রবিবার ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

 সোসাইটির কবর কেনা নিয়ে লুকোচুরি!

ডেস্ক রিপোর্ট   |   শনিবার, ০৪ জানুয়ারি ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   117 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

 সোসাইটির কবর কেনা নিয়ে লুকোচুরি!

নিউইয়র্কে বাংলাদেশের বিজয় দিবসের দিন অত্যন্ত জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রবাসে বাংলাদেশিদের ‘মাদার সংগঠন’ বাংলাদেশ সোসাইটির নতুন কমিটি। তবে অভিষেকের উজ্জ্বল আলোকচ্ছটার নিচেই ঠিক অনেকটা অন্ধকারাচ্ছন্ন কাণ্ড ঘটিয়েছে সোসাইটির বিদায়ী কমিটির শীর্ষ ব্যক্তিরা। নতুন কমিটি, বিদায়ী কমিটির সব সদস্য, এমনকি ট্রাস্টি বোর্ডকে না জানিয়ে সোসাইটির একাউন্ট থেকে নেয়া হয়েছে আড়াই লাখ ডলারের বেশি অর্থ। যা অপর একটি সমিতি থেকে কবর কেনার মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। যে কবর তৈরির প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন সদ্য সমাপ্ত সোসাইটির নির্বাচনে পরাজিত সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নিজেই। যা নিয়ে এখন ক্ষুব্ধ সমিতির নতুন কমিটি ও কমিউনিটির নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ বাংলাদেশিরা।

তারা এখন বলছেন, কবর কেনার মতো এতো বড় একটি বিষয় নিয়ে লুকোচুরি ও অন্ধকার খেলা ঠিক হয়নি। তাছাড়া নির্বাচনের ঢাকঢোলের মধ্যেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া সমীচিন নয়। সোসাইটির কোষাগারের তিনভাগের দুই ভাগ অর্থ চলে যাবে আর নির্বাচিত নতুন কমিটি তা জানবে না এটা এক ধরনের অন্যায়। এটাতো বাংলাদেশের মতোই হলো। অভিযোগ আছে— নোয়াখালী প্রবাসী সোসাইটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ও দুইজন ট্রাস্টি এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মিলেই এ কেনাকাটা ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি মো. আব্দুর রব মিয়া দাবি করেন বলেন, সোসাইটির প্রয়োজনে কবর কেনা হয়েছে। এতে কোন লুকোচুরি বা অনিয়ম করা হয়নি।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মিন্টু এর আগে বৃহত্তর নোয়াখালী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ কারণে নোয়াখালী সমিতির কবর কেনার প্রকল্পের দায়িত্ব পড়ে জাহিদ মিন্টুর ওপর। মোট এক লাখ কবর কেনার প্রকল্প থেকেই ‘কবর’ কেনার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জাহিদ মিন্টু গত নির্বাচনে সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করে জয়ী হতে পারেননি। গত ২৭ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হয় গত আগস্টের মাঝামাঝি।

নবনির্বাচিত নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে সমিতির আয় ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপন করেন বিদায়ী কোষাধক্ষ্য মো. নওশাদ। তিনি ওই সময় বলেছিলেন, ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সোসাইটির আয় হয়েছে ৫ লাখ ২ হাজার ৬০৫ ডলার। ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭০৯ ডলার। এই হিসাবে বাংলাদেশ সোসাইটির একাউন্টে জমা রয়েছে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৭৮৭ ডলার। এই হিসাব বিবরণি তিনি নতুন কমিটির কাছে তুলে ধরেন।
সোসাইটির নতুন কমিটির কর্মকর্তারা সম্প্রতি ব্যাংক একাউন্টে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাদের একাউন্টে আছে মাত্র ১ লাখ ডলারের কিছু বেশি অর্থ। এর পরই বিষয়টি ব্যাপক আলোচনায় আসে। তাতে দেখা যায় গত ১৬ ডিসেম্বর ২ লাখ ৫২ হাজার ডলারের চেক দেয়া হয় কবর কেনার জন্য। সাধারণত নির্বাচনকালীন সময়ে কোন কমিটিই বড় ধরনের কোন কাজে হাত দেয় না।
এছাড়া সোসাইটির গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, কোন কাজে এককালীন ২৫ হাজার টাকার বেশি ব্যয়ের ক্ষেত্রে বোর্ড অব টাস্ট্রি ও নির্বাহী কমিটির যৌথ সভায় তা পাস করাতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। তবে বিদায়ী কমিটি দাবি করেছে, গত আগস্টে যৌথ সভা করে কবর কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়।

জানা গেছে, আগস্টে একটি বৈঠক হয়েছে তবে তাতে কবর কেনার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তাছাড়া বৈঠকে ট্রাস্টি ও নির্বাহী কমিটির মাত্র ১০ জনের উপস্থিতি ছিল। এতে দুই জন ট্রাস্টি উপস্থিত ছিলেন। অথচ ট্রাস্টি ও নির্বাহী কমিটির মোট সদস্য ৩২ জন। কোন সভার কোরাম পূরণে কমপক্ষে ৭ জন ট্রাস্টি ও ১২ জন নির্বাহি সদস্যের উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত কমিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ওয়াসি চৌধুরী গতকাল বৃস্পতিবার  ফোনে বলেন, কবর কেনা হবে এমন কোন মিটিংয়ে আমি ছিলাম না, বিষয়টি আমি জানতামও না।

অপর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আতাউল আলম  গতকাল বলেন, কবর কেনার কোন সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। বাংলাদেশে বন্যা যখন হয়, তখন বন্যার্তদের সাহায্য করার বিষয়ে একটি যৌথ বৈঠক হয়। তখন সেখানে কথা প্রসঙ্গে কবর দরকার এমন আলোচনা হয়েছে মাত্র। একেবারেই সাধারণ আলোচনা। কিন্তু কবে কেনা হবে? কার কাছ থেকে কেনা হবে এমন কোন সিদ্ধান্ত বা সিরিয়াস কোন আলোচনাই এ বিষয়ে হয়নি। তাছাড়া কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার পর তা বাস্তবায়নে, নানা বিষয়ে একাধিক কমিটিও করতে হয়। কারণ সুবিধামতো স্থান নির্বাচন, দাম নির্ধারণ ও যাচাই, অর্থ সরবরাহসহ অনেক বিষয় জড়িত থাকে। কিন্তু সব সদস্য যখন নির্বাচনের উন্মাদায় ব্যস্ত তখন কোন কিছু ছাড়াই কমিটির শীর্ষ ব্যাক্তিরা নিজেদের খেয়াল খুশি মতে বিশাল অর্থ ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি মো. আব্দুর রব মিয়া  বলেন, সোসাইটির কোন কবর ছিল না। তাই আমরা কবর কিনেছি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কবর কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। এজন্য আড়াই কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এতে নির্বাহী কমিটি ও ট্রাস্টির অনুমোদন আছে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর কী এতো বড় অংকের কেনা কাটায় বিপুল অর্থ ব্যয় করা যায় কি—না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোথায় লেখা আছে খরচ করা যাবে না? যা ব্যয় হয়েছে তা—তো পরিশোধ করেই দিতে হবে। এটা নতুন কমিটিকে কেন বলতে হবে? এর আগেও আমরা ৬০টি কবর কিনেছি। এবার নতুন করে ৩৬০টি কিনলাম।

এ বিষয়ে বর্তমান কমিটির এক সদস্য বলেন, কমিউনিটির কোন কিছু হলেই তা নিউজ হয়। কিন্তু তারা আড়াই লাখ টাকায় কবর কিনছে। বিষয়টি নিয়ে কেউ জানলো না এমনকি কোন নিউজও হলো না। এর আগেও তো গত বছরের ডিসেম্বরে সাধারণ সভায় কবর কেনার বিষয়টি নিয়ে নিউজ হয়েছিল। বিশেষ করে এতো অর্থ খরচের বিষয়ে অবশ্যই যৌথ কমিটিতে অনুমোদন নিতে হয়। তাও হয়নি। অধিকাংশ ট্রাস্টিই বিষয়টি জানেন না।
বাংলাদেশ সোসাইটির বর্তমান কমিটির সহ—সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান বিদায়ী কমিটিরও সহ—সভাপতি ছিলেন। তিনি জানান, কবর কেনার বিষয়টি তাকেও অবহিত করা হয়নি। এমনকি আগের কমিটির অনেক সদস্যই এটা জানেন না।

বর্তমান কমিটির নবনির্বাচিত সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী ‘আজকাল’কে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা বিদায়ী কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের এ বিষয়ে সব ধরনের কাগজপত্র দেয়ার কথা জানিয়েছে। সব কিছু হাতে পেলেই বিস্তারিত বলা যাবে।

এদিকে সোসাইটির টাকায় নিজেদের নামেও কবর কেনার অভিযোগ রয়েছে সদ্য বিদায়ী কমিটির বিরুদ্ধে। নিউজার্সিতে প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি, ট্রেজারার, ক্রীড়া সম্পাদকের নামে ৪০ হাজার ডলারে চার জনের নামে ৬০টি কবর কেনা হয়েছে।

এ অভিযোগের বিষয়ে, কমিটির একজন সদস্য বলেন, যে জায়গায় কবর কেনা হয়েছে সেখানে কোন সংগঠনের নামে কবর কেনা যায় না। তাই চারজনের নামে কবর কেনা হয়েছে। পরে তা সোসাইটির নামে হস্তান্তর করে দেয়া হবে। তবে মেয়াদ থাকা অবস্থায় ‘কবর’ হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরুও করেনি ঐ কমিটি। (সূত্র-আজকাল)।

 

 

Facebook Comments Box

Posted ৬:১০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৪ জানুয়ারি ২০২৫

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com