রবিবার ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাসিনার কোটিপতি পিয়ন জাহাঙ্গীর  নিউইয়র্কে আত্মগোপনে

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   108 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

হাসিনার কোটিপতি পিয়ন জাহাঙ্গীর  নিউইয়র্কে আত্মগোপনে

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই কোটিপতি পিয়ন/ভৃত্য জাহাঙ্গীর আলম এখন নিউইয়র্কে। কোথাও তেমন বের হন না। বাংলাদেশি এলাকায় গেলে থাকেন মাস্ক পরিহিত । গত বুধবার ৪ ডিসেম্বর নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে জাহাঙ্গীর যান ব্যক্তিগত কাজের জন্য।তিনি পাওয়ার এটর্নি সত্যায়ন করানোই ছিল তার উদ্দ্যেশ্য।  বারবার মাথার টুপি দিয়ে নিজেকে আড়াল করছিলেন। কিন্তু কনস্যুলেটের স্টাফরা তাকে চিনে ফেলেন। সাথে সাথে তারা কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদাকে বিষয়টি অবহিত করেন। জ্বনাব হুদা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করনে। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের মতামত ছাড়া কিছু করা যাবে না। কর্মকর্তারা পাওয়ার অব এটর্নি সত্যায়নে অপারগতা প্রকাশ করেন। ঢাকার মতামত পেলে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। এরমধ্যে কনস্যুলেটে উপস্থিত স্টাফ ও ভিজিটরদের মধ্যে তার উপস্থিতির বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। তাকে দেখার জন্য ভীর জমতে থাকে। পরিস্তিতি খারাপ হতে পারে আঁচ করতে পেওে জাহাঙ্গীর দ্রুত  কনস্যুলেট ত্যাগ করেন।

এ ব্যাপারে কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদার দৃষ্টি আর্কষন করলে তিনি আজকালকে বলেন, জাহাঙ্গীর আলম কাগজপত্র সত্যায়ন করার জন্য কনস্যুলেটে এসেছিলেন। আমাদের স্টাফরা তাকে চিনতে পারে। সাথে সাথে আমাকে জানায়। তার ব্যাপারে ঢাকার নির্দেশনা না পেলে কিছু করা যাবে না বলে মতামত প্রদান করি। পরে তিনি চলে যান। শেখ হাসিনা গত ১৪ জুলাই এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘আমার বাসার একজন পিয়ন ছিল, সে-ও নাকি ৪০০ কোটি টাকার মালিক! হেলিকপ্টার ছাড়া নাকি চলে না। পরে তাকে ধরা হয়েছে। খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে।’ এরপর জাহাঙ্গীর আলমের এই দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে নানা সমালোচনা শুরু হলে তৎকালীন সরকার তার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে এবং তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করে। পরে জানা যায়, পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়েছেন এই আলোচিত পিয়ন জাহাঙ্গীর। শেখ হাসিনার সেই ‘৪০০ কোটির পিয়নের’ খোঁজ মিলেছে নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটে। জাহাঙ্গীর এরশাদ জমানা থেকেই শেখ হাসিনার সাথে সার্বক্ষনিক থাকতেন। বাসার সব ধরনের কাজ করতেন। রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে শেখ হাসিনা দেশের বিভিন্ন স্থানে সফরে গেলেও জাহাঙ্গীর ছিল সফরসংগী। ২০২৩ সাল পর্যন্ত সে শেখ হাসিনার গুডবুকে ছিলেন।

জাহাঙ্গীর নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের নাহারখিল গ্রামের বাসিন্দা। গত জাতীয় নির্বাচনে নোয়াখালী-১ আসন (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্রও জমা দিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যাগ বহন করতেন, প্রধানমন্ত্রীর খাবার সামনে এগিয়ে দিতেন এবং অন্যান্য ফাই-ফরমাশ খাটতেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি যখন বিরোধী দলে তখন থেকেই জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ঢাকার বাইরে যখন বিভিন্ন রাজনৈতিক সভায় যেতেন সেখানেও জাহাঙ্গীরকে দেখা যেত। আস্তে আস্তে জাহাঙ্গীরের একটি রাজনৈতিক বলয় তৈরি হয়ে যায়।

 

সেই সময় তার আমন্ত্রণে সরকারের অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে নোয়াখালীর চাটখিলে বিভিন্ন কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন। যার কিছু ছিল জাহাঙ্গীরের ব্যক্তিগত আয়োজনের অনুষ্ঠানে। একই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর আরেক পিয়ন আবদুল মান্নানকেও চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। তবে তার বিরুদ্ধে হেলিকপ্টার ব্যবহারের কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।

 

গণভবনে থাকার সময় তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের চেয়েও ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছিলেন। আওয়ামী লীগের কিছু কিছু ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ, গণভবনে থাকেন, তাকে বলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা যায় ইত্যাদি ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে জাহাঙ্গীরের প্রতি আলাদা ‘সমীহ’ দেখাতে শুরু করেন। তাদের কেউ কেউ জাহাঙ্গীরকে ‘স্যার’ ডেকেছেন বলেও শোনা যায়। এমনকি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাও জাহাঙ্গীরের কাছে তদবির করতেন। এই জাহাঙ্গীর গণভবনে থেকে বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাকে প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন তদবির করতেন। এভাবে আস্তে আস্তে বিত্তশালী হয়ে ওঠেন এই কাজের লোক। পরবর্তীতে অবশ্য গণভবন থেকে রেবিয়ে যাওয়ার পর এখন তাকে রাজনীতিতে দেখা যায় না।

 

তবে জাহাঙ্গীর আলম প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী হলেও তিনি নিজের পরিচয় দিতেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বিশেষ সহকারী। এই পরিচয় ব্যবহার করে নিয়মিত সচিবালয়ে তদবির বাণিজ্য করতেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কাছে নানান তদবির করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। একই পরিচয় ব্যবহার করে তিনি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদও বাগিয়ে নিয়েছিলেন। নোয়াখালী-১ সংসদীয় আসনে নিজের একটি রাজনৈতিক ব্লকও তৈরি করেছেন।

Facebook Comments Box

Posted ৯:০৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com