
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি | রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ | প্রিন্ট | 76 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
“নতুন দিনের আহ্বানে এলো বৈশাখ” এই শ্লোগানকে ধারন করে জাহাঙ্গীরনগর এলামনাই এসোসিয়েশন ইউএসএ এর সুনিপুণ ব্যবস্থাপনায় ১১মে শনিবার কুইন্সের দ্য মেরী লুইস একাডেমীতে বাংলা বর্ষবরণ উদযাপনে অংশ নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাইবৃন্দ। তাঁরা নেচে গেয়ে উৎসব আনন্দে কাটিয়েছেন একটি দিন। এবারের উৎসবে পোশাকের থিম ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝিলে ফোটা শাপলা ফুল। বাংলার সবুজ তথা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিশেষ ডিজাইনের সবুজ পাঞ্জাবি এবং শাপলার কারুকার্যের রঙিন শাড়ি পরে আয়োজকরা অনুষ্ঠানে আসেন। বর্ষবরণ উপলক্ষে স্কুলটিকে সাজানো হয় বাংলার ঐতিহ্যবাহী আলপনা এবং নানা রঙের মুখোশ ও নিশান দিয়ে। স্কুলের প্রবেশদ্বারে বসেছিলো বাংলার শাড়ি-চুড়ি ও মাটির গহনার মেলা, যেন প্রবাসের মাটিতে একখন্ড গ্রামীণ বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের ঐতিহ্যবাহী ইলিশ, ভর্তা-ভাজিসহ বাঙালি খাবার এবং পান-সুপারি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের আলোকে সাজানো এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিউ ইয়র্কে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডেপুটি কনসাল জেনারেল নাজমুল হাসান এবং মার্কস হোম কেয়ারের সত্বাধিকারী ইন্জিনিয়ার মাহফুজুল হক। তাদের ফুল দিয়ে বরন করে নেন উপদেষ্টা একরামুল করিম এবং আশুতোষ সাহা। বিকাল ৫ টায় মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন উৎসবের আবহায়ক শামিম আরা বেগম এবং সদস্য সচীব তামান্না শবনম পাপড়ী। এ সময় সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণে পরিবেশন করা হয় বৈশাখী সংগীত। উপস্থিত সকলকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের নেত্রীবৃন্দ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা এবং মার্কস হোম কেয়ারের সত্বাধিকারী ইন্জিনিয়ার মাহফুজুল হক।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আহবায়ক শামীম আরা বেগম এবং সদস্য সচীব তামান্না শবনম পাপড়ী শুভেচ্ছা বক্তব্যে অনুষ্ঠানের শুরু করেন। এই আয়োজনের একটি বিশেষ পর্ব হলো প্রবাসে বাঙালী কমিউনিটিতে বিশেষ অবদানের জন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা। এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে প্রবাসে বাঙালির গর্ব, সাংবাদিকতায় বিশেষ ভূমিকার জন্য সাপ্তাহিক বাঙালী পত্রিকার সম্পাদক কৌশিক আহমেদকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। কৌশিক আহমেদের নাম ঘোষনা করেন মেঘনা পাল এবং তাঁর সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা আকতার আহমেদ রাশা। সম্মাননা স্মারক তুলে দেন ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা এবং শামীম আরা বেগম। তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন উপদেষ্টা খালেদ মনির জোসেফ এবং সুজিত পাল। ফুলেল শুভেচ্ছা জানান বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাইয়ের সভাপতি। সন্ধ্যার পর শুরু হয় অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকল প্রজন্মের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেন ম্যারীস্টেলা আহমেদ শ্যামলী, শারমিন আক্তার রেক্সোনা ও তানজিল মাহমুদ। ‘প্রজন্ম জাহাঙ্গীরনগর’ শিরোনামে জাহাঙ্গীরনগরের ক্ষুদে শিল্পীদের কন্ঠে শাপলাফুলের গান এবং দলীয় নৃত্য মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। তাদের এই পরিবেশনা শুধুমাত্র বিনোদন নয়, বাঙালি সংস্কৃতির পক্ষে নতুন প্রজন্মের আগমনীবার্তাও। নৃত্য পরিবেশনা করে প্রজন্ম জাহাঙ্গীরনগর নুসরাত ফাতিমা খান এবং নৃত্য পর্ব পরিচালনা করে আরেক প্রজন্ম অন্তরা সাহা। প্রজন্ম জাহাঙ্গীরনগরের বিশেষ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতায় নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশের প্রতি ভালবাসা সকলকে মুগ্ধ করেছে। পর্বটি সমন্বয় করেন আফ্রোদিতি পান্না ও রিজিয়া ফারহানা হক।
অনুষ্ঠানের সর্বশেষ পরিবেশনা ছিলো কানাডার টরোন্টো থেকে আগত বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড শিল্পী শাহানুর রহমান লুমিনের বিশেষ একক কনসার্ট। মৌসুমী, শ্রাবণের মেঘগুলে, চুমকি কিংবা মেলায় যাইরে বাংলার গানগুলোতে লুমিন সুরের মূর্ছনায় ভাসিয়েছেন দ্য মেরী লুইস একাডেমীতে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের। প্রাক্তণীরা হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, নেচে-গেয়ে আনন্দ করেছেন। সব আনন্দ একসময় শেষ হয়ে আসে, ফিরতে হয় ঘরে। রাত ১০ টায় সকলে ঘরমুখী হোন, কিন্তু ফেরার আগে প্রবাসের তৃষিত হৃদয় রাঙিয়ে গেছেন বৈশাখী রঙে। মনোমুগ্ধকর এই সংগীত সন্ধ্যায় যন্ত্র কৌশলে ছিলেন তানভির সাহিন, কি-বোর্ডে রাজিব রাসেল, তবলায় দেবু চৌধুরী, গীটার সাইদ ও আকাশ, ঢোলকে মোবারক হোসেন। সার্বিক সমন্বয় করেছেন মোহাম্মদ জামান মনির, শমিত মন্ডল ও সুব্রত পল। মঞ্চসজ্জা করেছেন সাইয়্যেদ মুহাম্মদ তাইয়্যেব। মঞ্চ পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন শিল্পী আখতার আহমেদ রাশা। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীরনগর এলামনাই এসোসিয়েশন অব আমেরিকার ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয় যা সমগ্র আয়োজনে নতুনত্ব যোগ করে। উপস্থাপনায় ছিলেন দুররে মাকনুন নবনী ও গোলাম মোস্তফা।
Posted ৯:০০ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
nykagoj.com | Stuff Reporter