শুক্রবার ১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তেজস্ক্রিয়তায় সহজেই শনাক্ত জটিল রোগ

বাংলাদেশ ডেস্ক   |   শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২   |   প্রিন্ট   |   64 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

তেজস্ক্রিয়তায় সহজেই শনাক্ত জটিল রোগ

টাঙ্গাইলের সাজিদা আক্তার ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলামের সুখের দাম্পত্য জীবন একযুগের। স্বামীর ছোট ব্যবসার ওপর ভর করে ভালোই চলছিল তাঁদের ছয় সদস্যের সংসার। কিন্তু দুই বছর ধরে সাজিদার মাঝে মাঝে জ্বর দেখা দেয়, যা সহজে সারে না। অনেক সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় রোগ শনাক্ত হয়নি। পরে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেসে যান। সেখানে তেজস্ট্ক্রিয়তা ব্যবহার করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসক জানান, তাঁর রক্তে ক্যান্সার। সুস্থ জীবনে ফিরতে ১২টি কেমোথেরাপি দিতে হবে। এরই মধ্যে এ ইনস্টিটিউটে তাঁর থেরাপি শুরু হয়েছে। সাজিদার মতো সারাদেশ থেকে দৈনিক ৪০০-৫০০ মানুষ এ ধরনের জটিল রোগ নিয়ে এ ইনস্টিটিউটে আসেন। সহজেই তাঁদের জটিল রোগ শনাক্ত করা হয়।
তেজস্ট্ক্রিয়তা ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় ও রোগের চিকিৎসাকে বলা হচ্ছে নিউক্লিয়ার মেডিসিন। এ উপায়ে ক্যান্সার, থাইরয়েডসহ নানা জটিল রোগ স্বল্প সময়ে সহজে সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয়। দেশের ১৭ ইনস্টিটিউটে বর্তমানে এ সেবা চালু আছে। আরও আটটি ইনস্টিটিউট নির্মাণের কাজ চলছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের তত্ত্বাবধানে এ প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হয়।

সংশ্নিষ্টরা জানান, সাধারণত ক্যান্সার কোষগুলো ছড়ায় খুব নীরবে, ধীরগতিতে। অধিকাংশ সময়ই ক্যান্সার ধরা পড়ে এমন পর্যায়ে, যখন আর কিছু করার থাকে না। অথচ নিয়মিতভাবে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে শুরুতেই ক্যান্সার নির্ণয় করা গেলে এর ভয়াবহতা ও মৃত্যু অনেক ক্ষেত্রে ঠেকিয়ে দেওয়া সম্ভব।

আইএনএমএএসে সরকার নির্ধারিত মূল্যে নিউক্লিয়ার ইমেজিং (যেমন- রেনোগ্রাম, কিডনি স্ক্যান, কার্ডিয়াক স্ক্যান, হেপাটোবিলিয়ারি স্ক্যান, ব্রেইন স্ক্যান, লিভার স্ক্যান, বোন স্ক্যান, থাইরয়েড স্ক্যান, থাইরয়েড আপটেক), হরমোন অ্যানালাইসিস, বোন ডেনসিট্রোমেট্রি, আলট্রাসনোগ্রাফি, কালার ডপলার আলট্রাসাউন্ড ইত্যাদি রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া থাইরয়েডের গ্রন্থির ক্যান্সার, হাইপারথাইরয়েডিজম বা থাইরোটক্সিকোসিস, হাইপোথাইরয়ডিজম, আইডিডি, চোখের ক্যান্সার, নখের ছত্রাক, বাত ও বাতজাতীয় জয়েন্ট পেইন ইত্যাদি জটিল রোগের চিকিৎসা সরকার নির্ধারিত মূল্যে করা হয়ে থাকে। তবে ঢাকার বাইরের আইএনএমএএস সেন্টারগুলোতে পজিট্রন এমিশন টমোগ্রাফি (পেট) সিটি স্ক্যানসহ অত্যাধুনিক মেশিন, পরীক্ষার উপকরণ, দক্ষ জনবল না থাকায় রাজধানীতে রোগীর চাপ অনেক বেড়ে যায়। অনেকে বেশি টাকা খরচ করে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সেবা নেন।

সূত্র জানায়, দেশের পাঁচটি নিউক্লিয়ার মেডিসিন ইনস্টিটিউটকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে ঢাকার বাইরে কম খরচে নিউক্লিয়ার মেডিসিনের মাধ্যমে রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার সুযোগ পাবে সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি ইনস্টিটিউটগুলোর রোগ নির্ণয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং রোগীর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নত হবে। মোট ২১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মিটফোর্ড, কুমিল্লা, ফরিদপুর, বরিশাল ও বগুড়ার আইএনএমএএসের আধুনিকায়ন করা হবে। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ২০২৫ সালের মধ্যে এ কাজ শেষ করবে। ইতোমধ্যে প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে আগামী অর্থবছরে শুরু হবে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ।

ফরিদপুর আইএনএমএএসের পরিচালক ডা. শংকর কুমার দে জানান, ৪০ বছর আগে ফরিদপুর আইএনএমএএসে স্থাপিত স্ক্যানিং মেশিন ছয় মাস ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। মেশিনটির আর সার্ভিসিং করা যাবে না বলে কোম্পানি জানিয়েছে। ফরিদপুরে ক্যান্সার নির্ণয়ের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সিটিস্ক্যান মেশিনও নেই। তাই ক্যান্সার, থাইরয়েডের মতো জটিল রোগে আক্রান্তদের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যেতে হয়। ঢাকায় রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় সিরিয়াল পেতে দেরি হয়; খরচও অনেক বেড়ে যায়।

বিএসএমএমইউর নিউক্লিয়ার মেডিসিন সায়েন্সের পিইটি-সিটি বিভাগের পরিচালক ও প্রধান ডা. শামীম মমতাজ ফেরদৌসী বেগম বলেন, পিইটি-সিটি অ্যাডভান্স টেকনোলজির কারণে ক্যান্সার নির্ণয় সহজ হচ্ছে। ক্যান্সার কোন স্তরে আছে, কোথাও ছড়িয়ে গেছে কিনা, চিকিৎসা অর্থাৎ কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপিতে ঠিকমতো রেসপন্স করছে কিনা, নতুন করে আবার রোগ ফিরে আসছে কিনা- এর মাধ্যমে তা জানা যায়। সেসঙ্গে ক্যান্সারের সঠিক ওষুধ দেওয়া হচ্ছে কিনা তা নির্ণয় করা যায়। তিনি জানান, বেসরকারি ক্লিনিকের চেয়ে আইএনএমএএসে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ইনস্টিটিউটের পরমাণু সেবা ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়নের পাশাপাশি আধুনিক মানের পিইটি-সিটি, বিএমডি, থাইরয়েড গামা ক্যামেরা, থাইরয়েড আপটেক এবং কালার ডপলার মেশিন স্থাপন করা হবে। গ্রামের দরিদ্র মানুষ কম খরচে জেলা শহরে নিউক্লিয়ার মেডিসিনের মাধ্যমে উন্নত সেবা পাবে।

Facebook Comments Box

Posted ১২:৪৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com