
নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ১০ আগস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট | 298 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
অপারেশন ডোর লকঃ শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের সকল সংগঠনে নির্দেশনা যায় অপারেশন ডোর লকের। হাজারো অস্ত্র হাতে তুলে দেয়া হয়। রাতে অপারেশন। রোববার ঢাকায় সকল বাসাবাড়িতে দরজা বন্ধ থাকবে। কেউ বেরুতে পারবে না। সকাল ১০টা নাগাদ অপারেশন ডোর লক ব্যর্থ হয়। লং মার্চ ঢাকা বেগবান হয়। অঘোষিত সিদ্ধান্ত হয় গনভবন ঘেরাও।
রোববার নড়েচড়ে বসে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। ওয়াশিংটনের বার্তা পৌঁছে যায় দিল্লী ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে। শেখ হাসিনা প্রশ্নে সামরিক পর্যায়ে যোগাযোগ ঢাকা দিল্লীর। গেম ওভার রোববার রাতেই।
৪ আগস্ট রাতে তিন বাহিনীর প্রধানদের গণভবনে ডাকেন শেখ হাসিনা। আলোচনার এক পর্যায়ে রাগে তিনি টেবিলে আঘাত করে উচ্চস্বরে তাদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা দেন, আমি ক্ষমতা ছাড়ব না। তিন বাহিনী প্রধান তার আচরণে হতভম্ব হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই তারা গণভবন ত্যাগ করেন। পরের দিন ৫ আগস্ট সকাল থেকেই গণভবনে উত্তেজনা ও চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। সকাল সাড়ে ১০টায় তিন বাহিনীর প্রধানকে পুলিশের আইজিপি’কে গণভবনে ডাকা হয়। শীর্ষ আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি দৃঢ়ভাবে আগের কথারই পুনরাবৃত্তি করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের কঠোর হতে হবে। সব কিছু নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। কাজটা কিভাবে করবেন, তা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করুন।’
পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ঘনিষ্ঠজনেরা শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন, পদত্যাগ করাই ভালো হবে। কিন্তু হাসিনা তাদের কথা শোনেননি। তিনি উল্টো বিক্ষোভ দমনে সব বাহিনীকে আরও কঠোর হতে বলেন। বাহিনীগুলো এতে রাজি হয়নি। হাসিনা অবশ্য নিজের দাবিতে অটল ছিলেন। কিন্তু কেউ তাকে আশা দেয়নি। বরং তাদের পরামর্শ ছিল সোজাসাপটা, যত দ্রুত সম্ভব অন্য কোথাও চলে যান। তারা বলেন, হাতে আছে মাত্র ৪৫ মিনিট। সিদ্ধান্ত নিন। নতুবা ছাত্রদের মিছিল গণভবনে এসে পড়বে। তখন কোন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। হাসিনার নিরাপত্তা কর্মীরাও বিপদের আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন ।
তখন উপস্থিত কর্মকর্তারা শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার সঙ্গে অন্য কক্ষে এ বিষয়ে আলোচনা করেন। কর্মকর্তারা তাকে পরিস্থিতি জানিয়ে শেখ হাসিনাকে বোঝাতে অনুরোধ করেন। এরপর শেখ রেহানা বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেন। কিন্তু হাসিনা তখনও রাজি হননি, তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে অনড় থাকেন। একপর্যায়ে একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বিদেশে থাকা শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।
জয় তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। ছেলের সঙ্গে কথা বলার পর অগত্যা পদত্যাগ করতে রাজি হন শেখ হাসিনা। তিনি অবশ্য পদত্যাগের আগে একটি ভাষণ রেকর্ড করতে চান জাতির উদ্দেশে প্রচারের জন্য। কিন্তু তাকে সেই সুযোগও দেওয়া হয়নি। তখন তিনি হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেন। পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করার আগে হাসিনা পরোক্ষভাবে তিন বাহিনীর প্রধানকে বিশ্বাসঘাতক বলেন। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে তিনি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন, তারপর কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি নেতাকর্মীর প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এক কাপড়ে শেখ হাসিনা ও রেহানা দেশ ত্যাগ করেন। বাংলাদেশ সেনাবহিনী ভারতের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছিল। তারা শেখ হাসিনাকে গ্রহণে সম্মত হলে তারা সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে তাদের ভারতে পৌঁছে দেয়।
Posted ৫:২০ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১০ আগস্ট ২০২৪
nykagoj.com | Monwarul Islam