
বিনোদন ডেস্ক | শনিবার, ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ | প্রিন্ট | 88 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
সিনেমার আতুড়ঘর খ্যাত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) আর কখনোই পা রাখবেন না- গত বছরের মাঝসময়ে এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান। তারপর থেকে তিনি আর এফডিসিতে আসেননি। কারণ ছিল তার অভিমান। সেই অভিমান যে আর ভাঙবে না, তা হয়ত কারও জানা ছিল না। অবশেষে এফডিসিতে তিনি এলেন। তবে সেই চঞ্চল ও সদা হাসি মাখা মুখ নিয়ে নয় তিনি এলেন নিথর দেহ হয়ে।
৬০ বছর বয়সে শুক্রবার দিবাগত রাত ১টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এফডিসিতে আনা হয় অঞ্জনার মরদেহ। লাশবাহী গাড়ি এফডিসিতে পৌঁছার পর ভারি হয়ে ওঠে পুরো চত্ত্বর। কান্নায় ভেঙে পড়েন দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা।
প্রিয় সহকর্মীকে শেষ বিদায় জানাতে এদিন এফডিসিতে হাজির হন নায়ক আলমগীর, উজ্জ্বল, ইলিয়াস কাঞ্চন, মিশা সওদাগর, চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস, রিয়ানা রহমান পলি, পরিচালক ছটকু আহমেদ, চয়নিকা চৌধুরীসহ চলচ্চিত্র ও অভিনয় জগতের অনেকে।
দুপুর ১ টার দিকে এফডিসিতে অনুষ্ঠিত হয় তার প্রথম জানাজা। প্রথম জানাজা শেষে তার মরদেহ নেওয়া হয় চ্যানেল আই প্রঙ্গনে। দুপুর আড়াইটার দিকে সেখানে অনুষ্ঠিত হয় তার দ্বিতীয় জানাজা।
অঞ্জনার অভিমানের কারণ ছিল চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। গেল কয়েকটি কমিটিতে ছিলেন অঞ্জনা রহমান। সেই ধারাবাহিকতায় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪–২৬ মেয়াদি নির্বাচনে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন তিনি। তবে নির্বাচনে হেরে যান গুণী অভিনেত্রী অঞ্জনা। এমন ফলাফলেই কষ্ট পেয়েছেন অঞ্জনা। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অপমানজনক মনে হয়েছে অঞ্জনার কাছে। তাই কখনও বিএফডিসিতে পা না রাখার ঘোষণা দিয়েছিলন গুণী এই অভিনেত্রী।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক সময়ে ঢাকাই সিনেমার অন্যতম মুখ ছিলেন অঞ্জনা রহমান। নৃত্যশিল্পী থেকে নায়িকা হয়ে সর্বাধিক যৌথ প্রযোজনা এবং বিদেশি সিনেমায় অভিনয় করা একমাত্র দেশীয় চিত্রনায়িকাও তিনি।
অঞ্জনার অভিনয়জীবন শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। তবে অঞ্জনা অভিনীত ও একই বছর মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ‘দস্যু বনহুর’। ছবিতে তার নায়ক ছিলেন সোহেল রানা। এ ছবির পর তাকে আর ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হয়নি।
১৯৭৬ সালের এই সিনেমার পর টানা কাজ করেছেন অঞ্জনা। একে একে অভিনয় করেন ‘মাটির মায়া’, ‘অশিক্ষিত’, ‘চোখের মণি’, ‘সুখের সংসার’, ‘জিঞ্জির’, ‘অংশীদার’ ,‘আনারকলি’, ‘বিচারপতি’, ‘আলাদীন আলীবাবা সিন্দাবাদ’, ‘অভিযান’, ‘মহান’ ও ‘রাজার রাজা’, ‘বিস্ফোরণ’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘রাম রহিম জন’, ‘নাগিনা’, ‘পরীণিতা’ ইত্যাদি বাণিজ্যিক সফল সিনেমায়।
অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আন্তর্জাতিক পুরস্কার, একাধিক জাতীয় স্বর্ণপদক ও বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন কয়েকবার।
নৃত্যশিল্পী হিসেবেও অঞ্জনা পেয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক স্বীকৃতি।‘পরিণীতা’ ও ‘গাঙচিল’-এ অভিনয়ের জন্য দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। অঞ্জনা বিয়ে করেন পরিচালক আজিজুর রহমান বুলিকে। তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
Posted ৯:০২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৪ জানুয়ারি ২০২৫
nykagoj.com | Stuff Reporter