 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ষ্ট্রিট’ নামকরণ অনুষ্ঠানে বাঙালীরা অবহেলিত এবং উপেক্ষিত কেন ?

 

নিউইয়র্ক শহরকে বলা হয় পৃথিবীর রাজধানী। আর এই শহরের গুরত্বপূর্ণ একটি এলাকা জ্যাকসন হাইটস। জ্যাকসন হাইটস বাঙালীদের রাজধানী হিসেবে খ্যাত। এখানকার সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়কের নাম ৭৩ ষ্ট্রীট। গতকাল থেকে সেই নাম পরিবর্তন হয়ে হলো ‘বাংলাদেশ ষ্ট্রীট’।

এই নাম পরিবর্তন করার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বাঙালী জাতির মুকুটে আর একটি পালক যুক্ত হলো। গর্ব করার মত আর এক ইতিহাস সৃষ্টি হলো। প্রবাসী বাঙালীর অর্জনে যুক্ত হলো নতুন দিগন্ত।
গত কাল ছিল ২৬ মার্চ । স্বাধীনতা দিবস। সড়কটি উদ্বোধনের জন্য আজকের এই সুমহান দিনটিই বেছে নেয়া হয়েছে। ‘বাংলাদেশ ষ্ট্রীট’ হওয়ার মধ্য দিয়ে ৩০ লক্ষ শহীদ, ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত লুন্ঠন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মান জানানো হলো। তাই কাল অনুষ্ঠানে উৎসবের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। অনেক বাঙালি আবেগে কেঁদেও ফেলেছিল। সমবেত কন্ঠে ‘আমার সোনার বাঙলা গান গেয়েছেন’। অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য দেন জ্যাকসন হাইটসের কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষানান। আরও বক্তব্য দেন সিনেটর মাইকেল জিনারিজ, কংগ্রেস সদস্য স্টিভেন রেগা, ক্যাটলিনা ক্রুস, জেসিকা গুঞ্জলেস রোজাস, সিটি কাউন্সিলর লিন্ডা লি প্রমুখ।
১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে দেশ স্বাধীন হয়। সেই দিন মুক্তি পাগল মানুষ বাংলাদেশ সৃষ্টি উল্লাসে আত্মহারা হয়ে পড়ে। খুশীর উত্তাল ডেউ বয়ে যায় টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। কিন্ত এই খুশীর মাঝেও দুখের একটা তীক্ষè কাটা বুকের মাঝে চিন চিন করে বেজে উঠেছিল। তার কারণ স্বজন হারার বেদনা। সড়কের নাম পরিবর্তন হয়ে বাংলাদেশ ষ্ট্রীট হওয়ায় যেমন অনাবিল আনন্দ ছিল। তেমনি বুকে বেদনারও বিশাল কালো মেঘ জমে ছিল।

সেই বেদনাটা কি ? উদ্বোধন অনুষ্ঠানের সময় কোন বাঙালিকে জ্যাকসন হাইটসের কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষানান তার ধারের কাছে ঘেষতে দেয় নাই! কাউকে বক্তৃতা করা তো দূরের কথা,অ আ ক খ বলতে দেয় নাই।
শুধু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখর কৃষানান উপস্থিত কয়েক জন বাংলাদেশীর নাম উচ্চারণ করেছেন। তাতেই তারা খুশিতে গদগদ হয়েছেন। ধন্য হয়েছেন। এ যেন ‘অমুক বলেছে তালতো ভাই আনন্দেও আর সীমা নাই’।
কিন্ত বুদ্ধি বেশী,আক্কেল কম বাঙালী বুঝতেই পারলো কি সুক্ষ্ম কৌশলে, বাঙলাদেশীদের এই অনুষ্ঠানে চরম অবজ্ঞা করা হয়েছে। একেবারে সচেতন ভাবে বাঙালিকে উপেক্ষিত করা হয়েছে!
কেন এমন হলো ? কেন কাউকে বক্তব্য দিতে দেয়া হলো না ? এই অনুষ্ঠানে কি একজন বাংলাদেশীরও বক্তব্য দেয়ার অধিকার ছিল না ? দাবীদার হতে পারে না ?
যেহেতু স্বাধীনাতা দিবসের দিন বাংলাদেশ ষ্ট্রীট নামকরণ করা হলো। মূলস্রোতের প্রতিটি বক্তাই বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করলো। নিউইয়র্ককে সুন্দর করে গড়তে সম্মানিত ট্যাক্সি ভাইদের কথাসহ প্রবাসী বাংলাদেশীদের অবদানের কথা বললো। কিন্ত কাউকে বক্তব্য দিতে দেয়া হলো না। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন একজন বাঙালি, যাকে বাংলাদেশী কমিউনিটির কোন অনুষ্ঠানে কোন দিন কেউ দেখে নাই।
কেন এমন হলো ? কারণ কি?

আমার কাছে এর কয়েকটি কারণ মনে হয়।
এক. বাংলাদেশীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করার মত এখনও সে রকম যোগ্য নেতৃত্ব নিউইয়র্কে সৃষ্টি হয় নাই।
দুই. এই অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বাঙালি নেতাদের কোন সুনিদির্ষ্ট পরিকল্পনা ছিল না।
তিন. প্রতিহিংসা পরায়ন বাঙালি কেউ কাউকে সহ্য করতে পারেন না। সেই বিভাজন থেকেই ঐক্যবদ্ধ হতে ব্যর্থ হন। যার জন্য এখানে বাংগালিরা কোন জোড়ালো ভূমিকা রাখতে পারেন নাই।
চার. হয়তো শেখর কৃষানানের কানে গিয়েছে যে. এই রাস্তার নামকরণ করার ব্যাপারে দুই/ একটি বাংলাদেশী সংগঠন এবং কয়েকজন ব্যক্তি দাবীদার। তাই শেখর কাউকে বক্ততা করার সুযোগ না দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, এখানে তার অবদান ছাড়া আর কারো কোন অবদান নাই।

পাচ. শেখর হয়ত বাংগালিদের চরিত্র ইতিমধ্যে বুঝে গিয়েছেন। তার ধারণা,একজনকে বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ দিলে আরও কয়েকজনকে সেই সুযোগ দিতে হবে।
ছয়. কোন একজনের নাম ঘোষনা করতে হয়তো অনেকেই তার বিরোধীতা করবে।
কিন্ত সব কথার শেষ কথা, বাঙলাদেশীদের পক্ষ থেকে অবশ্যই কাউকে না কাউকে বক্তব্য দেয়া উচিত ছিল। সে ক্ষেত্রে কোন বির্তক এড়াতে বাংলাদেশ সোসাইটির পক্ষ থেকে একজন বক্তব্য দিতে দিলে কোন বিতর্কের সৃষ্টি হতো না।
বাংলাদেশী কমিউনিটির কোন নেতাকে বক্তব্য দিতে না দেয়ায় একটি বিষয় স্পষ্ট যে, কারো সুপারিশে,কারো পরামর্শে বা কারো তদ্বিরে ‘বাংলাদেশ ষ্ট্রীট’ নাম হয় নাই। জ্যাকসন হাইটস, এলর্র্মহাষ্ট ও উডসাইডের বিশাল সংখ্যক বাঙালী ভোটারদের কথা মাথায় রেখেই এই নাম করা হয়েছে। কারণ শেখর জানেন জনগণই ক্ষমতার মূল উৎস। তাই ‘বাংলাদেশ ষ্ট্রীট’ নামটি হওয়ার সম্পূর্ণ দাবীদার ও কৃতিত্ব বাংলাদেশী সম্মানিত ভোটারদের।

তবে হ্যা, অনুষ্ঠান শুরুর আগে ও পরে ডজন খানেক বাঙালি ম্যারথন বক্তৃতা দিয়েছেন। সেটি শেখড় কৃষানান আসার আগে ও পরে। কোন জনসভা শুরু আগে মাইকে যেমন বলা হয়, ‘ভাইসব আপনার ধর্য্য ধরে বসে পড়–ন,এক্ষুনি আমাদের নেতা এসে পড়বেন’- এই রকম পরিবেশে। এবং এদের একেক জনের বক্তব্য শুনে মনে হয়, এই রাস্তার নামকরণ তিনিই করেছেন। তার অবদান সবচেয়ে বেশী।

কোন বাংলাদেশীকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে না দেয়ার কারণ জানা উচিত ছিল। কেন একজন বাঙালিকেও কিছু বলার সুযোগ দেয়া হলো না , তার জন্য অনুষ্ঠান শেষে একটা প্রতিবাদও থাকা উচিত ছিল। অধিকার কেউ ইচ্ছা করে দেয় না। অধিকার আদায় করে নিতে হয়।
শেখড় কৃষানান যখন মূলধারার নেতা-নেত্রীদের সাথে নিয়ে বক্তৃতা করছিলেন, তখন বাংগালি নেতাদের দেখে এতিম মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল-মেলায় পথ হারানো কোন অনাথ শিশু ঠায় দাড়িয়ে আছে।

শেখর কৃষানানকে অভিনন্দন । (লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া)।

Related Posts

Facebook Comments Box

Posted ৮:২৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com