আমেরিকা: “ইসলাম-পিচ এন্ড জাস্টিজ ফর হিউম্যানিটি” এ শ্লোগানে নর্থ-আমেরিকাতে মুসলমানদের সবচেয়ে বৃহৎ সম্মেলন শুরু হয়েছে। মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকার (মুনা)’র বার্ষিক সম্মেলন ঘিরে আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্য থেকে ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ।

গতকাল ৯ আগস্ট শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ার কনভেনশন সেন্টারে শুরু হয় তিনব্যাপি মুনার ৭ম বার্ষিক এ সম্মেলন। যা চলবে আগামী ১১ আগস্ট রোববার মধ্যরাত পর্যন্ত। মুনার এই আয়োজন ঘিরে পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়া সিটি যেন একটুকরা বাংলাদেশ। নগরির প্রায় সবগুলো হোটেল-মোটেল এখন মুসলিম কমিউনিটি ও বাংলাদেশি-আমেরিকানদের দখলে।
ইসলাম: শান্তি ও মানবতার জন্য ন্যায়বিচার’ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে মুনার এবারের সম্মেলনে ২০ সহস্রাধিক ধর্মপ্রাণ প্রবাসী মুসলমান নিবন্ধণ করেছেন, যাদের বেশিরভাগই অংশ গ্রহণ করেছেন বলে চ্যানেল টিটিকে জানিয়েছে আয়োজকরা। আজ সম্মলনের দ্বিতীয় দিনে ছিল বিভিন্ন পর্বের আয়োজন। যাতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ও আমেরিকান স্কলাররা।

কনভেনশনকে সফল ও সার্থক করতে বিভিন্ন বিভাগ ভিত্তিক একটি শক্তিশালী টিম গঠন করা হয়েছে। উক্ত টিমের চেয়ারম্যান মুনার ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর আরমান চৌধুরী, সিপিএ। এছাড়া, মিডিয়া উইং’সহ আছে একাধিক বিভাগ ভিত্তিক টিম। যাদের নিরলস প্রচেষ্টা অত্যন্ত গোছানো ভাবে অব্যাহত রয়েছে মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ-আমেরিকার তিনদের এই সম্মলনের দ্বিতীয় দিন।
নর্থ-আমেরিকাতে বসবাসকারি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বাংলাদেশিদের পদভাের মুখর ফিলাডেফিয়া পেনসিলভেনিয়ার কনভেনশন সেন্টার। মুনা’র এ কনভেনশনই প্রমাণ করেছে যে- প্রবাসী বাংলাভাষী মুসলমানদের সর্ববৃহৎ সমাবেশ হয়ে থাকে তাদের নেতৃত্বে। বিভিন্ন সিটি ও রাজ্যে বসবাসকারি বাংলাদেশি-আমেরিকানরা সপরিবারে তিনদিন ব্যাপী এই কনভেনশনে অংশগ্রহণ করতে ফিলাডেলফিয়ায় ছুটে আসেন। যাদের কথা বিবেচনা করে মুসলিম উম্মাহ অফ নর্থ আমেরিকা মুনা’র নেতৃত্বদানকারিরা বিভিন্ন পর্বে ঢেলে সাজিয়েছেন আলোচনা সভা, বিশ্লেষণধর্মী বক্তব্য, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও তরুণ প্রজন্মের জন্য পৃথক পৃথক নানা আয়োজন।
প্রায় ৫০টি অঙ্গরাজ্যের আমেরিকা নামক দেশটির ৪৮টি রাজ্য থেকেই ফিলাডেলফিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন বাংলাদেশিরা। এছাড়া, অন্যান্য জাতিগোষ্ঠির মুসলিম কমিউনিটির প্রতিনিধিদেরও সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। মুনার কার্যক্রম অব্যাহতে নারীদের জন্য থাকছে বিশেষ ব্যবস্থা। ৩ থেকে ৫ স্তর বিশিষ্ট স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছেন বেশ দায়িত্বসহকারে। যাতে নেই কোন বিশৃঙ্খল পরিবেশ।

এছাড়া, আমন্ত্রিত অতিথি ও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের দেশ থেকে আগত ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক এবং কোরআনের নন্দিত তাফসিরকারক ও খ্যাতিমান হাদিসবিদদের প্রানোচ্ছল আলোচনা প্রাণভরে উপভোগ করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি মুসলিম-আমেরিকার নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্টে উদীয়মান ইসলামী চিন্তাবিদ, তরুণ বক্তারাও এবারের কনভেনশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। যাদের উদ্দশ্য প্রজন্মের মাঝে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য পৌঁছে দেয়া। বিশেষ করে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে ইসলাম ধর্মকে আঁকড়ে রাখার কৌশল এবং ভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশে মুসলিম হিসেবে নিজেদের স্বকীয়তা বজায়ে প্রজন্মরা আগ্রহী করে গড়ে তোলা। রয়েছে শিশু-কিশোেদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও বিনোদনমূলক ব্যবস্থা। যাতে অংশগ্রহণ করেছে অনেকে।

তবে, মুনার এবারের আলোচনায় গুরুত্ব পায় বাংলাদেশের বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সৃষ্ট শেখ হাসিনা সরকার পতন বিষয়টিও। বক্তারা জোর দাবি তোলেন গণতন্ত্র ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সকল মত ও ধর্ম-বর্ণের সমঅধিকারও নামই হচ্ছে একটি কার্যকর রাষ্ট্র। যা বাংলাদেশের বর্তমান অন্তবর্তী সরকার গুরুত্ব সহকারে অনুধাবন করবেন বলে আশা ইসলামিক বক্তাদের।
এদিকে, বরাবরের মতো এবারো কনভেশনের একটি ফ্লোরজুড়ে ছিল রকমারী সামগ্রীর মেলা। যেখানে পাওয়া যাচ্ছে- নারী পুরুষের পোশাক পরিচ্ছদ, অলঙ্কার, হস্তশিল্প সামগ্রী, গিফট আইটেমস ও খাবারের দোকান।
শেষ দিনে তথা ১১ আগস্ট রোববার থাকছে- আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক পর্ব। অংশগ্রহণকারীরা আগে থেকে উদ্যোক্তাদের সাথে যোগাযোগ করে সাংস্কৃতিক পর্বে অংশ নিয়ে নিজের মেধার বিকাশ ঘটানোর পাশাপাশি তার পরিবেশনার স্বীকৃতি পেতে পারেন বিশাল এই কনভেনশনে।

অনুষ্ঠানের মাঝে ছিল নিয়ম মেনে বিরতী। এছাড়া, নামাজের সময়সূচিতে সব বয়সের মুসলিম উম্মাহরা সারিবদ্ধভাবে সালাত কায়েম করেছেন।

মূলত, মুসলিম উম্মাহ অফ নর্থ আমেরিকা মুনা একটি অলাভজনক দাওয়াহ ভিত্তিক সংগঠন। যা সূচনা হয় ৯৯০ সালে অভিবাসিদের সর্গরাজ্য নিউইয়র্কে। সমাজ সেবামূলক জাতীয় সংগঠন হিসেবে ‘মুনা’ কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল ব্যক্তিগত, নৈতিক ও মানুষের জীবনের সামাজিক মানোন্নয়নের মাধ্যমে মহান আল্লাহতা’য়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি প্রজন্মের মাঝে ইসলামের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরাও মুনার অন্যতম লক্ষ্য। (সূত্র-শিবলী চৌধুরী কায়েস)