
নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২৫ | প্রিন্ট | 130 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ড.ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও জনমত গড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছে। দেশে না পারলেও প্রবাসে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিরোধী আন্দোলনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরাসরি নির্দেশনা রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার। তিনি নিজেই প্রতিদিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কোন না কোন নেতার সাথে টেলিফোনে কথা বলছেন। তার নির্দেশনার সরাসরি দেখভাল করছেন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে বসবাসরত ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। সরকার বিরোধী আন্দোলনের আর্থিক খরচের বিষয়টি দেখছেন জয় নিজেই।
দৃশ্যত সংগঠনগতভাবে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে এখন শক্তিশালী। গত ১৭ বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ছিল খন্ডবিখন্ড একটি সংগঠন। পরিণত হয়েছিল ‘সেপ্টেম্বর লীগে’। শেখ হাসিনা প্রতিবছর সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারন অধিবেশনে যোগ দিতে এলেই বহুধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ নড়েচড়ে উঠতো। ডা.মাসুদুল হাসান, নিজাম চৌধুরী, প্রদীপ রঞ্জন কর ও ড. সিদ্দিকুর রহমানরা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিতেন। হোটেলে গিয়ে নেত্রীর কাছে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিলই ছিল ব্রত। প্রধানমন্ত্রীকে নাগরিক সংবর্ধনার প্রশ্ন এলেই সবাই মিলে সিদ্দিক বিরোধিতায় নেমে পড়তো। তাদের প্রধান মিশন থাকতো যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে যাতে ড.সিদ্দিকুর রহমান কোনভাবেই সভাপতিত্ব করতে না পারেন। শুরু হতো সিদ্দিক ঠেকাও আন্দোলন। আর এতে তা দিতেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন। বাধ্য হয়ে হাসিনা আমলা বা তৃতীয় কাউকে দিয়ে অনুষ্ঠান করার পরামর্শ দিতেন। সাইডলাইনে বসিয়ে রাখা হতো সভাপতি সিদ্দিক ও সাধারন সম্পাদক আজাদকে। মাঝেমধ্যে অনেকে শ্লোগানও দিতেন ‘নো মোর সিদ্দিক’। রহস্যজনক কারনে এই সিদ্দিকের নেতৃত্বেই হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র কমিটি জিইয়ে রেখেছেন ১৪টি বছর। শেখ হাসিনা নিউইয়র্ক ত্যাগ করলেই ঝিমিয়ে পড়তো যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। আর ড. সিদ্দিকুর রহমান বাংলাদেশে গেলে তার সাথেই আওয়ামী লীগ চলে যেত ঢাকা কিংবা বগুড়ায়। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের টিকিও পাওয়া যেত না। নিজাম চৌধুরী ও ইঞ্জিনিয়ার ফরাসত আলীরা সেপ্টেম্বর ছাড়া অধিকাংশ সময় ব্যাংক বীমার মালিক হয়ে থাকতেন ঢাকায়।শেখ হাসিনা প্রতি সপ্তাহেই নিউইয়র্কের নেতাকর্মিদের উদ্দেশ্যে ভার্চুয়াল বক্তব্য দিচ্ছেন। জিইয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ।
৫ আগষ্ট ২০২৪ ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর পাল্টে গেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। তারা এখন অনেক সংঘবদ্ধ। গত ৫ মাসে তারা যতটি প্রোগ্রাম করেছে গত ৫ বছরেও করতে পারেনি। আর তা করলেও নবান্ন, ডাইভারসিটি প্লাজা কিংবা বাংলাদেশ প্লাজার নীচে সবোর্চ্চ ৩০—৪০ জন নেতাকর্মি নিয়ে। যতজন সভায় থাকতেন, তারাই ছিলেন বক্তা। এখন প্রায়শই তাদের ব্যয়বহুল কুইন্স প্যালেস ও গুলশান ট্যারেসে অনুষ্ঠান করতে দেখা যায়। ক্ষমতায় থাকাবস্থায় কর্মিদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে হল ভাড়া ও খাবার বিল দিতে দেখা গেছে। এখন শতশত লোকের সমাবেশে তাদের খরচের জন্য নেতাকর্মিদের কাছ থেকে টাকা তুলতে দেখা যায় না। একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের জন্য ৩ থেকে ৪ মিলিয়ন ডলারের বরাদ্দ রয়েছে । তা খরচ হচ্ছে সরকার বিরোধী আন্দোলন ও লবিষ্ট ফার্ম নিয়োগ প্রক্রিয়ায়।
শেখ হাসিনার হাতে এখন অফুরন্ত সময়। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিদের সাথে নিয়মিত কথা বলছেন। গত ৫ মাসে ৮টি সমাবেশে ভিডিও বাতার্য় বক্তব্য দিয়েছেন। শতাধিক বার নেতাকর্মিদের সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন। আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে শতশত কর্মির উপস্থিতিও লক্ষনীয়। বিভিন্ন মেরুর নেতাদের এখন একসভায় মিলেমিশে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। গত বেশ কয়েকটি সভায় ড. সিদ্দিক, ড.নবী, প্রদীপ রঞ্জন কর, ড.মাসুদুর রহমান, ফরাসত আলী, আব্দুর রহিম বাদশা,আশরাফুজ্জামান, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, আবুল হাসিব মামুন, নুরুল আমিন বাবু ও ইবাদুর রহমান চৌধুরীদের একসাথে বসতে দেখা গেছে। যা হাসিনার উপস্থিতিতে সেপ্টেম্বর ছাড়া দেখা ছিল বিরল। এমনি একটি সভা হবে ১২ জানুয়ারি গুলশান ট্যারেসেতে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যে। সেখানে শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল বক্তব্য রাখবেন। দলের নেত্রীকে ভার্চুয়াল বক্তব্যে আনতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতারা বেশি উৎসাহী।
ড.ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জনমত গড়ে তুলতে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও তাদের সর্মথকরা। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত শেখ হাসিনার সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এই জনমত গঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ৩ মিলিয়ন ডলারেরও অধিক তহবিল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে লবিষ্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগের সর্মথক ও বেশ কিছু বুদ্ধিজীবি সরসাসরি জয়ের সাথে কাজ করছেন। তাদের মধ্যে অনেকে মূলধারা রাজনীতির সাথেও জড়িত। ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথের পর তারা অলআউট লবিং এ নেমে পড়বেন। ইতোমধ্যেই তারা রিপাবলিকান পার্টির কংগ্রেসম্যানদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। (সূত্র-আজকাল)
Posted ৫:০৮ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২৫
nykagoj.com | Monwarul Islam