শনিবার ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোলাপীয় হস্তক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে আরও সংকট বাড়লো

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   186 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

গোলাপীয় হস্তক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে আরও সংকট বাড়লো

 

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রশয়েই আবদুস সোবহান গোলাপ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কোন্দল উস্কে দিয়ে গেলেন। নেতা কর্মিরা ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের পরিবর্তে খন্ডবিখন্ড আওয়ামী লীগের উপহার পেল । সংগঠনের চেইন অব কমান্ড ভেংগে পড়েছে। শেখ হাসিনার হাতে গঠিত যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটি নিজ ঘরেই উপেক্ষিত। মূল দলকে মানছে না সহযোগী বা অঙ্গ সংগঠনগুলো। কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে সখ্যতার সুযোগে শাখা প্রশাখায় প্রসারিত আওয়ামী লীগ। সংগঠনের এমন অবস্থা শেখ হাসিনার নখ দর্পনে। কিন্তু তার চোখের সামনেই সবকিছু ঘটছে।

জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিউইয়র্কে ছিলেন। তার নিউইয়র্কে আগমনের আগ থেকেই মহানগর আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনা আয়োজনের ঘোষণা দেয়। মহানগর কমিটির নেতারা প্রচার করতে থাকেন নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ইমদাদুর রহমান চৌধুরী মায়ের মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নাগরিক সংবর্ধনা আয়োজনের অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রীর ইশারা পাবার পর ইমদাদ নিউইয়র্কে এসে প্রস্তুতি শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি ও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ ইমদাদের এই উদ্যোগে সার্বিক সহযোগিতা করেন। উল্লেখ্য জ্বনাব গোলাপ আগে নিউইয়র্কে বসবাস করতেন। গভীর সম্পর্ক ছিল ইমদাদের সাথে। গোলাপ তার প্রতিদান দিতে এগিয়ে আসেন। তা’ছাড়া সভাপতি ড, সিদ্দিকুর রহমানের সাথে গোলাপের সম্পর্ক অনেক আগ থেকেই সাপেনেউলে। গোলাপ নগর কমিটিকে দিয়ে মূল কমিটিকে সাইজ করতে এগিয়ে আসেন। অবশ্য তিনি নিউইয়র্কে এসে বারবারই বলছিলেন, সংবর্ধনা অনুষ্ঠান কিভাবে হবে তা নেত্রীই ঠিক করবেন। কিন্তু বার্তাটি আগ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারন সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ জানতেন। এক কর্মি সভায় জ্বনাব সিদ্দিক কান্নায় ভেংগে পড়েন। তিনি দুঃখ করে বলেন, আমার কি অপরাধ।

নাগরিক সংবর্ধনা প্রতিবারই প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে এলে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সাল থেকেই দলীয় কোন্দলের কারনে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হচ্ছে না। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সংবর্ধনা চলে যায় আমলাদের হাতে। একবারতো মঞ্চে ছিলেন শুধুই শেখ হাসিনা। সব নেতাকে দর্শক সাড়িতে বসিয়ে তিনি বক্তৃতা করেন। বিশ্বব্যাংকের সম্মেলনে ওয়াশিংটনে এসে আওয়ামী লীগের সভায় প্রেসিডেন্ট সিদ্দিকুর রহমানকে মঞ্চে বসিয়ে রাখা হয়। সাধারন সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদকে মঞ্চে ডাকাও হয়নি। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান।

২০২৩ সালের সংবর্ধনা ছিল আরও নাটকীয়।সংবর্ধনার জন্য ম্যারিয়ট মারকুইস হোটেলটি বুকিংও দিয়েছিলেন সিদ্দিকুর রহমান। কিন্তু আয়োজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন মহানগর সাধারন সম্পাদক ইমদাদুর রহমান চৌধুরী। উল্লেখ্য গত ১২টি বছর ইমদাদ প্রেসিডেন্ট সিদ্দিকুর রহমানের অনুসারি ছিলেন। জ্বনাব সিদ্দিকও তাকে নি:শর্তভাবে সর্মথন দিতেন। কিন্তু রাজনীতির বাঁকা পথে তারা প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠেন গেল এই সেপ্টেম্বরে। প্রতিদিন জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন ও প্রিমিয়াম রেষ্টুরেন্টের সামনে ইমদাদ সর্মথকদের সমাবেশ চলতে থাকে। সিনিয়র নেতাদের মধ্যে ডা, মাসুদুর রহমান তাদের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতে থাকেন। আর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নবান্ন রেষ্টুরেন্টের ভেতরে সর্মথকদের নিয়ে সবকিছু অবলোকন করছিলেন। সিদ্দিকের দীর্ঘদিনের সমালোচক ড. প্রদীপ রঞ্জন কর এবার ছিলেন পর্দার পেছনে। আব্দুর রহিম বাদশারা রাজনীতির এই নতুন খেলায় দাবার গুটি হতে চাননি। ইমদাদ নবাগত আওয়ামী লীগারদের নিয়ে পোষ্টারিং ও সভা সমাবেশ করতে থাকেন। ২২ সেপ্টেম্বরের সংবর্ধনায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও ফ্লোরিডার বাসিন্দা ফজলুর রহমান। আর সভাপতি সিদ্দিক ও সাধারন সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ নিধিরাম সর্দারের মতে বসে বসে সব কিছু হজম করেন। নিউইয়র্কে ‘ভাগ্নের অভিভাবক’ হিসেবে খ্যাত নিজাম চৌধুরীর আসনটি হয় দর্শক সারিতে। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইমদাদুর রহমান চৌধুরী। উপদেষ্টা ডাঃ মাসুদুর রহমানও আসনটি পাননি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিরা প্রকাশ্যে বলছেন, আব্দুস সোবহান গোলাপের পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী আরও সংকটের মধ্যে পতিত হলো। ভেংগে পড়লো দলীয় শৃংখলা।

প্রধানমন্ত্রী এখন বাংলাদেশে। সেপ্টেম্বরের কোলাহল আর জ্যাকসন হাইটসে নেই।  নবান্ন রেষ্টুরেন্টের সামনে নবাগত কিংবা পুরাতন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মিদের ভীর নেই। সেপ্টেম্বরি আওয়ামীলীগারদের দেখা নেই জ্যাকসন হাইটসে। কিন্তু আলোচিত নাগরিক সংবর্ধনা নিয়ে চায়ের টেবিলে টেবিলে মাঝেমধ্যেই ঝর উঠছে। অনেকে বলছেন, ফজলুর রহমান ও ইমদাদই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসছেন। ভিন্ন মতালম্বিরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি ও গোলাপের ভবিষ্যতের ওপরই ইমদাদের ভবিষ্যৎ। আওয়ামী রাজনীতির সর্মথকরা সোশাল মিডিয়ায় নানা প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করছেন। অনেকেই প্রকাশ্যে বলছেন, সিদ্দিকুর রহমানকে পছন্দ না হলে সরিয়ে দিতে সমস্যা কোথায়। তাকে প্রেসিডেন্ট পদে রেখে বারবার অপমান ঠিক হচ্ছে না।

Facebook Comments Box

Posted ২:৫৩ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৩

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com