মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুই মাসের সম্মানী মাত্র ১৫ হাজার!

খেলা ডেস্ক   |   বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   33 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

দুই মাসের সম্মানী মাত্র ১৫ হাজার!

বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাড়ে ছয় বছরে এক শিক্ষার্থীর পেছনে সরকারের ব্যয় প্রায় ২২ লাখ টাকা। পড়াশোনার সঙ্গে হকিকে পেশা হিসেবে নেওয়া একজন খেলোয়াড় উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে বিকেএসপি থেকে বের হওয়ার পর অথৈই সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকেন। পড়ালেখা শেষ করে বের হওয়ার পর খেলোয়াড়রা তাকিয়ে থাকেন দেশের হকির নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তাদের দিকে। কখন যে মাঠে গড়াবে প্রিমিয়ার বিভাগ হকি।

ছয় মাস, এক বছর, দুই বছর এমনকি আড়াই বছর অপেক্ষার পরও যখন মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের নীল টার্ফে থাকে নীরবতা, তখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঝুঁকে পড়া অনেক খেলোয়াড়ই জীবিকার তাগিদে বেছে নেন অন্য পেশা। নামটা না ছাপানোর অনুরোধ করে এক হকি খেলোয়াড় জানান, একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার আশায় তিনি চায়ের দোকান দিয়েছেন।

২৭ মাসের বেকারত্বের জীবন কাটিয়ে যারা লিগে বিভিন্ন ক্লাবে নাম লিখিয়ে স্টিক হাতে নিয়েছেন, তারাও ভালো নেই। লিগে জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা অনেকেই ৩ লাখ থেকে শুরু করে ১০ লাখ টাকা সম্মানী পান। কিন্তু আড়ালে থাকা এমন অনেক খেলোয়াড় আছেন, যাদের দুই মাসে সম্মানী মাত্র ১৫ হাজার টাকা! আর্থিক দৈন্যদশা এবং দেশের হকির করুণ চিত্রটা বলতে গিয়ে বারবার চুপসে যান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়।

‘এই লিগে ১০-১৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক নিয়ে খেলছি আমরা অনেকেই। দুই বছর অপেক্ষা করে দুই মাস খেলে এই টাকা পাই আমরা। যে টাকা দিয়ে সর্বোচ্চ দুই মাস চলবে। তার পর বাকি ১০ মাস পরিবার থেকে টাকা নিয়ে চলতে হয়।’ বুধবার কাছে এভাবেই নিজেদের কষ্টগুলো তুলে ধরেন এক হকি খেলোয়াড়। অথচ একজন ক্রিকেটার ঘরোয়া লিগ খেলে মৌসুমে আয় করেন ৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। একজন ফুটবলারের আয় তো আরও বেশি। সর্বনিম্ন ৫ থেকে ৯০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করেন ফুটবলার। সেখানে কেন হকিতে আগ্রহ দেখাবে নতুন প্রজন্ম।

চলতি প্রিমিয়ার হকিতে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পারিশ্রমিকে আশরাফুল রানার সঙ্গে চুক্তি করেছে আবাহনী লিমিটেড। এ ছাড়া জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন তারকাকে গড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা করে নিয়েছে তারা। আবাহনীর মতো মেরিনার, মোহামেডান, ঊষা ক্রীড়া চক্র এবং অ্যাজাক্স স্পোর্টিং ক্লাবও ভালো বাজেটের দল গড়েছে। কিন্তু দিলকুশা, ভিক্টোরিয়া, আজাদ, বাংলাদেশ স্পোর্টিংয়ের মতো ক্লাবগুলো লিগের জন্য বাজেট ১০ থেকে ১৫ লাখ।

এই স্বল্প বাজেট থেকেই খেলোয়াড়দের বেতন, থাকা-খাওয়া এবং আনুষঙ্গিক খরচ ব্যয় করে ক্লাবগুলো। একসঙ্গে সব চালাতে গিয়ে কুলিয়ে উঠতে না পারা ক্লাবগুলো খেলোয়াড়দের টাকা নিয়ে করে নয়ছয়। সবচেয়ে বড় বিষয়, ১৫ হাজার টাকা দিয়ে হকির ভালো একটা ইকুইপমেন্ট পর্যন্ত কেনা যায় না। ভালো মানের এক জোড়া জুতার দাম সর্বনিম্ন ১২ হাজার টাকা। একটা সিঙ্গারের দাম ৩ হাজার টাকা। একটি স্টিকের দাম সর্বনিম্ন ১৫-২০ হাজার টাকা। অনেকে এসব কিনতে না পেরে পুরোনো এবং ভাঙা জিনিস নিয়ে জোড়াতালি দিয়েই মাঠে নামছেন।

‘হকির একটা জিনিস কিনতে যে টাকা লাগে আর লিগ খেলে একজন প্লেয়ার যে টাকা পাচ্ছে, ওই ইকুইপমেন্ট ক্রয়ের জন্য তাকে বাসা থেকে টাকা আনতে হয়। আমাদের জীবন মান এমনই। কোনো পরিবর্তন হবে না’– ক্ষোভের সঙ্গে বলেন জাতীয় দলের এক তারকা খেলোয়াড়। যারা ভালো অঙ্কের বেতনে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন, তারাও পুরো পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। ‘ধরুন, বড় কোনো ক্লাবের সঙ্গে আপনার চুক্তিটা হয়েছে ৫ লাখের। অগ্রিম বাবদ আপনাকে ১ লাখ টাকা হাতে দেবে। আর বাকি টাকা দেবে তিন কিস্তিতে। শেষ কিস্তি দেবে খেলার পরে। এখন অনেক প্লেয়ার আছেন রাজশাহী, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে থাকেন, তারা কিন্তু এই টাকাগুলো আর পান না। এই যেমন ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের টাকা আমরা এখনও পাইনি।’

হকি লিগে ৯০ ভাগেরই বেশি খেলোয়াড় বিকেএসপির। জেলা পর্যায়ে খেলা না হওয়ায় হাতেগোনা কিছু সংখ্যক ছাড়া ওইভাবে খেলোয়াড় ওঠে আসছে না। তাই বাংলাদেশের হকিটা নির্ভর করছে বিকেএসপির ওপর। কিন্তু সেখান থেকে সাড়ে ৪শর মতো যে হকি খেলোয়াড় ওঠে আসছেন, তাদের মধ্যে ৮০-৯০ জন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনীতে চাকরি করেন। অন্যরা লিগের অপেক্ষায় থাকেন। আর লিগ না হলে অভিশপ্ত জীবন নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়।

ঘরোয়া হকির মতো দুর্দশা জাতীয় দলেরও। খেলোয়াড়দের সঙ্গে কোনো চুক্তি নেই। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলার আগে দেশে যে ক্যাম্প হয়, সেখানে হাত খরচ বাবদ প্রতিদিন একজন খেলোয়াড় পান মাত্র ৫০০ টাকা। আর বিদেশে গিয়ে টুর্নামেন্ট খেললে প্রতিদিন মাত্র ১০ ডলার করে দেওয়া হয়। ওয়ার্ল্ড হকি র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ২৯তম। সর্বশেষ গত বছর অনূর্ধ্ব-২১ এএইচএফ কাপ হকির শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। দেশকে ট্রফি জিতিয়ে দেশে ফেরার পর খেলোয়াড়দের কাচ্চি খাইয়ে বিদায় জানান ফেডারেশন কর্তারা। তাদের দেওয়া হয়নি কোনো সম্মানী।

‘আমি অনূর্ধ্ব-২১-এ খেলছি। হকির গেটের কেউই আমাদের চেনে না। আমি গেট দিয়ে এলে দারোয়ান ধরে এই ভাই কই জান। আমি বলেছি, ফেডারেশনের প্লেয়ার। আমরা অনূর্ধ্ব-২১ হকিতে দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছি। ওমানে যাওয়ার পর আমাদের ১১৬ ডলার দিয়েছে। এই ডলার দিয়ে কী হয়। পরিবারের জন্য কিছু চকলেট কিনেছি। হকি খেলাটা অনেকটা খ্যাপের মতো। লিগ থাকবে, খেললাম, তার পর চলে গেলাম’– ক্ষোভের সুরে বলেন তারকা এক খেলোয়াড়।

Facebook Comments Box

Posted ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com