
সারাদেশ ডেস্ক | রবিবার, ১৪ মে ২০২৩ | প্রিন্ট | 242 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
শ্বাসরুদ্ধকর সাত ঘণ্টা সময় পার করলেন দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের ১১ হাজার বাসিন্দা। প্রশাসনের সচেতনতামূলক নানা উদ্যোগ এবং স্থানীয় লোকজন সচেতন থাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’য় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন বলে জানান সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা।
ঘূর্ণিঝড় মোকায় সেন্টমার্টিনে নিহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে অন্তত ২০ জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের দুই নাম্বার ওয়ার্ডের সদস্য মো. জোবাইর। ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপের ৫০ শতাংশ ঘরবাড়ি, গাছপালা এবং আবাসিক হোটেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান এ জনপ্রতিনিধি।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিসংখ্যান এখনো বলা যাচ্ছে না। সরেজমিন পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির ওয়ার্ডভিত্তিক তালিকা দেওয়ার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের বলা হয়েছে।
সেন্টমার্টিনের তেলপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বলেন, আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে বাতাস শুরু হয়। বেলা ১২টা নাগাদ তা শক্তিশালী রূপ নেয়। বিকেল পাঁচটার পর থেকে বাতাস কিছুটা কমতে শুরু করে। বাতাসের তাণ্ডবে দ্বীপে বেশ কিছু ঘরবাড়ি, আবাসিক হোটেল ও গাছপালা ভেঙে গেছে।
আবদুল আজিজ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রচারণা দেখে ভয়ে শনিবার রাত থেকে খাবার-দাবার ছেড়ে দিয়েছিলাম। যেভাবে ভয় পেয়েছিলাম শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু হয়নি।
সেন্টমার্টিন ঘুরে দেখা যায়, দ্বীপের গলাচিপা এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণা প্রতিষ্ঠান মেরিন পার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উড়ে গেছে স্থাপনার ছাউনি। ভেঙে গেছে সোলার প্যানেলগুলো।
একইভাবে হলবনিয়া এলাকায় মৃত কবির আহমেদের ৬ সদস্যের একমাত্র বসতি সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। এ সময় পরিবারের সব সদস্য আশ্রয় কেন্দ্রে থাকায় কেউ হতাহত হয়নি। কোনারপাড়া এলাকায় ভেঙে গেছে উদয় কটেজ ও সর্ট কটেজ নামের একতলা বিশিষ্ট দুইটি আবাসিক হোটেল।
উদয় কটেজের মালিক কামাল উদ্দিন বলেন, রোববার দুপুর ১টার দিকে আমার কটেজটি বাতাসে সম্পূর্ণ ভেঙে যায়। এ সময় আমি কটেজের কর্মীদের নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করায় কেউ হতাহত হয়নি।
বেশকিছু গাছ ও ঘর ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও ঘূর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের প্রধান বিভীষণ কান্তি দাশ। তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখন বলা যাচ্ছে না। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা দ্রুত দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অনিয়ন্ত্রিত পর্যটক, ক্রমবর্ধমান দূষণ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডে এমনিতেই ঝুঁকির মুখে সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। তার ওপর ঘূর্ণিঝড় মোকার আঘাতে এবার দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটি ‘তছনছ’ হতে পারে- এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন সংশ্লিষ্ট বোদ্ধারা।
কক্সবাজার আবহাওয়া দপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, রোববার দুপুর ২টা ২০ মিনিট থেকে সেন্টমার্টিনে ১২১ ও টেকনাফে ১১৫ কিলোমিটার বেগে অতিক্রম করছে ঘূর্ণিঝড় মোকা।
বঙ্গোপসাগরের মধ্যে ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনের লোকসংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। এরমধ্যে গত শুক্রবার দুপুরের মধ্যেই প্রায় আড়াই হাজার মানুষ দ্বীপ ছেড়ে টেকনাফে নিরাপদ আশ্রয়য়ের জন্য চলে যান। বাকিদের মধ্যে সাড়ে ৪ হাজারের মতো মানুষ দুটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রসহ দ্বীপের ৩৭টি হোটেল রিসোর্ট-কটেজে ঠাঁই নেন বলে জানা যায়।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের সৃষ্ট কর্মকাণ্ডে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যেভাবে পরিবেশগত বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে, তা অব্যাহত থাকলে এবং অবিলম্বে পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া না হলে অদূর ভবিষ্যতে দ্বীপটি সাগরে তলিয়ে যেতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, অপরিকল্পিতভাবে দ্বীপে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা, প্লাস্টিক ও অন্যান্য দূষণ, ক্ষতিকর পদ্ধতিতে মাছ ধরা ও বড় বড় জাহাজ চলাচলসহ মনুষ্যসৃষ্ট নানা কর্মকাণ্ডে সেন্টমার্টিন দ্বীপটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে।
Posted ১২:৫০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৪ মে ২০২৩
nykagoj.com | Stuff Reporter