সারাদেশ ডেস্ক | বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩ | প্রিন্ট | 146 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
পাহাড়ে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সুপেয় পানি থেকে নিত্য ব্যবহার্য পানিও মিলছে না। গ্রীষ্মে তাপদাহে এরই মধ্যে শুকিয়ে গেছে পাহাড়ি ছড়া, ঝরনা, নালা। ফলে পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের কষ্ট বহু গুণ বেড়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার দুর্গম এলাকায় অবস্থিত চেলাছড়া উপরপাড়াটি। কাউখালী-ঘাগড়া সড়ক থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে কাঁচা রাস্তা দিয়ে গেলেই দেখা মিলবে অবহেলিত গ্রামটির। এ গ্রামে ৪২ পরিবারের বাস। তাদের পেশা কৃষিকাজ। নেই বিদ্যুৎও। শিশুদের জন্য লেখাপড়ার জন্য নেই বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে যেতে হলে দুই কিলোমিটার পাহাড়ি রাস্তা হেঁটে পাড়ি দিতে হয়।
তবে শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করতে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পরিচালিত ‘পাড়া কেন্দ্র’। পাহাড়ের (ফুরমোন) পাদদেশে অবস্থিত এ গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে দুটি ছড়া। কিন্তু বর্তমানে গ্রামের ছড়াগুলো শুকিয়ে মরা ছড়ায় পরিণত হয়েছে। গ্রীষ্মে গ্রামের লোকজনের একমাত্র ভরসা কুয়ার পানি। কিন্তু পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কুয়ার পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। এ গ্রামের একটি নলকূপ ও দুটি রিংওয়েল রয়েছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় তাতেও পানি উঠছে না।
শুধু কাউখালী উপজেলা নয়; রাঙামাটির বরকল, লংগদু, বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচর, বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম এলাকায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট।
চেলাছড়া উপরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রেখিন চাকমা জানান, ৮ থেকে ১০ ফুট মাটি খুঁড়লেও পানির দেখা পাননি। এতে কষ্টে রয়েছেন তাঁরা।
সাধনা দেবী চাকমা, সূর্য তারা চাকমাসহ ওই গ্রামের অনেক নারী জানান, এক কলস পানির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। প্রায়ই পানির জন্য ঝগড়া লাগছে। ছড়াগুলো শুকিয়ে পানির স্তর কমে যাওয়ায় কুয়া থেকে পানি উঠছে না। গোসল করা দূরের কথা, ভাত খেয়ে কোনো রকমে হাত ধুতে হচ্ছে।
পাড়ার কার্বারি (গ্রামপ্রধান) পূর্ণ বিকাশ চাকমা জানান, এ গ্রামে পানির সংকট তুলনামূলক বেশি। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। এক সময় জেলা পরিষদের সহায়তায় জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গ্র্যাভিটি ফ্লো সিস্টেমের (জিএসএফ) মাধ্যমে পানি পাওয়া যেত। ২০১৭ সালের ভয়াবহ পাহাড় ধসের ফলে তাও নষ্ট হয়ে গেছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন গ্লোবাল ভিলেজের সাধারণ সম্পাদক হেফাজত বারী সবুজ বলেন, পাহাড়ে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন ও বন উজাড়ের কারণে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। যার কারণে পানির উৎসও কমে গেছে। এ ছাড়া পাহাড় থেকে পাথর তোলা ও পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলো ধ্বংস করায় দুর্গম এলাকাগুলোতে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে।
বিলাইছড়ির সদর ইউনিয়নের দীঘলছড়ি মোনপাড়ায় সুউচ্চ পাহাড়ে ব্যবহার্য ও খাবার পানির তীব্র সংকটে রয়েছে ৪৫টি পরিবার। পানির জন্য হাকাকার শুরু হয়েছে। স্থানীয়দের মতে, যেখানে-সেখানে সেগুনবাগান সৃজন, ছড়া বা ঝিরি থেকে পাথর উত্তোলন, অবাধে বয়স্ক ও পরিবেশবান্ধব গাছ কাটা, জুমচাষের সময় নিয়ম না মানার কারণে প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে।
এলাকার কার্বারি কান্দারা চাকমা ও দীঘলছড়ি মোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কালিদাস চাকমা জানান, এ পাড়ায় একটিমাত্র কুয়া রয়েছে। তাও পাহাড় থেকে অনেক নিচে, সেখানে খুব ভোরে লাইনে দাঁড়িয়ে পানি সংগ্রহ করতে হয়। কোনো কোনো সময় পাওয়াই যায় না।
বিলাইছড়ি উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী রিপ্রেশ তালুকদার জানান, পানির সংকট দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।
রাঙামাটি জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পরাগ বড়ুয়া বলেন, সংকট নিরসনে বিভিন্ন এলাকায় পানির উৎস প্রকল্পের কাজ চলছে।
Posted ২:১৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩
nykagoj.com | Stuff Reporter