শনিবার ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টক অব দ্যা ব্রংকস : এন এম মজুমদার

মনোয়ারুল ইসলাম   |   শুক্রবার, ০৪ নভেম্বর ২০২২   |   প্রিন্ট   |   163 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

টক অব দ্যা ব্রংকস : এন এম মজুমদার
টক অব দ্যা ব্রংকস : এন এম মজুমদার

 

মজুমদার হকুলের ব্যানারের সামনে

বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা ব্রংকসের পার্কচেষ্টার। অধিকাংশ বাংলাদেশিই রেজিষ্টার্ড ডেমোক্র্যাট। আগামী ৮ নভেম্বর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন। কংগ্রেসের নির্বাচনের পাশাপাশি নিউইয়র্ক স্টেটের গর্ভনর পদে নির্বাচন হচ্ছে। ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী ক্যাথি হোকল। আর রিপাবলিক্যান দলীয় লি জেলডিন। নিউইয়র্ক ডেমোক্র্যাট অধ্যুষিত ব্লু স্টেট হলেও গর্ভনর পদে হাড্ডহাড্ডি লড়াই হচ্ছে। বাংলাদেশিদের ভোট টানতে উভয় পক্ষই মরিয়া। গেল কয়েকদিনের ব্যবধানে উভয় দলের গর্ভনর প্রার্থীই সভা করেন পার্কচেষ্টারে। আর এ দুটি সভার প্রাথমিক আয়োজক ছিলেন কমিউনিটি একটিভিস্ট এন এম মজুমদার। একই ব্যক্তি কিভাবে দু’জন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারনার সভা আয়োজন করেন? একজন রেজিস্টার্ড ডেমোক্র্যাট হয়ে জ্বনাব মজুমদার কিভাবে রিপাবলিক্যান প্রার্থী ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহচর লি জেলডিনকে ব্রংকসে নিয়ে এলেন? এমন প্রশ্ন ব্রংকসের চায়ের আড্ডায় ঝড় তুলছে। সমালোচনায় সয়লাব কমিউনিটিতে। এমনকি ব্রংকস থেকে নির্বাচিত নিউইয়র্ক স্টেট প্রতিনিধিদের তোপের মুখে পড়েছিলেন মজুমদার। তার রাজনৈতিক ক্রেডিবিলিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তারা।
২৮ অক্টোবর রিপাবলিকান দলীয় গর্ভনর পদপ্রার্থী লি জেলডিন পার্কচেষ্টারের গোল্ডেন প্যালেসে সভা করেন। এর আয়োজক ছিলেন এন এম মজুমদার। তিনি এ সভায় মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন। এর ৩ দিন পর ১ নভেম্বর মঙ্গলবার ডেমোক্র্যাট দলীয় গর্ভনর প্রার্থী ক্যাথি হোকল পার্কচেষ্টারে আসেন। সভার স্থান নির্ধারিত হয় খলিল বিরিয়ানীর চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে। সেখানে অরগানাইজার হিসেবে এগিয়ে আসেন এন এম মজুমদার ও খলিল বিরানীর প্রধান খলিলুর রহমান। এ খবর চলে যায় হোকলের নির্বাচনী হেড অফিসে। আপত্তি আসে মজুমদারের ব্যাপারে। খলিলুর রহমান ও তার রেষ্টুরেন্টে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তাদের কোন আপত্তি নেই। স্থানীয় এসেমব্লিওম্যান ক্যারিনা রাইস সোমবার রাতেই মজুমদারকে কল করে হকুলের সভায় আসতে মানা করেন। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে অরগানাইজার হিসেবে মজুমদারের নাম উল্লেখ করে সভাস্থলে ব্যানার টানানো হয়। কিন্তু হকুলের ক্যাম্পেইন কর্মিরা এসে ঐ ব্যানার সরিয়ে ফেলে তাদের ব্যানার টানায়। অনুষ্ঠানে মজুমদারকে মঞ্চে দেখা যায় নি। তাকে ফুল দিতে দেয়া হয়নি। বক্তবের জন্যও ডাকা হয়নি। বরং হোকল চলে যাবার পর স্থানীয় নির্বাচিত জন প্রতিনিধি কাউন্সিলওম্যান ক্যারিনা রাইস,এসেমব্লিওম্যান আমান্দা ফারিয়া ও নাদেলিয়া ফার্নান্দেজের সাথে মজুমদারের বাদানুবাদ ঘটে। প্রায় ৫০/ ৬০ জন বাংলাদেশির সামনে তারা মজুমদারকে চার্জ করে বলেন, ‘হাউ ডেয়ার আর ইউ? ইউ ব্রিং জেলডেন হেয়ার। ইউ আর আউট।’
কমিউনিটিতে আলোচনা ও সমালোচনা বহর বইছে মজুমদারের ভূমিকা নিয়ে। কার পক্ষে কাজ করছেন মজুমদার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক হাবিব রহমান। তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি আজকালকে বলেন, ঐ দিন সকাল ৭টায় আমি সাংবাদিক দিদার চৌধুরিসহ খলিল চাইনিজে যাই। সে সময় আমরা দুজন ছাড়া অনুষ্ঠানস্থলে অন্য কেউ উপস্থিত ছিলেন না। সেখানে স্টেজের পেছনে একটা ব্যানার লাগানো ছিলো। এতে ব্রংকস বাংলাদেশী কমিউনিটির পক্ষে আয়োজক হিসাবে এন মজুমদার এবং খলিল হালাল চাইনিজের নাম ছিলো।একটু পর একজন লোক ঢুকলেন এবং তিনি নিজেকে গর্ভনর হোকুলের ক্যাম্পেইনের লোক হিসাবে পরিচয় দিয়ে এই ব্যানার প্রসঙ্গে জানতে চান। তিনি বলেন, এন মজুমদারের নামের কোন ব্যানার এখানে থাকবেনা। এ সময় ডেমোক্রেট নেত্রী মাজেদা উদ্দীন এসে পৌঁছান। তার হাতে একটি ব্যানার ছিলো।তিনি এসে আগের ব্যানারটি খুলে ফেলতে বলেন এবং তার হাতে থাকা ব্যানারটি স্টেজের পেছনে লাগিয়ে দেন।এভভোকেট এন মজুমদার তখন সেখানে উপস্থি থাকলেও তিনি ব্যানার খোলা নিয়ে কোন প্রতিবাদ করেন নি। পরে তিনি সর্বক্ষণ দর্শকের সারিতেই বসা ছিলেন। তাকে বক্তব্য রাখার কোন সুযোগ দেয়া হয়নি।
গর্ভনর চলে যাওয়াার পর আমি এসেম্বলি ওম্যান কারিনা রাইসকে উচ্চস্বরে কথা বলতে শুনি।পরে জেনেছি তিনি আগের দিন রাতে ফোন করে এডভোকেট মজুমদারকে অনুষ্ঠানে আসতে মানা করে ছিলেন। কিন্তু তার কথা অমান্য করে মজুমদার সভাস্থলে আসায় তিনি উস্মা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানের পরদিন এসেম্বলিওম্যান কারিনার সাথে আমার দেখা হয়। আমি সেদিন অনুষ্ঠানে তার রাগের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন ,প্রত্যেকের জীবনেই একটা নীতিমালা মেনে চলা উচিত।যে কেউ যে কোন পার্টি সাপোর্ট করতে পারেন। সেটা তার গনতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু মজুমদার যা করেছে তা মোটেও শোভনীয় নয়। তিনি দুদিন আগে রিপাবলিকান দলের গর্ভনর প্রার্থীর অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক ছিলেন। দুদিন পরে আবার ডেমোক্রেটিক পার্টির গর্ভনরের প্রার্থীর অনুষ্ঠানের আয়োজক হতে পারেন না।আমার এলাকার একজন ডেমোক্রেট কর্মীর এই অবস্থাান পার্টিতে আমার অবস্থানকে ছোট করেছে।
এ ব্যাপারে এন এম মজুমদারের দৃষ্টি আর্কষন করা হয়। তিনি আজকালকে বলেন, আমার ব্যানার সরানো হয়নি। রিঅ্যারেঞ্জ করা হয়েছিল। গর্ভনরের লোকজন নিজেদের ব্যানার নিয়ে এসেছিল। আমাদেরটা পাশে টানানো ছিল। উভয় প্রার্থীকে আনার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি কাউকে এনডোর্স করিনি। গত ৩৫ বছরে গর্ভনর পর্যায়ের কেউ বাংলাদেশি এলাকা পার্কচেষ্টারে আসেনি। এবারই প্রথমই তারা বাংলাদেশিদের মাঝে এসেছেন। জেলডেন আসায় হোকলও বাংলাদেশিদের মাঝে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে ব্রংকস বাংলাদেশি কমিউনিটির গুরুত্ব বেড়েছে। কমিউনিটি এমপাওয়ার্ড হয়েছে। এ জন্য আমি গর্বিত। আমাকে যারা ক্রিটিসাইজ বা সমালোচনা করে তারা অনেক কিছুই বুঝে না। আমি ইচ্ছে করেই হকুলের অনুষ্ঠানে মডারেট করিনি। আর মঞ্চে বসার মতো সেখানে কোন চেয়ার ছিল না। মাত্র ৪টি চেয়ার ছিল। মজুমদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গর্ভনর আমাদের কমিউনিটিতে আসলেন। কিন্তু আমাদের কাউকে পরিচয় করানো হলো না। বক্তৃতা দেবার সুযোগ দিল না। আমাদের অনেকেই ছিল যারা বক্তৃতা দেবার যোগ্য। আপনাকে সভা শেষে চার্জ করা হয়েছিল? জবাবে মজুমদার বলেন, এটা সত্য। ওরা জানতে চেয়েছিল কেন আমি জেলডেনকে ব্রংকসে আনলাম।আপনাকে আগের রাতে স্থানীয় এসেমব্লিওম্যান অনুষ্ঠানে আসতে বারন করেছিল? মজুমদার বলেন, হকুলের অনুষ্ঠানে যেতে মানা করেনি। তবে তারা বলেছিল, যেহেতু আমি জেলডেনের অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছি তাই হকুলের অনুষ্ঠান মডারেট করা শোভনীয় নয়। আমি যেন তা না করি। আপনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি করেন। আর আনলেন রিপাবলিক্যান পার্টির প্রার্থীকে। এটা কি দ্বৈতচারিতা নয়? জবাবে তিনি বলেন, আমি দলীয় বিবেচনায় তাকে আনিনি।একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদকে এনেছি। আর সেতো আমার আগ থেকেই পরিচিত। ঘনিষ্ঠজনও। তবে আমিতো তাকে এনডোর্স করিনি? তা’হলে কাকে ভোট দেবেন? জবাবঃ ডেমোক্র্যাট হিসেবে হকুলকে ভোট দিব। জেলডেন গর্ভনর হিসেবে যদি জয়লাভ করে। আপনাকে যদি তার প্রশাসনের কোন দায়িত্ব দেয় তা কি গ্রহন করবেন? জবাবে মজুমদার বলেন, দেখতে হবে কি অফার করে। ডেমোক্র্যাট পার্টি কি আপনাকে ব্ল্যাকলিস্টে ঢুকাচ্ছে? অথবা দল থেকে বহিস্কার করবে? জবাবে মজুমদার বলেন,তারা তা করবে না। করতে পারে না। বরং আমি চাইলে পার্টি পরিবর্তন করতে পারি। যেমনটি ডোনাল্ড ট্রাম্পও করেছিল। আপনাকে লোকজন সমালোচনা করছে। এজন্য কি আপনি অনুতপ্ত? মজুমদার বলেন, মোটেই না। যারা সমালোচনা করে তারা বুঝেই না। নিউ ইয়র্ক সিটির সাবেক কমিশনার ও নিউইয়র্ক স্টেট মনোনীত ডিস্ট্রক্ট লিডার ক্যানডিডেট মাজেদা উদ্দীন। তিনি মজুদারের ঘটনায় বলেন, বাংলাদেশি হয়ে মজুমদার এমন কাজ করবে তা আশা করিনি। জেলডিনকে ব্রংকসে দেখার পরপরই স্থানীয় প্রতিনিধিরা সেখানে গর্ভনরকে আনবার সিদ্ধান্ত নেন। আমি গর্ভনরের অফিসের পরামর্শে পার্কচেষ্টারের অনুষ্ঠান মডারেট করেছি।
Helal Chowdhury
Facebook Comments Box

Posted ১০:১৮ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৪ নভেম্বর ২০২২

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com