বর্তমানে কাচারি ঘর প্রায় বিলুপ্ত। এই প্রজন্ম বা পরের প্রজন্ম জানবেই না `কাচারি ঘর’ বলে কোন ঘরের কথা ।আমাদের প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলাদেশে তিনটি কাচারি ঘর ছিল ।কুষ্টিয়ার শিলাইদহ,সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এবং নওগাঁর পতিসর। সেই যুগে এইসব কাচারি ঘর ব্যবহার করা হতো মূলত খাজনা আদায়ের কাজে। আবার অনেক সময় বাইরের কোন আত্মীয়-স্বজনদের থাকার আয়োজন করা হতো । যেখানে মহিলাদের প্রবেশ একেবারেই ছিল না ।এখন আর সেই জমিদার প্রথাও নেই ,নেই কোন প্রজা।
জীবন মানেই সংগ্রাম। লড়াই করে যাওয়া।এরই মাঝে কলম ধরা ।হঠাৎ কাচারি ঘর শব্দটি কানে এলো । ১১নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ ভাইয়ের কাচারি ঘর। অনেকদিন পর শব্দটি শুনে না লিখে পারলাম না ।হারিয়ে যাওয়া কোন জিনিস ফিরে পেলে যে আনন্দ পাওয়া যায় ,ঠিক তেমনি প্রায় বিলুপ্ত কাচারি ঘরের নাম শুনে পুলকিত হয়েছিলাম । শুধু পুলকিত হইনি। দেখার ইচ্ছে হচ্ছিল । অবশেষে বহু প্রচলিত প্রবাদ বাক্যটির মতো বলতে হয় -—
‘এক ঢিলে দুই পাখি মারলাম অর্থাৎ কলাও বেঁচলাম এবং রথও দেখে আসলাম ।’ কি অবাক হচ্ছেন ? হ্যাঁ,গত ২৬,২৭ অগাস্ট দুই দিনব্যাপী ওজনপার্কে পথমেলার বিশাল আয়োজন ছিল । এর প্রধান স্পন্সর ছিলেন ড.আবু জাফর মাহমুদ ।আর এই ওজনপার্কেই কাচারি ঘরটির অবস্থান। তাইতো মেলা দেখতে এসে কাচারি ঘরটিরও পরিদর্শন করেছি । বিশাল তিন’শ মানুষের আতিথেয়তার সমতুল্য এই কাচারি ঘর।কাচারি ঘরে ঢুকতেই স্বাগতম জানানো হয়েছিল আন্তরিকতার সাথে ।পুরানো দিনের কাচারি ঘরের মতো বসার ব্যবস্থাও আছে ।তবে বেঞ্চের পরিবর্তে সোফা।ফল দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় ।এরই মধ্যে জাফর ভাই আসেন এবং আড্ডা হয় ।পুরোনো দিনে যেমন অন্দর মহল থেকে খাবার পাঠিয়ে দেয়া হতো ঠিক তেমনি করে এই কাচারি ঘরেরই এক কোণে রান্না ঘর এবং সেখান থেকেই খাবার দেয়া হচ্ছিল ।হঠাৎ ছেদ পড়লো একদল লোকের আগমনে।তাদের দেখে মনে হচ্ছিল এ যেন সেই গ্রামের কোন কাচারি ঘর। যেখানে কোন সমাধান করতে চাই ।একপ্রকার সেই রকমই,ভোটের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছিলেন।আমেরিকার ওজনপার্কে কাচারি ঘরে বেসমেন্ট আছে ,সেটাও পরিদর্শন করেছি এবং জাফর ভাইয়ের পরিকল্পনার কথাও জানতে পেরেছি । তিনি প্রবীনদের জন্য চা পান করা এবং লুডু,কেরাম খেলার ব্যবস্থা করবেন যাতে ওনারা কখনো একাকিত্ব অনুভব না করেন ।পরিকল্পনার কথা শুনে ভালো লাগলো ।আরও ভালো লাগলো মেলার শেষ দিনে সিডি প্যাপের সি ই ও ড. আবু জাফর মাহমুদ ভাই সবাইকে নিজ হাতে সিংগারা,মুড়ি-চানাচুর,চা দিচ্ছিলেন।আমিও সিংগারার লোভ সামলাতে না পেরে খেয়েছিলাম।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কাচারি ঘরে বসে রচনা করেছিলেন কালজয়ী সোনারতরী কাব্যের আকাশের চাঁদ ,প্রত্যাখান আরও অনেক ।জাফর মাহমুদ ভাই তাঁর কাচারি ঘরে প্রতিষ্ঠা করেছেন মা সম্মাননা প্রদান করে ।তাইতো গত বছর ঘটে গেছে মা দিবসে বিশাল আয়োজন ।এখানে মহিলাদের প্রবেশাধিকার আছে। তাইতো মা-বোনদের বলছি আসুন কাচারি ঘরে ।কিছুক্ষণের জন্য হলেও শান্তি উপভোগ করুন।
সবশেষে আমরা আশা করবো এই বীর যোদ্ধা আমাদের আরও কিছু উপহার দিবেন,যা নতুন করে জানার সুযোগ পাবো। তাইতো রবীন্দ্রনাথের (আশা)কবিতার মতো
`ধন নয়,মান নয় একটুকু বাসা
করেছিনু আশা ।’