রবিবার ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এ বছর প্রাণচঞ্চল ছিল নাটকপাড়া

বিনোদন ডেস্ক   |   বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২   |   প্রিন্ট   |   130 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

এ বছর প্রাণচঞ্চল ছিল নাটকপাড়া

পুরো বছরের নাট্যচর্চার পুঙ্খানুপুঙ্খ কড়চা স্বল্পপরিসরে উপস্থাপন সম্ভব নয়। অনেক কিছু না হলেও প্রধান প্রধান বিষয় নিয়ে দু-চার কথা বলার চেষ্টা করা যেতেই পারে।

নবনাট্য চর্চার ৫০ বছর পূর্তি

২০২২ সাল দেশের মঞ্চনাটকের জন্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ বছর। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাত্র দুই মাসের মাথায় সদ্য স্বাধীন দেশের রাজধানী ঢাকায় নতুন স্বপ্ন নিয়ে শুরু হয়েছিল নবনাট্য চর্চা। ১৯৭২ সালের ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি পরপর দুই সন্ধ্যায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন

মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় শহীদ মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’। মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় আলী যাকের, ড. ইনামুল হক, সুভাষ দত্ত, আমিরুল ইসলাম প্রমুখের অংশগ্রহণে সে মঞ্চায়ন আমাদের নবনাট্য আন্দোলনের ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনা। ১৯৭২ সালেই ঘটে আরও এক ঘটনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নাট্যচক্র আয়োজন করে আন্তঃহল নাট্যোৎসবের। ডিসেম্বরের ২ থেকে ১১ তারিখ পর্যন্ত আয়োজিত এ উৎসব অভূতপূর্ব আলোড়ন সৃষ্টি করে। ঢাবির শিক্ষার্থীদের রচিত, নির্দেশিত ও অভিনীত এই নাট্যোৎসবে প্রায় ১৯টি নতুন নাটক মঞ্চায়িত হয়। নাটকের নামকরণ, বিষয়বস্তু, নির্দেশনা ভাবনা- সব ক্ষেত্রেই ছিল নতুনত্ব। সদ্য স্বাধীন দেশে মুক্ত পরিবেশে রাজধানী ঢাকায় সৃষ্টি হয়েছিল আমাদের নবনাট্যের আঁতুড়ঘর। একই বছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও অনুষ্ঠিত হয়েছিল আরেকটি নাট্যোৎসব। সেটিও আমাদের নবনাট্য আন্দোলনকে গতিশীল করতে বিশেষ অবদান রেখেছিল। মোদ্দাকথা, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে যে নবনাট্য আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, ২০২২ সালে এসে তার ৫০ বছর পূর্তি হলো। সে কারণেই ২০২২ সাল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধোত্তর স্বাধীন বাংলাদেশে নবনাট্য চর্চার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আরণ্যক নাট্যদল বছরব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করে, যা চলমান। বছরের শেষে নাট্যচক্র নাট্যদল তাদের ৫০ বছর পূর্তি পালন করে শিল্পকলা একডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে। এই আয়োজনের আকর্ষণীয় দিক ছিল নাট্যচক্র ‘এক্সপ্লোসিভ ও মূল সমস্যা’ নাটকটি ৫০ বছর পরে আবার নতুন করে মঞ্চে আনে। সেলিম আল দীন রচিত নাটকটি ১৯৭২ সালে নির্দেশনা দিয়েছিলেন ম. হামিদ। এবারও তিনিই নির্দেশনা দিয়েছেন। ১৯৭২ সালে নাট্যচক্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নাটকের সংগঠন। এখন অবশ্য এটি স্বতন্ত্র একটি নাট্য সংগঠন।

মঞ্চে নতুন নাটক

প্রতি বছরই ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মিলে গড়পড়তা অর্ধশত নতুন নাটক মঞ্চে আসে। ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের পর নিয়মিত নাট্যচর্চা ব্যাহত হয়েছে। ফলে মঞ্চে নতুন নাটকের সংখ্যাও কমে গেছে। তারপরও নাট্যকর্মীরা তাঁদের সপ্রাণ উপস্থিতি দিয়ে নাট্যাঙ্গন সচল রেখেছেন। শো চালিয়ে গেছেন। মঞ্চে নতুন নাটক এনেছেন। ২০২২ সালে মঞ্চে আসা নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের যাত্রাপালা প্রযোজনা ‘বিসর্জন’, শিল্পকলা একাডেমির যাত্রাপালা ‘নিঃসঙ্গ লড়াই’, নতুন দল থিয়েটারিয়ানের ‘ডেথ অব এ সেলসম্যান’, বটতলার একক অভিনয়ে ‘রাইজ অ্যান্ড শাইন’, থিয়েটার আর্ট ইউনিটের ‘মাধব মালঞ্চী’, থিয়েটারের ‘পোহালে শর্বরী’, দেশনাটকের ‘পারাপার’, অনুস্বরের ‘জাদুকর’, আরণ্যকের ‘রাজনেত্র’, নাট্যকেন্দ্রের ‘পুণ্যাহ’, বাঙলা থিয়েটারের ‘নীলদর্পণ’, নাট্যচক্রের ‘এক্সপ্লোসিভ ও মূল সমস্যা’। এ ছাড়া মঞ্চে আসে শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্রের ‘কী চাহ শঙ্খচিল’ গ্রন্থিকের ‘গ্যাড়াকল’, নাট্যধারার ‘স্বর্ণময়ী’, চট্টগ্রামের অ্যাভাগার্ডের ‘টেকনিক্যাল প্রবলেম’, এথিকের ‘রাজদ্রোহী’, সিরাজগঞ্জের দল নাট্যোলোকের ‘পূর্ণিমারাতের মুখগুলো’, সাধনা আর্টস অ্যান্ড থিয়েটারের ‘প্রার্থিনী’, স্টেজ ওয়ানের ‘চিরকুমার সভা’, সপ্তর্ষি থিয়েটারের ‘প্রমীলা আখ্যান’, লন্ডনের মুকুল অ্যান্ড গেটো টাইগার্সের ‘একজন কমলালেবু’। তবে এ বছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অনুস্বরের ‘রায়মঙ্গল’ ও মেঠোপথের ‘মলুয়া’ নাটক দুটিও মঞ্চে আসবে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সুখ-দুঃখে বাইশ

নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও এ দেশের মঞ্চকর্মীরা প্রতিনিয়ত তাঁদের সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটিয়ে চলেছেন। সংখ্যায় কম হলেও এ বছরও কয়েকটি ভালো প্রযোজনা মঞ্চে এসেছে। হয়েছে কিছু ভালো কাজও। সাধারণ রঙ্গালয়ের সার্ধশতবার্ষিকী উপলক্ষে ৭ ডিসেম্বর কলকাতায় আয়োজিত বর্ণাঢ্য নাট্য আয়োজনে ঢাকার ‘বাঙলা থিয়েটার’ প্রযোজনা করে দীনবন্ধু মিত্রের বিখ্যাত নাটক ‘নীলদর্পণ’। ভারতের আয়োজকরা আমাদের দেশের স্বনামধন্য নাট্যজন মামুনুর রশীদকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন নাটকটি নির্দেশনাদানের এবং এটি তিনি সফলভাবে সম্পাদন করে আমাদের দেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছেন। ভারত প্রজাতন্ত্রের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতজুড়ে আয়োজিত ‘ভারত রঙ্গ মহোৎসব’-এ বাংলাদেশের ছয়টি নাটকের দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ভারত সরকার ও দিল্লি ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার পক্ষ থেকে। কিন্তু সে সময় করোনার প্রকোপ ভয়াবহভাবে বেড়ে যাওয়ায় ভারত সরকার তাদের উৎসব বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।

সব কথার শেষ কথা

আমাদের নাটকের মানোন্নয়নের পাশাপাশি দর্শককে থিয়েটারমুখী এবং নতুন নতুন দর্শক সৃষ্টি করা এখন সবচেয়ে জরুরি হয়ে পড়েছে। সামান্য কিছু দল তাদের নাটকের মান ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে, কিন্তু দর্শক অনেকেই সে ব্যাপারে ওয়াকিবহাল নন। ভালো নাটকগুলোর প্রচার ও প্রসারে নাটকের লোকজনদের উদ্যোগী হতে হবে। নাটকসংশ্নিষ্ট সবার আরেকটি কথা মাথায় রাখতে হবে- থিয়েটার একটি সজীব ও জীবন্ত শিল্পমাধ্যম। এটি যাতে নির্জীব ও প্রাণহীন না হয়ে পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এর সৃজনকর্তাদের। া

Facebook Comments Box

Posted ১:৪৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com