রবিবার ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এতিম হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   109 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

এতিম হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি

কান্ডারিবিহীন অবস্থায় চলছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কোন কমিটি নেই। বিভিন্ন ব্যানার ও ব্যক্তির নামে চলছে সংগঠন। ৪ থেকে ৫টি উপধারায় বিভক্ত। বারবার কমিটি আসছে কমিটি আসছে প্রতীক্ষার প্রহর গুণছেন নেতাকর্মিরা। লন্ডন নাকি ঢাকা কোথা থেকে কমিটি আসবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।সবার ধারণা ছিল, সরকার পরিবর্ত হলে কমিটি হবে।পট পরিবর্তনের ৫ মাস পরও কোন লক্ষণ নেই। বরং বিএনপির নেতারা এখন নিউইয়র্ক ছাড়তে শুরু করেছেন। এতিম হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি। নেতাকর্মিরা এখন বাংলাদেশ মুখি। কেউ যাচ্ছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রত্যাশায়। কেউ যাচ্ছেন দীর্ঘদিন দেশে না যেতে পারায়। নিউইয়র্কে সংগঠন দেখবার কেউ নেই। ৪ জন কেন্দ্রীয় নেতার বসবাস নিউইয়র্কেই। গিয়াস আহমেদ, মিল্টন ভুইঁয়া ও আব্দুল লতিফ স¤্রাট দেশে। জিল্লুর রহমান জিল্লুও যাচ্ছেন ১৪ জানুয়ারি।বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বেবি নাজনীন দীর্ঘদিন নিউইয়র্কে ছিলেন। তিনিও বাংলাদেশে গিয়েছেন সংসদ নির্বাচনের উদ্দেশ্যে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেও হাসিনা সরকার বিরোধী জনমত গড়ে তুলতে মূলধারায় সোচ্চার ছিলেন সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। হোয়াইট হাউজ, স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও জাতিসংঘের সদর দফতরে ছিল তার সরব পদচারনা। হাসিনার অগনতান্ত্রিক শাসনের ভয়ংকর চিত্রগুলো তুলে ধরতে তিনি ছিলেন তৎপর। তিনি মেক্সিকোতে রাষ্ট্রদূত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করবেন এ মাসেই। বর্তমানে তিনিও বাংলাদেশে। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির অধিকাংশ নেতাই শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশে যেতে পারেন নি। মিল্টন ভূঁইয়া সহ অনেকের নামেই মামলা ছিল। গিয়াস আহমেদের আত্মীয়স্বজনদের নামে ছিল মামলা। তার ব্যবসা বানিজ্য দখল করে নিয়েছিল সাবেক শাসক দলের পেটোয়া বাহিনী। সেলিম রেজার নামে ছিল প্রকাশ্য প্রাণনাশের হুমকি

৫ আগষ্ট ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে আনন্দ উল্লাস ও বিজয় সমাবেশে ব্যস্ত দেখা গেছে। এখন তাদের আর রাজপথে দেখা মিলছে না। তারা বলছেন, হায়েনা হাসিনার শাসনামলে দেশে যাবার সুযোগ ছিল না। বরং দেশ থেকে নেতারা প্রাণ ভয়ে প্রবাসে এসে বাস করতেন। এখন পরিবেশের পরিবর্তন হয়েছে। দেশে আত্মীয়স্বজনদেও দেখা করা নৈতিক দায়িত্ব। এসব কারনেই আমরা যাচ্ছি। অনেকে রাজনৈতিক উচ্চাকাংখা থেকেও দেশে যাচ্ছেন। তারা দেশে নিবার্চন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চান। অনেকেই গত ২ মাস ধরে দেশে রয়েছেন। এলাকায় করছেন গনসংযোগ। ঢাকায় করছেন লবিং। ট্রাই স্টেট বিএনপির সাধারন সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ স্বস্ত্রীক বাংলাদেশে রয়েছেন।

 

গত বুধবার নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির প্রায় ৮ জন নেতা দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। তারা হলেন স্টেট বিএনপির সভাপতি মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ আতিকুর রহমান, স্টেট বিএনপির সাধারন সম্পাদক সাইদুর রহমান সাইয়িদ,সিনিয়র সহসভাপতি জসিমউদ্দীন ভূঁইয়া ভিপি, স্টেট বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির,শাহিন আব্দুল্লাহ,রানা চৌধুরী ও কাওসার আহমেদ। কার্যত দেখা যাচ্ছে নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির পুরো কমিটিই বাংলাদেশে। নিউইয়র্ক সিটি (দক্ষিণ) বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা। তিনি ঝালকাঠি ২ আসন থেকে নির্বাচন করতে মরিয়া। হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে গিয়ে ২ মাস এলাকায় সভা সমাবেশ ও কর্মিসভা করেছেন। দায়িত্বশীল একটি সুত্র জানায়, এই আসনে দীর্ঘদিন এমপি ছিলেন শাহজাহান ওমর। গত নির্বাচনে তিনি পল্টি দিয়ে বিএনপি ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এমপি হন। এখন জেলে রয়েছেন। এ আসনে বিএনপির তেমন কোন আর শক্তিশালী প্রার্থী নেই। তার মনোনয়ন পাবার ব্যাপারে অনেকেই আশাবাদী। গেল মাসে তিনি নিউইয়র্কে ফিরে এলেও জানুয়ারির শেষে আবার বাংলাদেশে যাবেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মিল্টন ভুঁইয়া। সন্দ্বীপের কৃতি সন্তান। স্বাধিনতার ৫০ বছর উদযাপন কমিটর সাবেক সদস্য সচিব। যুক্তরাষ্ট্রে সফল ব্যবসায়ী। তিনি ইতোমধ্যেই চট্রগাম ৩ (সন্দ্বীপ) থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই তিনি সন্দ্বীপে গিয়েছিলেন। হাজার হাজার মানুষকে নিয়ে তিনি সভা সমাবেশ করেছেন। এলাকায় তার পক্ষে জোয়াড় উঠেছে। স্থানীয় জনগন তাকে নির্বাচন করার জন্য অনুরোধ করছেন। তার স্বপক্ষে সন্দ্বীপে হাজার হাজার পোষ্টার শোভা পাচ্ছে। তার নামে হাসিনার শাসনামলে একাধিক মামলা ছিল। তিনি ডিসেম্বরে আবার দেশে গিয়েছেন। জামিন নিয়েছেন মামলাগুলোর। এলাকায় প্রতিদিন সভাসমাবেশ করেছেন। তিনি ১ মাস দেশে কাটিয়ে এখন সৌদিতে ওমরাহ হজ্ব পালন করছেন। একই আসনে নির্বাচন করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ও বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক কামাল পাশা বাবুল। তিনিও এখন বাংলাদেশে।
গিয়াস আহমেদ নির্বাচন করতে চাচ্ছেন ঢাকা ১ (দোহার) আসন থেকে।তিনি যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি। তিনিও এখন বাংলাদেশে। জনসংযোগের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন মিডিয়া টক শোতে অংশ নিচ্ছেন। প্রবীন এই রাজনীতিকের হাতেখড়ি ছাত্রদলের মাধ্যমে। রমনা থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক, ঢাকা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বর্তমানে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। বাংলাদেশ থেকে ২ দিন আগে নিউইয়র্কে ফিরেছেন।

জিল্লুর রহমান জিল্লু যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক। তিনি সিলেট ৪ (বিয়ানীবাজার) আসন থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী। এলাকায় পারিবারিকভাবে প্রতিষ্ঠিত জিল্লুর রহমান জিল্লু দলীয় নমিনেশন পেলে শতভাগ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। আগামী ১৪ জানুয়ারি তার বাংলাদেশে যাবার কথা রয়েছে।

আব্দুল লতিফ সম্রাট যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি। বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। নড়াইল ২ আসন থেকে নির্বাচন করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। তিনি নিউইয়র্কে বিভিন্ন সভা সমাবেশে নেতাকর্মিদের কাছে এ জন্য দোয়া চেয়েছেন। গত ১ মাস যাবৎ তিনি বাংলাদেশে।

যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি ও সফল কন্সট্রাকশন ব্যবসায়ী আলহাজ সোলেমান ভুঁইয়া। তিনি ফেনি ২ (সদর) আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। তিনিও দেশে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

Facebook Comments Box

Posted ৪:৫২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২৫

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com